ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

করোনার ত্রাণ বিলি নিয়ে পরস্পরকে দুষছেন পশ্চিমবঙ্গের নেতারা

  কলকাতা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২০, ১২:২৯

করোনার ত্রাণ নিয়ে পরস্পরকে দুষছেন নেতারা

করোনা আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। ভারতেও লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যুর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। পশ্চিমবঙ্গেও করোনায় সংক্রমিত হয়ে ইতিমধ্যেই ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। যদিও রাজ্য সরকারের দাবি করোনাতে ৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭।

করোনার সংক্রমণ ছড়ানো ঠেকাতে গোটা ভারতের সাথেই পশ্চিমবঙ্গেও চলছে লকডাউন। আর এই করোনার আবহেই ত্রাণ বিলি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।

করোনায় মোকাবিলায় রাজ্য জুড়ে নজরদারি চালানোর পাশাপাশি মানুষের পাশে থাকতে প্রথম রাস্তায় নামতে দেখা যায় রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জিকে। সামাজিক দূরত্ব বোঝাতে রাস্তায় নেমে ইঁটের টুকরো দিয়ে গণ্ডি কাটতেও দেখা গিয়েছিল তাকে। এমনকি কালীঘাটে রিক্সাচালকদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রীকে।

দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই রাজ্য জুড়েই দলের মন্ত্রী থেকে ছোট-বড় সব নেতাই জনবল নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। দুঃস্থ, দুর্গত, অসহায় মানুষদের হাতে খাবারের প্যাকেটসহ অন্য ত্রাণসামগ্রী তুলে দিতে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

কেউ দিচ্ছেন চাল-ডাল-আলুর প্যাকেট। কেউ বা আবার খিচুড়ি-আলুর দম। কেউ আবার গরম গরম বিরিয়ানি পরিবেশন করছেন। আড়ালে-আবডাওে লক্ষ্য একটাই ভোটের সময় তাদের যেন একটু মনে রাখে।

দিদির নির্দেশ পালন করতে গিয়ে অনেকের বিরুদ্ধেই আবার লকডাউনের কোনও নিয়মনীতিই না মানার অভিযোগও উঠেছে। একাধিক জায়গায় দেখা গেছে এই সঙ্কটময় মুহুর্তে ত্রাণ বিলির সময় কোনও রকম সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না।

ত্রাণ সরবরাহকারী ও সেই ত্রাণ নিতে নিতে আসা মানুষগুলোর হুড়োহুড়ি দেখে সাধারণ মানুষও হতবাক, উদ্বিগ্ন প্রশাসনও।

যদিও ত্রাণ বিলির ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ে কয়েক মাইল পিছিয়ে বিরোধী দল বিজেপি। হাতে গোনা কয়েকজনকেই সাংসদ, বিধায়ক বা নেতাদেরই ত্রাণ বিলিতে ময়দানে দেখা গেছে।

একথা স্বীকার করে নিয়েছে বিজেপির নেতারাও। তাদের অভিমত মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণাতেই তাদের দলের কর্মীরা ময়দানে নামলেও পুলিশ তাদের ত্রাণ বিলিতে বাধা দিচ্ছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

রাস্তায় নেমে খাবার বিলি বা সুরক্ষা বলয় কেটে দেওয়া নিয়ে মমতার উদ্যোগ সমাজের একাংশের কাছে প্রশংসা পেলেও তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি।

বিজেপির অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর এই কর্মকাণ্ড ভোটের রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়। কারণ লকডাউনে যেখানে ঘর থেকে বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে একজন মুখ্যমন্ত্রী তার লোকজন নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন।

কারও অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী নিজে করলে তাতে দোষা নেই, অথচ তার অনুপ্রেরণাতেই অন্য দলের নেতারা ত্রাণ বিলিতে নামলেও পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে।

বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের অভিমত ‘লকডাউনের অর্থ লকডাউন। একজন মুখ্যমন্ত্রীর কাজ চক দিয়ে গণ্ডি কাটা নয়। কিন্তু তিনি তা তা না মেনে রাস্তায় নেমে পড়ছেন, খাবার বিলি করছেন। তাকে দেখতে আরও মানুষ রাস্তায় ভিড় করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মীরাও আছেন। ফলে সকলেই এই ভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।’

তার অভিমত, এই কাজ দেখার জন্য এনজিও বা কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে, তারাই এটা করবে। কিন্তু কোন কথাই মুখ্যমন্ত্রী শুনছেন না।’

তিনি এও জানান ‘আমিও আমার কেন্দ্রে দুর্গত, দুস্থ, আটকে পড়া মানুষদের ত্রাণ বিলি করছি, কিন্তু যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। সেটা আমার দলীয় কার্যালয় থেকেই। আামকে রাস্তায় বের হতে হচ্ছে না।’

ইতিমধ্যেই করোনা মোকাবিলায় নিজের সাংসদ তহবিল থেকে এক কোটি রুপি দান করেছেন ব্যরাকপুরের এই সাংসদ।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিমত ‘লকডাউন ঘোষনার দেওয়ার পর এতদিন প্রধানমন্ত্রীর কথায় আমরা চুপ করে বসেছিলাম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণাতেই আমরা বাইরে বেরিয়েছি। মানুষের সেবা করছি এবং আমরা এটা করবো। যদি মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী, অন্য মন্ত্রী বা তার দলের নেতারা বের হলে করোনা ছড়াবে না, আর বিজেপি বেরোলে ছড়াবে-এটা ভুল ধারনা, এটা হতে পারে না।

করোনার সহায়তা নিয়ে তৃণমূল রাজ্যে রাজনীতি করতে চাইছে বলেও অভিযোগ করে দিলীপ ঘোষ আরও জানান , ‘এতদিন যেটা চলছিল সেটা মোটেও সেবা ছিল না, ওটা মুখ্যমন্ত্রীর রাজনীতি ছিল।’

তার প্রশ্ন ‘মুখ্যমন্ত্রী যদি রাজনীতি করতে পারেন, আমরাও তা করতে পারি, আমরাও বাইরে বের হতে পারি। আজকে উনি সেবা করছেন, তবে আমাদের সেবা করতে আপত্তি কোথায়। তাই আমরাও সেবা করতে বেরিয়েছি। আমরা রাজ্য সরকারকে সবরকম সহযোগিতা করতে রাজি আছি। কিন্তু ওনারা তা নিতে রাজি নয়, কেবল ভোট রাজনীতি করছেন।’

মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় ত্রাণ বিলি করতে গিয়ে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতা ও রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত।

সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখেই তিনি চাল-ডাল বিতরণ করলেও পুলিশের অভিযোগ আইন মেনে সব্যসাচী কাজ করছেন না। বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার সকালের দিকেও ত্রাণ বিলি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথাকাটিও হয়। পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া এভাবে ত্রাণ বিলি করা যাবে না।

সব্যসাচীর অভিযোগ তৃণমূলের নেতা ত্রাণ বিলি করলে প্রশাসন কিছু বলছে না, আপত্তি শুধু তাদের ক্ষেত্রে।

পুলিশের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে বিজেপি নেতা বলেন ‘বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ তার ফোন, ওয়াটঅ্যাপস বা চিঠি-কোনটারই জবাব দিচ্ছেন না। অথচ পতাকা নাড়িয়ে রাজ্যের ফায়ারসার্ভিস মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা সুজিত বসুর ত্রাণ সরবরাহের অনুষ্ঠানে এই পুলিশকেই মঞ্চ ভাগ করতে দেখা যায়। তাই এক পুলিশের দুইরকম চরিত্র, রঙ মানায় না।’

সুজিত বসুর পাল্টা অভিযোগ ‘নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে ত্রাণ বিলি না করে অন্য কেন্দ্রে ত্রাণ বিলির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন সব্যসাচী দত্ত। মানুষ তার এই ত্রাণ গ্রহণ করবেন না। সরকারের আরেক মন্ত্রী (পরিকল্পনা রূপায়ন ও পরিসংখ্যান) তাপস রায় আবার বিজেপির ঘাড়েই দোষ চাপিয়ে সস্তার রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন।

তার প্রশ্ন ‘সকলকে যেখানে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলতে বলা হয়েছে সেখানে মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে বিজেপির নেতারা কেন ত্রাণ বিলি করছেন?’

তার দাবি এই সঙ্কট মুহুর্ত কাটিয়ে ওঠার সমস্ত পদক্ষেপই সরকার গ্রহণ করেছে। তবে এই ভাইরাস আতঙ্কে এখনও গা ভাসাতে রাজি নয় কংগ্রেস বা সিপিআইএম’এর নেতারা।

তৃণমূলের প্রায় সব মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, নেতারা যেখানে ময়দান কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন, বা বিজেপিরও হাতে গোনা কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে ত্রাণ বিলিতে সেখানে কংগ্রেস বা সিপিআইএম’এর নেতা লকডাউনের প্রকৃত অর্থ মেনে চলার চেষ্টা করছেন।

তবে এরই মধ্যে মঙ্গলবার দিল্লিতে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে গিয়ে সেখানকার রান্নাঘরে খাবার তৈরি করা ও পরে দুঃস্থদের মধ্যে সেই খাবার পরিবেশন করতে দেখা যায় কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত