ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

ময়লার ব্যাগ দিয়ে বানানো পিপিই পরছেন ব্রিটিশ চিকিৎসকরা

ময়লার ব্যাগ দিয়ে বানানো পিপিই পরছেন ব্রিটিশ চিকিৎসকরা

যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের পরিবেশ ও সরঞ্জামের অভাব প্রকট রূপ ধারণ করেছে। এ অবস্থায় ময়লা ফেলার ব্যাগ দিয়ে পিপিই বানিয়ে সেগুলো দিয়ে কাজ করছেন সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ কথা জানিয়েছেন, দেশটির নিবিড় পরিচর্যা বিভাগের একজন চিকিৎসক। সূত্র: বিবিসি বাংলা

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে এবং যাদের অবস্থা সঙ্কটময় তাদের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে হাসপাতালগুলো। মূলতঃ নিবিড় পরিচর্যা সেবা বা আইসিইউ বাড়াতেই এই উদ্যোগ।

কিন্তু তাদের অভিযোগ যথাযথ সাপোর্ট বা সরঞ্জাম তারা পাচ্ছেন না। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তারা যে বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন তা হলো সরঞ্জামের অভাব। যদিও এ নিয়ে তাদের গণমাধ্যমে কথা বলতেও নিষেধ করা হয়েছে।

তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের একজন কর্মরত চিকিৎসক বিবিসির সাথে কথা বলতে রাজি হন। তবে তিনি নিজের নাম প্রকাশ করেননি। ধরা যাক তার নাম ড. রবার্টস (ছদ্মনাম)।

তিনি এমন একটি হাসপাতালের আইসিইউ কাজ করেন যেটি এখন কোভিড-১৯ রোগীতে পরিপূর্ণ। এসময় সেখানে অন্য সব রোগের চিকিৎসা যেগুলো অপ্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে, সেসব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যেএকটি ক্যানসার ক্লিনিক-ও রয়েছে।

এই হাসপাতালে চিকিৎসাকর্মীর অভাব আছে। রয়েছে সিরিয়াস রোগীদের বেডের অভাবও। এছাড়া একদম সাধারণ এন্টিবায়োটিক ও ভেন্টিলেটরের অভাব আছে।

ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে বড় আঘাত হানবে, বিশ্লেষকদের ভাষায় যেটাকে বলা হচ্ছে 'পিক টাইম'। কর্মীরা এখনই অনুভব করছে কী পরিমাণ সংকটময় সময় আসছে সামনে।

করোনায় গুরুতরভাবে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন এমন ডাক্তাররা এখন ১৩ ঘন্টা করে কাজ করছেন প্রতিদিন।

তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, পিপিই বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা দেয়া সরঞ্জামের অভাব প্রকট। এমনও হয়েছে, পিপিই’র অভাবে ময়লা ফেলার পলিথিন, প্লাস্টিকের অ্যাপ্রোন ও স্কিইং করার চশমা পরে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন তারা।

যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই করোনাভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন এমন ব্যক্তির থেকে ২০ সেন্টিমিটারের মতো দূরত্বে থেকে কাজ করছেন ডাক্তাররা, যেখানে সাধারণ মানুষকে বলা হচ্ছে ২ মিটার হতে হবে ন্যূনতম দূরত্ব।

রবার্টস বলছেন, যে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে তাদের জীবনে সেটা এখনই ভাবাচ্ছে। তারা এখন এ নিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছেন এবং নিজেদের পিপিই নিজেরাই তৈরি করছেন।

রবাটর্স বলেন, ‘নিবিড় চিকিৎসা যেসব নার্স দিচ্ছেন তাদের এটা এখনই প্রয়োজন। তারা যেখানে কাজ করছেন সেখানে ভাইরাস অ্যারোসলের মতো করে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের বলা হচ্ছে খুব সাধারণ টুপি পরতে যেটায় ছিদ্র আছে। যেটা কোনো সুরক্ষাই দিচ্ছে না।’

এটা প্রচণ্ড রকমের ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কর্মীরা বিনের ব্যাগ ও অ্যাপ্রোন পরে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।

যুক্তরাজ্যের সরকারও চিকিৎসা সরঞ্জাম বিতরণ নিয়ে যে ঝামেলা হচ্ছে সেটা স্বীকার করেছেন। এখন এই কাজের সাথে যুক্ত হয়েছে সশস্ত্র বাহিনি। তারা সরঞ্জাম জায়গা মতো পৌঁছতে কাজ করে যাচ্ছেন।

পহেলা এপ্রিল ১০ লাখ শ্বাসযন্ত্র রক্ষাকারী মাস্ক দিয়েছে বলে জানিয়েছে এনএইচএস, যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা। তবে সেখানে মাথার সুরক্ষা ও গাউনের কথা বলা হয়নি।

রবার্টস যেখানে কাজ করছেন সেই হাসপাতালে কোনো সরকারি সামগ্রী পৌঁছায়নি বলছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এখন আমরা যে মাস্ক দিয়ে কাজ করছি সেটাতে নতুন করে তারিখ বসানো হয়েছে। আমি তিনটি স্টিকার দেখেছি যেখানে লেখা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ ২০০৯, ২০১৩ ও একটিতে ২০২১।’

ইংল্যান্ডের পাবলিক হেলথ বলছে যেগুলোতে মেয়াদের তারিখ শেষ হয়ে গেছে সেগুলো তারা পরীক্ষা করে দেখেছে, সেগুলো ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু এ বিষয়ে আশ্বস্ত হতে পারছেন না বিবিসির সঙ্গে কথা বলা সেই চিকিৎসক।

এই মুহূর্তে রবার্টসের তিনজন সহকর্মী ভেন্টিলেশনে আছেন যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের একজন কোভিড ওয়ার্ডে কাজ করতেন। বাকি দুজন কোভিড ওয়ার্ডে কাজ করতেন না তাই তাদের পিপিই ছিল না। রবার্টস মনে করছেন এই দুজনেরও কর্মক্ষেত্রেই সংক্রমণ হয়েছে।

ইউরোপের আরো যে দুটি দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে একটি স্পেন, যেখানে সরকারি হিসেবে গত ২৭ মার্চ পর্যন্ত ৯৪০০ স্বাস্থ্যকর্মীর করোনাভাইরাস পজিটিভ নিশ্চিত হয়েছে। ৩০ মার্চ পর্যন্ত ইতালিতে সংক্রমিত স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ছিল ৬৪১৪ জন।

আর যুক্তরাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছেন বলেও জানা গেছে।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত