ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

করোনা: কিছু দেশ মাস্ক ব্যবহার করছে, কিছু দেশ করছে না

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২০, ১৭:৩৬  
আপডেট :
 ২৭ মার্চ ২০২০, ১৭:৪৭

করোনা: কিছু দেশ মাস্ক ব্যবহার করছে, কিছু দেশ করছে না

আপনি যদি হংকং, সোল কিংবা টোকিওর রাস্তায় মুখে মাস্ক না পরে বাইরে বের হন, তাহলে লোকজন আপনার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই এটা হয়ে আসছে - এমনকি মাস্ক না পরা একজন ব্যক্তিকে অনেকেই সামাজিকভাবে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

তবে এমন পরিস্থিতি সবখানে হচ্ছে না। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিডনি কিংবা সিঙ্গাপুরে আপনি চাইলেই মাস্ক না পরে খোলামুখে কোন সংকোচ ছাড়া ঘুরে বেড়াতে পারেন। এখন যখন করোনাভাইরাস ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে, তখন মাস্ক নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কি বদলাচ্ছে?

ব্যাপারটা যে সরকারি আদেশ কিংবা উপদেশ থেকে এসেছে তা নয়, এটা সম্পূর্ণ সংস্কৃতির ব্যাপার।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন থেকে শুরু হয় তখন থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই বিষয়ে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে শুধু মাত্র দুই ধরণের মানুষের জন্য মাস্ক পরা আবশ্যক। এক, যারা অসুস্থ এবং যাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিয়েছে। দুই, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের দেখাশোনা করছেন। এর বাইরে কারো জন্য মাস্ক পরার খুব বেশী প্রয়োজনীয় নয়।

মাস্ক সুরক্ষা দেয় এমন একটা ধারণা মানুষের মধ্যে থাকলেও ব্যাপারটা ততটা সরল নয় বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রথমত, কোভিড-১৯ রোগের ভাইরাসটি ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। দ্বিতীয়ত, এটা বাতাসে ভাসে না। মাস্ক সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটা মিথ্যা বিশ্বাসও তৈরি করে। তবুও এশিয়ার একটা বড় অংশ মাস্ককে এক রকম শরীরের অংশ করে নিয়েছে। মনে করা হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার করাটাই একটা নিয়ম।

চীনের মূল ভূখন্ডে, হংকং, জাপান, থাইল্যান্ড এবং তাইওয়ানে একটা ধারণা আছে যেকেউ এই ভাইরাস বহন করতে পারে। এমনকি যিনি সুস্থ, তিনিও। তাই মাস্ক পরাটা সবার দায়িত্ব - এতে করে আপনি ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে একাত্মতা পোষণ করছেন।

কোনো কোনো দেশের সরকার তার মানুষকে মাস্ক পরতে বলছে। এমনকি চীনের কোথাও কোথাও মাস্ক না পরলে আপনি গ্রেপ্তারও হতে পারেন।

ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সে অনেকের মধ্যেই এই সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত যথেষ্ট সংখ্যক মানুষকে পরীক্ষা করা হয়নি, অর্থাৎ তারা আক্রান্ত মানুষের সঠিক সংখ্যাটি জানেন না। এজন্য অন্যদের থেকে বাঁচতে এসব দেশের অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেন।

আবার হংকং এমন একটি দেশ যেখানে মাস্কের ব্যবহার তাদের সংস্কৃতিরই অংশ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বহু আগে থেকে তারা এটা ব্যবহার করে আসছে এবং এটা তাদের ফ্যাশনের অংশ। হংকংয়ের রাস্তার পাশের দোকানে আপনি দেখতে পাবেন 'হ্যালো কিটি' মাস্ক।

পূর্ব এশিয়ার অনেক মানুষ আগে থেকেই অসুস্থ হলে মাস্ক পরতেন। সেখানে উন্মুক্ত স্থানে কফ ফেলা বা হাচি দেয়াকে এক ধরণের অভদ্রতা মনে করা হয়।

২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন এই জীবাণু যেসব দেশে আঘাত হানে তার অন্যতম হলো হংকং। ওই অঞ্চলে তখন থেকেই মাস্ক পরাটা সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে গেছে। তখন হংকংয়ে বহু মানুষ মারা গিয়েছিল।

এক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তাদের একটা বড় পার্থক্য হলো, এই অঞ্চলের মানুষ সংক্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তাদের স্মৃতি এখনো তাজা। তারা এই কষ্ট অনুভব করেছেন বলেই বাড়তি সতর্ক থাকেন।

মানুষের ঘনবসতি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি, ফলে অনেকে কেবল দূষণ থেকে বাঁচতেই মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ান কিন্তু এশিয়ার সব জায়গায় যে মাস্ক পরতে দেখা যায়, ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়।

সিঙ্গাপুরে এখন সরকারের পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়েছে সবাইকে মাস্ক না পরতে, যাতে করে স্বাস্থ্যকর্মীরা যথেষ্ট পরিমাণে মাস্ক পান। সিঙ্গাপুরে জনগণ সরকারের ওপর ভরসা করে এবং উপদেশ মেনে চলে।

মাস্ক পড়ার বিষয়ে হংকং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডোনাল্ড লো বলেন, ‘মাস্ক পরাটা এখন প্রথায় পরিণত হয়েছে। এটা একটা উর্দি মতো। কিন্তু মূল বিষয়টি হচ্ছে মুখে হাত না দেওয়া, ভীড়ের মধ্যে না যাওয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।’

এ প্রসঙ্গে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মহামারি বিশেষজ্ঞ বেঞ্জামিন কওলিনং বলেন, ‘আমরা এমন বলতে পারছি না যে মাস্কের কোনো কাজ নেই। কিছু না কিছু সাহায্য তো করেই। এজন্যই তো আমরা এটা স্বাস্থ্যকর্মীদের দিচ্ছি।’

যদি সবাই মাস্ক পরে, তাহলে তা একটু হলেও সাহায্য করে বলে মনে করছেন তিনি।

তবে এর নেতিবাচক দিক হচ্ছে, যাদের প্রয়োজন তারাই হয়তো এগুলো পাবেন না, অন্যদিকে সুস্থ মানুষ এটা পরে বসে থাকবে।

যেমন জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে মাস্কের ভয়াবহ ঘাটতি আছে।

এমনও সময় আসতে পারে যখন মানুষ একই মাস্ক পুনরায় ব্যবহার করবে, যে বিষয়টি প্রচন্ড অস্বাস্থ্যকর। আবার অনেকে ঘরে মাস্ক বানাবে, যা আসলে কোনো কাজের না। খবর: বিবিসি

বাংলাদেশ জার্নাল কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত