ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

ট্রাম্পের ভাষণে মার্কিনীরা হতাশ, সমালোচনা তুঙ্গে

ট্রাম্পের ভাষণে মার্কিনীরা হতাশ, সমালোচনা তুঙ্গে

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ৮ দিন পরও থামেনি বিক্ষোভ। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে দেশের ৪০টিরও বেশি শহরে জারি করা কারফিউর মধ্যেও বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে মানুষ। বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের হুমকি দিয়ে ভাষণ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ভাষণে ক্ষুব্ধ ও হতাশা প্রকাশ করেছে মার্কিন নাগরিকরা।

মিনেসোটায় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে ঘিরে যুক্তরাস্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য ও শহরে শুরু হওয়া প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও সহিংসতা বন্ধে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সহিংসতা থামাতে যেসব শহর ও রাজ্য প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানাবে সেসব স্থানে দরকার হলে সেনা নিয়োগ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রা্ম্প। সোমবার এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে হোয়াইট হাউজ থেকে এ ঘোষণা দেন তিনি।

ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, প্রেসিডেন্টের ভাষণ শুনে হোয়াইট হাউজের আশেপাশে শান্তিপূর্ন প্রতিবাদে থাকা লোকজন অবাক হন। কেননা তিনি বলছিলেন, বিক্ষোভকারীরা সহিংস হয়ে উঠছে, আইন ভঙ্গ করছে। অথচ হোয়াইট হাউজের সামনে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিল লোকজন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আজ থেকে প্রতিটি রাজ্য গভর্ণরকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের পরামর্শ দিচ্ছি যেনো তারা রাজপথ দখলে রাতে পারেন। সহিংসতা না থামা পর্যন্ত শহরগুলোর মেয়র ও রাজ্য গভর্ণররা যেনো আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যদেরকে মোতায়েন করে রাখেন। অধিবাসীদের জান মাল রক্ষায় কোনো শহর বা রাজ্য প্রশাসন তা না করতে চাইলে আমি সেসব স্থানে সেনা মোতায়েন করবো।’

প্রেসিডেন্টের ভাষণের সময়ও হোয়াইট হাউজের আশেপাশে ফ্লয়েডের হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ চলছিল। এসময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে।

সেনা মোতায়েনের হুমকি দিলেও প্রেসিডেন্ট Insurrection Act বা বিদ্রোহ আইন বলবৎ করেন নি। তবে হোয়াইট হাউজ প্রেস সেক্রেটারি বলেন, প্রেসিডেন্টের চিন্তায় তা রয়েছে।

১৮০৭ ধারা অনুযায়ী রাজ্য গভর্ণরদের অনুরোধ ছাড়াই যে কোনো রাজ্যে প্রেসিডেন্টের সেনা মোতায়েনের ক্ষমতা রয়েছে।

২৫শে মে মিনেসোটায় জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার ঘটনায় মার্কিন নাগরিকরা আশা করছিলেন প্রেসিডেন্ট কিছু একটা সমাধান দেবেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দেয়ার মধ্যেই নিজের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখেন।

যদিও প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে ফ্লয়েডের হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে বর্ণবাদ বা পুলিশি অভিযান নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।

এদিকে সোমবারের ওই ভাষণের পর প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ উস্কে দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই। নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকা আবস্থায় কেউ যদি উস্কানীমূলক কথা বলেন, তা ফিরে যায় তার কাছেই। প্রেসিডেন্টের যে কোনো বক্তব্যই গুরুত্ব বহণ করে।’

জো বাইডেনের সমালোচনার জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটারে বলেছেন ডেমোক্রেটরা বামপন্থী র‍্যাডিক্যালদের সমর্থনে সহিংসতা উস্কে দিচ্ছেন।

জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে ঘিরে সোমবার যুক্তরাস্ট্রের সবগুলো বড় শহরেই বিক্ষোভ হয়। মিসৌরীর সেন্ট লুইসে বিক্ষোভকারীরা সহিংস হলে এক পর্যায়ে চারজন পুলিশ অফিসার গুলিবিদ্ধ হন। সেন্ট লুইসের পুলিশ প্রধান জন হাইডেন বলেন চারজন অফিসার পায়ে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হন। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে সকলেই আশংকামুক্ত।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের তথ্য অনুয়ায়ী প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটনের জন্য এক ব্যাটালিয়ন মিলিটারি পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজধানীতে ১২০০ ন্যা্শনাল গার্ড সদস্য মজুদ রাখা হয়েছে এবং ৫টি রাজ্যে ৬০০ থেকে ৮০০ অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রায় অর্ধেক রাজ্য গভর্ণর ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছে।

সোমবার রাতে সেনা ইউনিট ব্ল্যাক হক-হেলিকপ্টারকে ওয়াশিংটনের আকাশে প্রহরা দিতে দেখা গেছে। সাড়ে তিন বছর আগে দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রথম প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার শক্ত প্রয়োগের পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রেসিডেন্টের ভাষনের পর পরই সিএনএনে এক সাক্ষাতকারে বিশ্লেষক ডন লেমন বলেন, ‘মনে হচ্ছে খানিকটা স্বৈরতন্ত্রের দিকে হাঁটছি আমরা। আমার ধারণা প্রেসিডেন্ট বিপদজনক খেলা খেলছেন।’

তবে প্রেসিডেন্ট টাম্প বরাবরই সিএনএন এর দিকে ফেইক নিউজ বলে অঙ্গুলি নির্দেশ করে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের গণমা্ধ্যম সম্পর্কে প্রায়শই তিনি বলেন, ‘জনগনের শত্রু’।

এদিকে সোমবার সকালের দিকে রাজ্য গভর্ণরদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাদেরকে সহিংসতা থামাতে কঠোর হবার নির্দেশ দেন। অডিও কলের তথ্য অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট রাজ্য গভর্ণরদেরকে বলেন, ‘আপনারা বেশিরভাগই দুর্বল, আপনাদেরকে প্রভাব খাটাতে হবে। যদি তা না পারেন তবে তারা আপনার মাথার ওপরে চড়বে।’

প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য নিয়েও নানা ধরনের সমালোচনা চলছে।

সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত