ভারত–পাকিস্তানের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে ভারতে প্রায় ৬০ হাজারের মতো করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। পাকিস্তানে এই সংখ্যা য় ২৮ হাজার।
অথচ করোনা মহামারি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার গোড়ার দিকে কিন্তু দেশ দুটির অবস্থা বেশ ভালোই ছিল। একই সঙ্গে বাংলাদেশের কথাও উল্লেখ করতে হয়। দেশে করোনা পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে, বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই ৫-৭শ করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটার ওয়েবসাইটের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪০ লাখ ১৪ হাজার ৫শ। এর মধ্যে মারা গেছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৫৩ জন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ১৪ লাখ মানুষ।
বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত সাত দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ৪৬ জন। এদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশেই করোনা রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৫১ জন। এই অঞ্চলে সবচাইতে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভুটান। দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৭ জন। এদের মধ্যে পাঁচজনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে দেশটিতে বর্তমানে মোট রোগীর সংখ্যা মাত্র দুইজন।
অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার অর্ধেকের বেশিই করোনা রোগীর অবস্থান ভুটানের সীমান্তবর্তী ভারতে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যমতে, দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৫৯ হাজার ৭৫৬ জন। এদের মধ্যে শুক্রবার একদিনেই আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩৪৪ জন। ফলে বিশ্বের করোনা দেশগুলোর তালিকায় ভারতের অবস্থান এখন ১৪তম।
এক সপ্তাহ আগেও দেশটিতে দৈনিক রোগী শনাক্ত হচ্ছিল এক থেকে দেড় হাজার করে। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম ছয় দিনে তা আড়াই থেকে তিন হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আজ শনিবার সকালেই শনাক্ত হয়েছে ৭০ জনের বেশি রোগী।
ভারতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৯৪৬ জন। এর মধ্যে শুক্রবারই মারা গেছে ৯৬ জন।
ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যু সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। এখানে রোগী শনাক্ত হয়েছেন সাড়ে ১৬ হাজারের বেশি। মৃত্যু হয়েছে ৬৫১ জনের। এই রাজ্যের পর সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এলাকা গুজরাটে। সেখানে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন সাড়ে ৬ হাজারের বেশি। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। মারা গেছেন ১৪৪ জন।
ভারতে করোনা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যেই দেশটিতে ধীরে ধীরে বিধিনিষেধ শিথিল করা হচ্ছে। যদিও লকডাউনের মেয়াদ ১৭ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মার্চের শেষ দিক থেকে এই লকডাউন চলছে ভারতে।
পাকিস্তানে করোনা রোগীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৪৭৪ জন। আর মারা গেছে মোট ৬১৮ জন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় প্রতিদিনই আগের দিনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার মাত্র একদিনেই নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৯১ জন। ওইদিন মারা গেছে ১৪ জন।
এ অবস্থার মধ্যেও লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি শনিবার থেকে ধাপে ধাপে লকডাউন শিথিল করা হবে বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে এ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৬ জন। এদের মধ্যে শুক্রবারই সংক্রমিত হয়েছে ৭০৯ জন এবং মারা গেছেন সাতজন। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ১০১ জন। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের প্রবণতা রাজধানী ঢাকাতেই বেশি বলে জানা গেছে।
করোনা ঠেকাতে ইতিমধ্যে কয়েকদফা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার যা শেষ হচ্ছে চলতি মাসের ১৬ তারিখে। ইতিমধ্যেই দেশের মার্কেটগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং শুক্রবার থেকে মসজিদে নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এরও আগে খুলে দেয়া হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পোশাক কারখানাগুলো। দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক দুরবস্থার কারণে সরকার অনেকটা নিরূপায় হয়েই এইসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানা যায়।
এমএ/