ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

লকডাউন তুলে নিতে ট্রাম্পের নতুন রূপরেখা প্রণয়ন

লকডাউন তুলে নিতে ট্রাম্পের নতুন রূপরেখা প্রণয়ন

যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। গতকাল বৃহস্পতিবারও দেশটিতে মারা গেছে ২১৭৪ জন। আর এ অবস্থার মধ্যেই সামনের মাসগুলোতে অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নরদের লকডাউন তুলে নিয়ে অর্থনীতি পুনরায় চালু করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ।

‘ওপেনিং আপ আমেরিকা এগেইন’শীর্ষক ওই নির্দেশনায় তিনটি পর্যায়ের রূপরেখা তুলে ধরা রয়েছে যাতে রাজ্যগুলো ধীরে ধীরে তাদের লকডাউন শিথিল করতে পারে।

ট্রাম্প গভর্নরদের এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় এই প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করবেন। কিছু রাজ্য এই মাসেই তুলে নিতে পারে লকডাউন।

ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প যা বলেছেন

বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ‘আমাদের এই যুদ্ধের পরবর্তী পদক্ষেপ হলো আমেরিকা আবার খুলে দেয়া। আমেরিকা মুক্ত থাকতে চায় এবং আমেরিকানরাও মুক্ত থাকতে চান।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউন বা জাতীয় অবরোধ কোনও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়।’

তিনি নিজের পরিকল্পনার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেন, দীর্ঘায়িত লকডাউনের কারণে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি এসময় মাদকের অপব্যবহার, মদের অপব্যবহার, হৃদরোগ এবং অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক সমস্যা ‘অনেক বেড়ে যাওয়ার’বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, সুস্থ নাগরিকরা এমন পরিস্থিতিতে কাজে ফিরতে পারবেন।

তিনি বলেন, মার্কিন নাগরিকদের আহ্বান জানানো হবে, তারা যেন সামাজিক দূরত্বের বজায় রাখেন এবং অসুস্থ হলে বাড়িতে থাকেন।

মার্কিন অর্থনীতির পুনরায় চালু করার কাজ খুব সাবধানে ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হবে বলেও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যদিও তিনি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের লকডাউন তুলে নিতে ‘খুব তাড়াতাড়ি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

যদিও ট্রাম্পের এই নির্দেশনার সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দলীয় নেতারা। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ও শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্রেট নেতা ন্যান্সি পেলোসি তার নতুন নির্দেশিকাগুলোকে ‘অস্পষ্ট ও অসঙ্গত’বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, এসব নির্দেশনা বিজ্ঞানীদের পরামর্শ উপেক্ষা করার পাশাপাশি দেশজুড়ে দ্রুত করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা চালাতে প্রেসিডেন্ট যে ব্যর্থ হয়েছেন, সেটাকেই ফুটিয়ে তুলেছে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনায় যা যা আছে

প্রশাসনের ১৮ পৃষ্ঠার দিকনির্দেশনা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি পুনরায় চালু করার জন্য তিনটি পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপের বিবরণ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি পর্যায় কমপক্ষে, ১৪ দিন স্থায়ী হবে।

তিনটি ধাপে কিছু সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব, করোনাভাইরাসের পরীক্ষা এবং কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং অর্থাৎ আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে কেউ এসেছিলেন কিনা সেটা নিশ্চিত করা।

প্রথম পর্যায়ে, বর্তমান লকডাউন ব্যবস্থার কিছু কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন খুব প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়া এবং ভিড় না করা।

সেখানে বলা হয়েছে, রেস্তোঁরা, উপাসনালয় এবং খেলার মাঠের মতো বড় জায়গাগুলোতে ‘সামাজিক দূরত্ব’বজায় রাখার মাধ্যমে অর্থনীতি পরিচালিত হতে পারে।

করোনাভাইরাস পুনরায় দেখা দেয়ার কোনও আশঙ্কা না থাকলে নেয়া হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের পদক্ষেপগুলো। এসময় মার্কিন জনগণ পুনরায় ভ্রমণ শুরু করতে পারবেন।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে স্কুলগুলো খুলে দেয়া হতে পারে এবং বারগুলো সীমিত আকারে চালু হতে পারে।

তৃতীয় ধাপে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কর্মক্ষেত্রে মানুষের যোগাযোগ রাখার বিষয়টিকে অনুমোদন দেয়া হবে।

এছাড়া বয়স্কদের কেয়ার হোম এবং হাসপাতালগুলোয় দর্শনার্থীদের আসা পুনরায় শুরু করা হবে। পাশাপাশি পুরোপুরি চালু হতে পারে পানশালাগুলো।

এক মাসব্যাপী মূল্যায়নের পরে কয়েকটি অঞ্চল খুব শীঘ্রই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।

তবে যে জায়গাগুলিতে বেশি সংক্রমণ হয়েছে বা যেখানে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে, সেখানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।

হোয়াইট হাউজের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের কো-অর্ডিনেটর ড. ডেবোরাহ বার্কস বৃহস্পতিবারের ব্রিফিংয়ে বলেছেন, রাজ্যগুলো তিনটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে কাজ করেছে, তারা কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে তাদেরকে কাজে ফিরিয়ে নিতে পারবে।

তিনি বলেন, তৃতীয় ধাপেও মানুষকে কিছু পরামর্শ মেনে চলতে হবে, যেমন: অসুস্থ মানুষ যেন লোকজনের ভিড় এড়িয়ে চলে।

ট্রাম্প গভর্নরদের যা বলেছেন

লকডাউন শিথিল করার সময়সীমা এবং ব্যবসা পুনরায় চালু করা নিয়ে গভর্নরদের সাথে আলোচনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি এখন স্বীকার করেছেন যে তার এ ধরণের নির্দেশনা জারি করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ।

বৃহস্পতিবার এই আহ্বান জানানোর সময় ট্রাম্প গভর্নরদের বলেন: ‘আপনারা নিজেরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ আপনারাই আপনাদের রাজ্য পরিচালনা করবেন এবং আমরা আপনাকে সহায়তা করব।

এর আগে গত বুধবার হোয়াইট হাউজে করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের নেতা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৪% অঞ্চলে কোনও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক রাজ্যে এই ভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও কম।

ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে লকডাউন তুলে দেয়ার সম্ভাব্য তারিখ হিসাবে পহেলা মে'র কথা উল্লেখ করেছিল।

বুধবার ট্রাম্প বলেন, কয়েকটি রাজ্য এরও আগে লকডাউন শিথিল করতে পারে।

আর বুধবার রাতে হোয়াইট হাউস ভাইরাস টাস্কফোর্স সমন্বয়কারী ডঃ ডেবোরাহ বার্কস জানান, নয়টি রাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজারেরও কম এবং প্রতিদিন নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যাও কমছে। ফলে পহেলা মে নাগাদ এসব রাজ্য লকডাউন তুলে নিয়ে পুনরায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করবে।

ডঃ ডেবোরাহ বার্কস ওই নয়টি রাজ্যের নাম উল্লেখ না করলেও স্বল্প জনবহুল রাজ্যগুলোর কথা উল্লেখ করেন যেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কম। অঙ্গরাজ্যগুলো হচ্ছে-আটলান্টিক উপকূলীয় রাজ্য মেইন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র হাওয়াই, পূর্ব আমেরিকার ভার্মন্ট ও পশ্চিম ভার্জিনিয়া, দক্ষিণাঞ্চলের আরকানসাস, মধ্য-পশ্চিমের নেব্রাস্কা, উত্তরে ডাকোটা এবং পশ্চিমের মন্টানা ও ওয়াইয়োমিং।

তবে কিছু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং রাজ্য গভর্নর খুব শীঘ্রই অর্থনীতি আবার চালু করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

গত মঙ্গলবার সরকারের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অ্যান্টনি ফোসি এপি নিউজকে বলেছেন, পহেলা মে দেশের সব অঞ্চল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাড়াবাড়ি হতে পারে। কারণ সামাজিক দূরত্ব তুলে নেওয়ার আগে একটি শক্তিশালী পরীক্ষা ও ট্রেসিং ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।

তবে সব অঙ্গরাজ্য যে ট্রাম্পের এই নির্দেশ মানবে না তা স্পষ্ট। নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বৃহস্পতিবার বলেছেন, তার রাজ্যে আগামী ১৫ মে অবধি লকডাউন বা বাড়িতে থাকার নির্দেশনা বহাল থাকবে।

তবে মিশিগান, ওহাইও, উইসকনসিন, মিনেসোটা, ইলিনয়, ইন্ডিয়ানা এবং কেনটাকি রাজ্য প্রধানরা ঘোষণা করেছেন, তারা এই অঞ্চলগুলো পুনরায় চালু করার জন্য একসঙ্গে কাজ করবেন।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ছয় লাখ ৭৭ হাজার ৫৭০ জন এবং মারা গেছে আরো প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ।

কেরোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য হচ্ছে নিউইয়র্ক। সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১লাখ ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ। আর মৃতের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ৫৬ জন।

এদিকে নিউইয়র্কের পর উদ্বেগজনক অবস্থা নিউজার্সীতে। আক্রান্ত প্রায় ৬৪ হাজারের উপরে এবং মারা গেছেন ২ হাজার ৪৪৩ জন। অবনতি হয়েছে মিশিগানের করোনা পরিস্থিতি, এখানে মৃত্যু ১ হাজার ৬০২ জনের ওপরে এবং মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ হাজারের বেশি মানুষ।

সূত্র: বিবিসি বাংলা/ ওয়ার্ল্ডোমিটার/ভোয়া

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত