চাকরি হারিয়ে বাড়িভাড়া দিতে পারছে না লাখ লাখ মানুষ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৬:৪০
করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি হারিয়ে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে পড়েছে। তাদের মধ্যে সাড়ে ৬৬ লাখ মানুষ বেকারত্ব ভাতার জন্য আবেদন করেছেন। অনেকে আবার অনলাইনে অনুদান চাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেরই এখন বাড়িভাড়া দেয়ার মতো সামর্থ্য নেই।
আর বাড়িভাড়া না দিতে পারা এমনই এক দম্পতি নিউইয়র্কের বাসিন্দা ব্রিটানি ব্রুক ও তার স্বামী ম্যাথিউ হোয়াইটফিল্ডের।
ব্রিটানি একটি বিদ্যালয়ে সঙ্গীতের শিক্ষক ছিলেন। আর তার স্বামী ম্যাথিউ অভিনয়ের পাশাপাশি করতেন ওয়েটারের কাজ।
কিন্তু বর্তমানে তারা দুজনই চাকরিচ্যুত হওয়ায় বিল পরিশোধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।
শুধু এ দু’জনই নন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের মতো চাকরি হারিয়ে বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য বিল দিতে পারছেন না সব শ্রেণির কয়েক লাখ মানুষ।
আবাসন খাতের বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারী সংস্থা আমহার্স্টের তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ২৬ শতাংশ ভাড়াটিয়ার বাড়িভাড়া পরিশোধে সাময়িক অর্থ সহায়তার প্রয়োজন হবে। প্রতি মাসে যার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার দেশটির অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
তবে প্রত্যেক আমেরিকানকে ১ হাজার ২০০ ডলারের চেক ও প্রত্যেক শিশুকে যে ৫০০ ডলার করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তা এপ্রিলের দ্বিতীয় ভাগের আগে প্রদান করা সম্ভব হবে না।
হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও বৃহৎ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার ভাতার জন্য ২১ মার্চ পর্যন্ত আবেদন করেছে সাড়ে ৬৬ লাখ আমেরিকান নাগরিক।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের দাপট বেড়েই চলেছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে গাছের পাতার মতো ঝরছে প্রাণ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ডকে পেছনে ফেলেছে। বৃহস্পতিবার একদিনে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এছাড়া একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
বাংলাদেশ জার্নালে আরো পড়তে পারেন:
> করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আগে যা বললেন চিকিৎসক
> করোনাভাইরাস: নাগরিকরা প্রত্যেকে পাবেন ১২ শ ডলার
> বিদেশী নাগরিকদের সহযোগিতার আশ্বাস পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
> কিছুদিনের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হবে ১০ লাখ মানুষ
> করোনার মধ্যেও এশিয়ায় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের
> প্রাথমিক শিক্ষকদের টিফিন ফি যাবে ‘করোনা ফান্ডে’
> যে ৭ রোগ থাকলে করোনা হলে আপনার ঝুঁকি বেশি
> করোনার সচেতনতায় এমনটা কেউ করেননি আগে
> চট্টগ্রামে ছাপা পত্রিকার বিক্রি কমেছে ৯০ শতাংশ
> দেশ লকডাউন হলেও মসজিদ বন্ধ করা যাবে না
> পিপিই ছাড়া চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা স্থগিত
> করোনা নিয়ে গুজব ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা
> খুব দ্রুত করোনার ‘ওষুধ’ আনছে জাপান
> করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও বাস্তবতা
> ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত
> লকডাউনে ঘরে সুস্থ থাকার উপায়
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত করোনায় বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ১৯০ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ১৫ হাজার ৪৬৬ জন। অপরদিকে ২ লাখ ১২ হাজার ২২৯ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে এই মহামারি শুরু হলেও এখন ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে করোনাভাইরাস। আক্রান্তের সংখ্যায় সবার ওপরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৭৫ জনের।
মৃত্যুর দিক দিয়ে সবার ওপরে রয়েছে ইতালি। দেশটি যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। ইতালিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ১৫ হাজার ২৪২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৯১৫ জনের। এরপরই রয়েছে স্পেন। সেখানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১০৩৪৮ এবং আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার ৬৫ জন। এ তথ্য জানিয়েছে করোনাভাইরাস নিয়ে লাইভ আপডেট দেয়া ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডমিটার।
চীনের উহান থেকে বিস্তার শুরু করে গত তিন মাসে বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। চীনে করোনার প্রভাব কমলেও বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশে মহামারি রূপ নিয়েছে।
এই ভাইরাসে চীনের মূল ভূখণ্ডে আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৫৮৯ জন। আর মারা গেছেন ৩ হাজার ৩১৮ জন। তবে এখন চীনে এই হার উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। গত কয়েকদিনে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। যে উহান থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে সেখানের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাস্ক পরার বিষয়ে তাদের পূর্বের নির্দেশনা পরিবর্তন করার বিষয়ে আলোচনা করবে। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরামর্শ দিচ্ছিল যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি, আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেবাদানকারী ব্যক্তি বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি ছাড়া কারো মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। তবে এখন সবাইকেই মাস্ক পরতে পরামর্শ দেয়ার কথা চিন্তা করছে তারা।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেয়া হয়েছে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। অধিকাংশ দেশেই মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে মানুষের চলাফেরার ওপর বিভিন্ন মাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো দেশে আরোপ করা হয়েছে সম্পূর্ণ লকডাউন, কোথাও কোথাও আংশিকভাবে চলছে মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রম।
এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ চলাফেরার ক্ষেত্রে কোনো না কোনো মাত্রায় নিষেধাজ্ঞার ওপর পড়েছেন।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ব্যাপক চাপ পড়ার কারণে কিছুদিনের মধ্যেই অনেক দেশেই স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জাম ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ঘাটতি দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে
আরো পড়ুন:
> করোনায় দেড় মাসের শিশুর মৃত্যু
> মাস্ক নিয়ে পশ্চিমাদের ভিন্ন ভাবনা
> ঘরে বসেই করোনার ঝুঁকি পরীক্ষা
> যে দুই ফল ঠেকাবে করোনাভাইরাস
> গরমে কী করোনাভাইরাস ধ্বংস হবে
> করোনা পরিস্থিতি তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণে
> বিশ্বের ১০ দেশে ৮১ ভাগ করোনা রোগী
> করোনায় সুন্দরবনের কপালে কী আছে!
> করোনা ঠেকাতে তালপাতার মাস্ক ব্যবহার
> করোনায় প্রাথমিকে ‘বার্তা’ দিবে মন্ত্রণালয়
> কোনো ধরনের জনসমাগম নয়: প্রধানমন্ত্রী
> করোনায় চিকিৎসক যুগলের অন্যন্য দৃষ্টান্ত
> করোনা একটি যুদ্ধ, আমাদের জিততে হবে
> করোনার ভ্যাকসিন তৈরির পথে অস্ট্রেলিয়া
> লকডাউন না মানলে গুলি করে হত্যার নির্দেশ
> করোনাভাইরাস: সাত উপায়ে থামবে ভুল তথ্য
> মাছ বিক্রেতা নারীই বিশ্বের প্রথম করোনা রোগী!
> পুলিশের লাঠিপেটা হয়রানি, বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ
> ঢাকার রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ, সাথে সেনাবাহিনী