ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের লড়াইয়ে বাঙালি নারী সুমি

করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের লড়াইয়ে বাঙালি নারী সুমি
সুমি বিশ্বাস

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ ব্যাধী করোনাভাইরাস। এই রোগের না আছে কোনও ওষুধ, না কোন ভ্যকিসিন বা টিকা। তাই কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিশ্বের নানা প্রান্তের বিজ্ঞানীরা। এর ব্যতিক্রম নয় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও। এখানকার জেনার ইনস্টিটিউটের যে দলটি এই মারণ ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে ব্যস্ত, সেই দলের অন্যতম নাম সুমি বিশ্বাস। তিনি একজন বাঙালি। সুমি বিশ্বাস ও তার গবেষক দলটির দিকে এখন শুধু ব্রিটেন নয়, অধীর আগ্রহে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।

সুমির বাড়ি ভারতে। সেখানকার বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়ার পরে ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান সুমি। তারপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি পেরিয়েছেন।

সুমি প্রথমে ‘লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিন’-এ যোগ দেন। সেখানে ১১ মাস কাজ করার পর ক্লিনিক্যাল মেডিসিনে ডি-ফিল করতে ২০০৬ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।

এরপর ২০১৩ সালে জেনার ইনস্টিটিউটে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক নিয়ে কাজ শুরু করেন এই বাঙালি ইমিউনোলজিস্ট। তিন বছরের মাথায় এই প্রতিষ্ঠানেরই অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হন সুমি।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধীনে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, নাম স্পাইবায়োটেক। সেই প্রতিষ্ঠানের সহকারী কর্ণধার ও চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসার সুমি। তিনি মূলত ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক নিয়ে জেনার ইনস্টিটিউটে যে গবেষণা চলছে, সেই দলের নেতৃত্বেও রয়েছেন সুমি। মানবদেহে ট্রায়াল চালানোর প্রথম পর্যায়ে রয়েছে সুমিদের বানানো প্রতিষেধক।

এই বাঙালি নারী এখন কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক নিয়ে যে দলে কাজ করছেন, সেখানে রয়েছেন মোট ১৫ জন বিজ্ঞানী। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন সারা গিলবার্ট। ওই দলে আরও আছেন আড্রিয়ান হিল এবং টেরেসা ল্যাম্বের মতো বিজ্ঞানীরাও।

লকডাউনের জন্য বেশির ভাগ বিজ্ঞানীরাই এখন বাড়ি থেকে কাজ করছেন। যাদের ল্যাবে যেতে হচ্ছে, তারাও যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করেছেন।

এ বছরের জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ শুরু করেছে গিলবার্টের দলটি। গত সপ্তাহে প্রতিষেধকটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই ট্রায়াল ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। এই প্রচেষ্টায় আশি শতাংশ সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আগেই জানিয়েছিলেন গবেষক দলের প্রধান গিলবার্ট।

আপাতত গোটা বিশ্বে করোনার প্রতিষেধক তৈরির জন্য ১০০টিরও বেশি প্রকল্পে কাজ চলছে। জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে গেলে এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার এখন সব চেয়ে জরুরি।

যে ক’টি প্রকল্পে কাজ চলছে, তার মধ্যে সাতটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিন। লন্ডন ইম্পিরিয়াল কলেজও একটি প্রতিষেধক বানানোর চেষ্টা করছে, যার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হওয়ার কথা জুন মাসের মধ্যেই।

তবে এদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে গিলবার্ট তথা বাঙালি নারী সুমির গবেষক দলটি। তাদের প্রচেষ্টা সফল হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের সাফল্য পাবে বিশ্ব।

প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্ব জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ পার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ২ হাজার ৩০৩ জনে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ১০১ জনের। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৩ জন।

সূত্র: আনন্দবাজার

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত