ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

উইঘুর মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যা করছে চীন

উইঘুর মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যা করছে চীন

উইঘুর মুসলিমদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে তাদের নারীদের দেহে জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র বাসনো বা বন্ধ্যাকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে চীন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।

চীনা গবেষক আদ্রিয়ান জেনজের লেখা রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর এই ঘটনার তদন্ত করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক নানা মহল।

তবে এই রিপোর্টের দাবিগুলোকে 'ভিত্তিহীন' বলে প্রত্যাখ্যান করেছে চীন।

উইঘুরদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই চীনের সমালোচনা হচ্ছে। চীনের প্রায় ১০ লাখ উইঘুর ও অন্যান্য জাতির মুসলিম সংখ্যালঘুদের‘নতুন শিক্ষা’দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

শুরুতে চীন এসব ক্যাম্পের অস্তিত্ব অস্বীকার করলেও পরে তারা দাবি করেছে, সন্ত্রাসবাদ দমনের লক্ষ্যে এই ধরনের ক্যাম্প পরিচালনা করা জরুরি পদক্ষেপ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উইগরদের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপের কারণে তুমুল সমালোচনার মুখে পরে চীন।

২০১৯ সালে বিবিসি'র করা এক তদন্তে উঠে আসে যে জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিম শিশুদের তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে, যাতে তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্ম ও সংস্কৃতি থেকে আলাদা হয়ে বড় হয়।

কী উঠে এসেছে রিপোর্টে?

ওই অঞ্চলের আনুষ্ঠানিক তথ্য, আইনি কাগজপত্র এবং জিনজিয়াংয়ের নৃতাত্বিকভাবে সংখ্যালঘু নারীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় আদ্রিয়ান জেনজের রিপোর্টটি।

রিপোর্টে অভিযোগ করে বলঅ হয়েছে, সরকারি নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যায় সন্তান জন্ম দেয়ায় উইগার ও অন্যান্য সংখ্যালঘু নারীদের ক্যাম্পে বন্দি করে রাখার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

রিপোর্টে আরে দাবি করা হয়, যেসব নারী দুটির চেয়ে কম সন্তান জন্ম দিতে আইনিভাবে বৈধ, তাদের জরায়ুতে আইইউডি প্রবেশ করানো হচ্ছে এবং অন্যদের বন্ধ্যা করানোর উদ্দেশ্যে জোর করে সার্জারি করানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, আইইউডি হচ্ছে ইন্ট্রা-ইউটেরিন ডিভাইস - যেটি সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য নারীদের গর্ভধারণ থেকে বিরত রাখে।

জেনজের বিশ্লেষণ অনুযায়ী জিনজিয়াংয়ের জনসংখ্যার স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির হারে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সংবাদ সংস্থা এপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনজ বলেন, জনসংখ্যার বৃদ্ধিতে এই ধরণের পতন অভূতপূর্ব, এখানে নির্মম একটা বিষয় রয়েছে। এটি উইঘুরদের বশে আনার জন্য বিস্তৃত একটি পরিকল্পনার অংশ।

জিনজিয়াংয়ের বন্দি শিবিরে থাকা সাবেক সদস্যদের বক্তব্যে উঠে আসে যে, সেখানে থাকা নারীদের গর্ভ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে তাদের মাসিক বন্ধ করতে বিভিন্ন রকম ওষুধ প্রয়োগ করা হতো তাদের ওপর।

রিপোর্টে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে দেখলে মনে হয়, তিন বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক সন্তান আছে যেসব নারীর, তাদের ঢালাওভাবে বন্ধ্যা করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

জেনজের রিপোর্টে জিনজিয়াংয়ে জোরপূর্বক জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে উইঘুরদের ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে জনতাত্বিক ক্যাম্পেইন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

চীনের গোপন ক্যাম্প

সোমবার প্রকাশিত হওয়া অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী জিনজিয়াংয়ের নারীরা আইনিভাবে বৈধ সংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যায় সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে বড় অঙ্কের জরিমানা ও ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে পড়ছে।

এপি'র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে জন্ম নেয়া কাজাখ নারী গুলনার ওমিরজাখ তার তৃতীয় সন্তান জন্ম দেয়ার পর তার জরায়ুতে আইইউডি প্রবেশ করাতে নির্দেশ দেয়া হয়। দুই বছর পর, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে, সেনাবাহিনীর ছদ্মবেশে চারজন কর্মকর্তা তিনদিনের মধ্যে ১৭,৫০০ আরএমবি (২ হাজার পাউন্ড) জরিমানা দিতে নির্দেশ দেয় ওমিরজাখকে।

দুটির বেশি সন্তান থাকাকে ওমিরজাখের অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে তারা।

কর্তৃপক্ষের হেফাজতে থাকা সবজি বিক্রেতার কপর্দকহীন স্ত্রী ওমিরজাখকে হুমকি দেয়া হয়, জরিমানার টাকা না দিলে তাকেও তার স্বামীর মত বন্দি শিবিরে নেয়া হবে।

তবে সোমবার প্রকাশিত হওয়া রিপোর্টের দাবিগুলোকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় 'ভিত্তিহীন' বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

চীনের এক সন্তান নীতি অনুযায়ী কয়েক দশক ধরে শহরে থাকা সংখ্যালঘুদের সর্বোচ্চ দু'টি সন্তান জন্ম দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে, যেখানে গ্রামে বাস করা সংখ্যালঘুদের জন্য এই সংখ্যা ছিল তিনটি।

২০১৭ সালে শি জিনপিংয়ের অধীনে হওয়া নীতিগত পরিবর্তনে জাতিগত প্রভেদটি বাদ দেয়া হয় এবং হান বংশোদ্ভূত চীনাদের সংখ্যালঘুদের সমান সংখ্যক সন্তান নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত