ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঘরে ফিরেও মার খাচ্ছেন ভারতের শ্রমিকরা

প্রথমে হামাগুড়ি দিতে বলে পুলিশ, পরে ব্যাঙের মতো লাফাতে

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২০, ২২:৩১

প্রথমে হামাগুড়ি দিতে বলে পুলিশ, পরে ব্যাঙের মতো লাফাতে
ছবি: সংগৃহীত

অভুক্ত অবস্থায় মাইলের পর মাইল হেঁটে, পুলিশের মার খেয়ে কোনোক্রমে গ্রামে পৌঁছবার পরেও বিপদ কাটছে না ভিন রাজ্য থেকে ফেরা ভারতীয় শ্রমিকদের। গ্রামবাসীদের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

কেউ ৮০ কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন। কেউ হাঁটছেন ২০০ কিলোমিটার।

ক্ষেত্র বিশেষ শোনা যায় পাঁচ শ কিলোমিটার হেঁটেও বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ। তারা সবাই শ্রমিক। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। নিজের রাজ্য ছেড়ে, গ্রামের বাড়ি ছেড়ে ভিন রাজ্যে থাকেন। কেউ সপরিবার, কেউ বা একা।

করোনার ফলে লকডাউন হয়ে যাওয়া ভারতে তাদের দুর্গতির শেষ নেই। একে তো খাবার নেই, থাকার জায়গা নেই, হেঁটে অভুক্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই পুলিশের লাঠির বাড়ি খেতে হচ্ছে। বাড়ি ফিরেও নিস্তার নেই।

গ্রামের লোক তাদের ঘরে যেতে দিচ্ছেন না। মারধর পর্যন্ত করছেন। হৃদয়হীন শহর তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। নিজের গ্রামও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তাদের ঠাঁই দিচ্ছে না। অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

করোনার ভয় বা আতঙ্কে লোক দিশেহারা। তাই প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে ঘরে ফেরা শ্রমিকদের সঙ্গে। ঝাড়খণ্ডে গ্রামে ফেরার পর এরকমই এক শ্রমিককে ধরে মারা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে একজন গ্রামবাসী ফেরার পর তাঁকে ঢুকতে না দিয়ে মেরেধরে গ্রাম থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়েছে বর্ধমান জেলার কাটোয়ার অভিজ্ঞতা আরো খারাপ।

তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের অনেক কাগজেই খবর বেরিয়েছে, কাটোয়া পুরসভা উদ্যোগ নিয়ে বিহার থেকে আসা শ্রমিকদের তাদের রাজ্যে ফেরাতে যায়। তাদের বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বিহার পুলিশ ও প্রশাসন তাদের ঢুকতেই দেয়নি। তারা আবার কাটোয়ায় ফিরে এসেছেন। পৌরসভা এখন তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। বিভিন্ন রাজ্যে হাজার হাজার শ্রমিক আটকে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশে আটকে থাকা ভারতীয়দের চার্টার্ড বিমানে করে নিয়ে আসতে পারেন, অথচ, এই শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করতে পারেন না। আর দুই দিন ট্রেন চালালে কী ক্ষতি হত? অভিজ্ঞতা বলছে, বড়লোকরাই বিদেশ থেকে এই সংক্রমণ নিয়ে ফিরছেন। গরিবরাপরে তাদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হচ্ছেন।’

ঠিকই, লকডাউনের সময় সম্ভবত ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের কথা মাথায় রাখা হয়নি বা রাখা যায়নি। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, তাই তড়িঘড়ি কেন্দ্রকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ফলে এই শ্রমিকরা অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। কোনওক্রমে পায়ে হেঁটে যদি বা গ্রামে পৌঁছচ্ছেন, বাড়ি ঢুকতে পারছেন না।

বাঁকুড়ায় একটি গ্রামের বাইরে ‘প্রবেশ নিষেধ’ নোটিশ সেঁটে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তারা গ্রামে আর কাউকে ঢুকতে দেবেন না। ভয়, যদি বাইরে থেকে আসা লোকেরা করোনার জীবাণু নিয়ে আসেন। আর যারা ভিন রাজ্যে থেকে যেতে বাধ্য হয়েছেন, তারাও করোনার বিপদ নিয়ে বাঁচছেন। খাবার পেতে গেলে তাদের পক্ষে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানা সম্ভব হচ্ছে না।

এই পরিস্থিতি দেখে অনেক জায়গায় জনপ্রতিনিধিরা সক্রিয় হয়ে ভিন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের ঘরে ফেরাচ্ছেন। তারা যেন বাইরে যত্রতত্র না ঘুরে বেড়ান, তা দেখছেন।

তৃণমূলের সাংসদ মানস ভুঁইঞা বলেছেন, ‘পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে ভিন রাজ্য থেকে ১ হাজার ৯৩ জন এবং পিংলায় ৬৬২ জন ফিরেছেন। এখনও মুম্বই, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, কেরালা, গোয়া, হরিদ্বারে মোট ৩৫০ জন সবংয়ের শ্রমিক আটকে পড়েছেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে আমি গ্রামবাসীদের বুঝিয়েছি। যারা ফিরেছেন, তাদেরও ঘরবন্দি হয়ে থাকতে বলেছি।’

বাংলাদেশ জার্নালে আরো পড়তে পারেন:

> দেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি

> লকডাউন: বাড়ি ফিরতে ছেলেকে কাঁধে নিয়ে ২ দিন হাঁটলেন যুবক

> করোনা প্রতিরোধে নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

> নাগরিকদের বাংলাদেশ ছাড়তে বলেছে ব্রিটিশ হাই কমিশন​

> করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আগে যা বললেন চিকিৎসক

> করোনাভাইরাস: নাগরিকরা প্রত্যেকে পাবেন ১২ শ ডলার​

> বিদেশী নাগরিকদের সহযোগিতার আশ্বাস পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

> যে ৭ রোগ থাকলে করোনা হলে আপনার ঝুঁকি বেশি​

> করোনার সচেতনতায় এমনটা কেউ করেননি আগে​

> দেশ লকডাউন হলেও মসজিদ বন্ধ করা যাবে না

> পিপিই ছাড়া চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা স্থগিত

> করোনাভাইরাসকে ‘অবহেলা’ করছেন ট্রাম্প​

> করোনা নিয়ে গুজব ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা

> ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে ৪৪ জন​

> ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত​

> গুজবে হবিগঞ্জবাসীর নির্ঘুম রাত

> চা পানেই করোনা থেকে মুক্তি!

> বিশ্বের ২০০ দেশে করোনা​

> কাশি দিলেই শাস্তি

এখানে না হয় মানসবাবু নিজে পেশায় চিকিৎসক ও দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধি এবং তিনি সক্রিয় বলে অসুবিধা হচ্ছে না, কিন্তু অন্যত্র?

ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বাড়ি ফিরছেন এই শ্রমিকের দল। তেলেঙ্গানা থেকে রাজস্থান যাচ্ছিল দুটি বড় কনটেইনার ট্রাক। মহারাষ্ট্রের পুলিশ তাদের রুটিন পরীক্ষার জন্য থামায়।

দেখা যায়, কনটেইনারে কোনও অত্যাবশ্যকীয় জিনিস নেই, গাদাগাদি করে আছেন ৩০০ শ্রমিক, এ ভাবেই তারা রাজস্থানে নিজেদের বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রাকের চালকদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু শ্রমিকদের নিয়ে কী করা হবে, তা এখনও স্থির করা যায়নি।

কতটা মরিয়া হলে তারা এইভাবে ঘরে ফেরার চেষ্টা করেন তা সহজবোধ্য। নিজেদের পুঁজির টাকা সব ট্রাকচালককে দিয়ে ঝুঁকি নিয়েও ফিরছেন তারা।

যাঁরা মনে করছেন হাঁটতে পারবেন, তারা হেঁটেই ফিরছেন। তাদেরও হেনস্থার শেষ নেই। গোয়ালিয়র থেকে উত্তরপ্রদেশের গ্রামে ফিরছিলেন কয়েকজন শ্রমিক।

বদায়ুতে পুলিশের কনস্টেবল তাদের প্রথমে হামাগুড়ি দিতে বলে। তারপর ব্যাঙের মতো লাফাতে বলে। সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

আবার ব্যতিক্রমও যে নেই তা নয়। গাজিয়াবাদ থেকে উত্তরপ্রদেশেই গ্রামে ফিরছিলেন রাজেশ কুমার সহ কয়েকজন। কিন্তু রাস্তায় লোকে সাহায্য করেনি এই ভেবে যে, গাজিয়াবাদ থেকে তারা নিশ্চয়ই করোনা ভাইরাস নিয়ে ফিরছেন।

লখিমপুর খিরি পৌঁছালে পুলিশ তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। তারপর খেতে দেয়। আবার মেদিনীপুরের একটি গ্রামে ভিন রাজ্য থেকে শ্রমিকরা বাড়ি ফেরার পর রীতিমতো মাইক বাজিয়ে নাচাগানা করে পার্টিও করেছেন গ্রামবাসীরা। করোনার সময়ে এটাও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ।

প্রসঙ্গত, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্বের ২০০ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে ৫ লাখ ৩১ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ২৪ হাজার জনের। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে এক লাখ ২২ হাজার মানুষ।

সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ইতালিতে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৮২১১। এরপর স্পেনে মারা গেছে ৪৩৬৫ জন। চীনে মারা গেছে ৩২৯১ জন। এ ছাড়া ইরানে মারা গেছে ২২৩৪ জন। ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা ১৬৯৮। যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছে ১২৯৬ জন মানুষ।

গত আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যায় এগিয়ে ছিল চীন। দেশটিতে সংক্রমণ থেমে যাওয়ায় ভাইরাসটির নতুন কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় ইউরোপ। ফলে গত কয়েক দিনে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ইতালি ও স্পেন।

এদিকে আক্রান্তের সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ৮৫ হাজার ৬৫৩ জন মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরপর ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছে ৮১ হাজার ৭৮২ জন। স্পেনে ৫৭ হাজার ৭৮৬ জন মানুষকে আক্রান্ত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও ইউরোপে আক্রান্তের কমে এসেছে। তবে আমেরিকায় সে সংখ্যা বাড়ছে। তাই অঞ্চলটি করোনার নতুন উপকেন্দ্র হয়ে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

আরো পড়ুন:

> করোনা ‘জয়ে’ সুখবর​

> সব কারখানা বন্ধের নির্দেশ​

> করোনায় বাড়িতে যা করবেন

> হ্যান্ডওয়াশ মাস্ক দিচ্ছে সেনাবাহিনী

> করোনা পরিস্থিতি তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণে​

> করোনা ঠেকাতে তালপাতার মাস্ক ব্যবহার

> কোনো ধরনের জনসমাগম নয়: প্রধানমন্ত্রী

> করোনায় চিকিৎসক যুগলের অন্যন্য দৃষ্টান্ত​

> করোনা একটি যুদ্ধ, আমাদের জিততে হবে

> করোনায় প্রাথমিকে ‘বার্তা’ পাঠাবে মন্ত্রণালয়

> করোনাভাইরাস: সাত উপায়ে থামবে ভুল তথ্য​

> বিমানের দুটি ছাড়া সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ

> পুলিশের লাঠিপেটা হয়রানি, বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ​

> করোনা থেকে বাঁচতে ডেটল খেয়ে ৫৯ জনের মৃত্যু​

> ঢাকার রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ, সাথে সেনাবাহিনী

> করোনা চিকিৎসায় আশার আলো দেখছেন চিকিৎসকরা​

> দেশে বেড়েছে করোনার বিস্তার ও নমুনা সংগ্রহের আওতা

> অন্যদের বাঁচাতে আত্মহত্যা করলেন করোনা আক্রান্ত নার্স

  • সর্বশেষ
  • পঠিত