ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

হায়, ইতালি তখন মেতেছিল ভুয়া খবরে

হায়, ইতালি তখন মেতেছিল ভুয়া খবরে
করোনায় জনশূন্য ইতালির জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পটগুলো

ইতালির রোম শহর নিয়ে একটা প্রবাদ বিশ্বজুড়ে খুব প্রচলিত। ‘রোম যখন পুড়ছিল সম্রাট নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন’। জরুরি কাজকে অবহেলা করা বুঝাতে এই প্রবাদবাক্যটি হরহামেশাই ব্যবহার হয়ে থাকে। এবার গোটা ইতালি নিরোর মতোই কাণ্ড করেছে। যখন করোনা ভাইরাস দেশটিতে থাবা বিস্তারের অপেক্ষায় ছিল, তখন তারা এটা প্রতিহত করার চেষ্টা বাদ দিয়ে কিছু ভুয়া খবর ও গুজব নিয়ে মেতে ছিলো।

গত ৬ মার্চ, ইতালিতে তখন নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র সাড়ে ৩ হাজারের মতো। আর গত রোববার (২৯ মার্চ) এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ লাখ ৬৮৯তে। তখন দেশজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪৮ জন, আজ তা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৯ জন। অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইউরোপের এই দেশটিতে।

মার্চের গোড়ার দিকে দেশের সরকার গোটা উত্তর ইতালিকে কোয়ারেন্টিনে পাঠালেও নগরবাসীর তা নিয়ে কোনও হেলদোলই ছিল না। ফলে তাদের সচেতন করতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হয়েছে প্রশাসনকে। এখনকার পরিস্থিতি দেখে বোঝার উপায় নেই যে এই মাসের শুরুতেও নানা গুজব ও ভুয়া খবরের পেছনে কেমন ছুটছিলেন ইতালীয়রা। ওই সময় সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ঘটনা এসেছে বিবিসিতে, যা ছিল পুরোপুরি ভুয়া।

সেনা মোতায়েন

এই মাসের প্রথম দিকে ইতালির রাস্তায় সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখা যাচ্ছে এমন একটি ভিডিও টুইটারে পোস্ট করার পর সেটি আড়াই লাখ বার দেখা হয়েছিল। ভিডিওতে প্রথমে বলা হয়েছিল এসব গাড়ি দক্ষিণাঞ্চলীয় ফজজা শহরে, পরে সংশোধন করে বলা হয় সিসিলির পালেরমোতে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কারাগারে দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর কারাগারে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর ওই সব গাড়ি মোতায়েন করা হয়েছে বলে তখন দাবি করা হয়।

পরে জানা যায়, পালেরমোর রাস্তায় সেনাবাহিনীর গাড়িগুলো সত্য, কিন্তু সেগুলোর সাথে কারাগারে অস্থিরতার কোনো সম্পর্ক ছিল না।

ইতালিয়ান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ষষ্ঠ ল্যানসিয়েরি দি আওস্টা রেজিমেন্টের ওই যানগুলো সার্দিনিয়ায় সামরিক মহড়া শেষে ফিরছিল এবং সেগুলোর সঙ্গে কারাগারে অস্থিরতা বা করোনাভাইরাসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না।

টিকা কিনতে পারার ভুয়া খবর

ভেনিসের একটি এলাকার দোকান ও বাড়ি বাড়িতে একটি লিফলেট ছড়িয়ে পড়েছিল। সেখানে লেখা ছিল কভিড-১৯ প্রতিরোধে অস্ট্রেলিয়ায় টিকা আবিষ্কার হয়েছে এবং বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে সুইজারল্যান্ড তা কিনেছে।

ওই লিফলেটে আরও বলা হয়, ভ্যাকসিনের ছয়টি ডোজ নিলে এক বছরের জন্য করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকা যাবে এবং মাত্র ৫০ ইউরোয় সেটি পাওয়া যাবে। যোগাযোগের জন্য একটি ইমেইল অ্যাড্রেসও দেওয়া হয়েছিল সেখানে।

তবে প্রকৃত বাস্তবতা হল বিশ্বে এখনও করোনাভাইরাসের কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও চীনসহ অনেক দেশই করোনার প্রতিষোধক তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এই টিকা প্রস্তুত হতে আরও কমপক্ষে ১৮ মাস বা দেড় বছর সময় লাগবে।

এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশকারী একটি ইতালিয়ান সাইট বলেছিল, টিকার অস্তিত্ব নেই। কেবল মিথ্যা বলে লোকজন মজা নিচ্ছে।

লেবুর সরবতের গুজব

করোনা মোকাবেলার নানা টোটকা ইতালির সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে একটি ছিল, চীনের জানজান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক বলেছেন, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে তুমি যত বেশি পার ভিটামিন সি খাও।

ভাইরালম্যাগাজিন ডট আইটি নামে একটি নিউজ পোর্টালে এটা প্রকাশিত হওয়ার পর সেটির ভিউ হয়েছিল ৫ লাখ ৭৬ হাজার। আর ৩০ হাজার শেয়ার হয়েছিল আর্টিকেলটি।

ওই পোস্টে ‘প্রফেসর চেন হোরিন সিইও অফ দ্য বেইজিং মিলিটারি হসপিটাল’কে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল যে, লেবু রস মিশ্রিত গরম পানীয় এই ভাইরাসের বিস্তার কমাতে পারে।

তবে অন্য অনেক খবরের মতো এটাও ছিল একটা ভুয়া সংবাদ।

এ নিয়ে বিবিসি বলছে, ওই নামে কোনও চীনা গবেষক নেই। কেননা তার নাম ইংরেজি অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায় ‘হোয়াট ইজ ইওর নেইম (তোমার নাম কি)’।

তাছাড়া চীনে জানজান বিশ্ববিদ্যালয় বলেও কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তাছাড়া লেবুর সরবত বা প্রচুর ভিটামিন সি এই ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে তা এখনও প্রমাণিত নয়।

প্রতিদিনই শত শত লোক মারা যাচ্ছে দেশটিতে। ফলে প্রিয়জনের কফিনে মেলে না ফুল

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত