ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

কমলা হ্যারিসের বাবা কে?

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২০, ২২:০৭

কমলা হ্যারিসের বাবা কে?
কমলা হ্যারিস ও তার বাবা অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক ডনাল্ড হ্যারিস। ছবি: সংগৃহীত

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনের তৃতীয় রাতে দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণ করার সময় পরিবারের সদস্যদের প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানালেও সিনেটর কমলা হ্যারিসের বক্তৃতায় তার বাবা ডনাল্ড হ্যারিস সামান্যই জায়গা পেয়েছিলেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত ও প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কোনো দল থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করা কমলা ধীরে ধীরে পাদপ্রদীপের আলোয় জায়গা করে নিয়েছেন; এ দীর্ঘ সময়ে মেয়েকে নিয়ে ডোনাল্ডের মুখ থেকেও তেমন কিছুই বের হয়নি।

শিক্ষকতা থেকে অনেক আগেই অবসর নেয়া ৮১ বছর বয়সী এ অর্থনীতিবিদকে অবশ্য সম্প্রতি তার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির পরিচালিত জ্যামাইকান এক ওয়েবসাইটে মেয়েকে নিয়ে মন্তব্য করতে দেখা গেছে। সেখানে তিনি কমলাকে নিয়ে তার গর্বের কথা বলেছেন, বলেছেন ছাড়াছাড়ির কারণে সৃষ্টি হওয়া তিক্ততার কথা।

এক সাক্ষাৎকারে কমলা রসিকতা করে বলেছিলেন, জ্যামাইকান পরিবারে বেড়ে ওঠায় তার গাঁজা খাওয়া ছিল খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। মেয়েকে লেখা এক চিঠিতে ডনাল্ড ওই রসিকতা নিয়ে বকাঝকাও করেছিলেন। পরে অবশ্য ওই সাইট থেকে চিঠিটি সরিয়ে নেয়া হয়। নিবন্ধটি নিয়ে পরে ডনাল্ডের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ডামাডোলে দৃশ্যত তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলও কমলার বাবা অখ্যাত ব্যক্তি নন মোটেই।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষক ডনাল্ড ছিলেন মূলধারার পুঁজিবাদী অর্থনীতির তত্ত্বগুলোর কট্টর সমালোচক।

১৯৭৬ সালে স্ট্যানফোর্ড ডেইলির এক প্রতিবেদনে তাকে ‘মার্ক্সিস্ট পণ্ডিত’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের ‘নিও ক্লাসিকাল অর্থনীতির ধ্যানধারণা থেকে সরিয়ে দিতে পারেন’ এ চিন্তায় অনেকে তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে আপত্তিও জানিয়েছিল বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।

তার কাজ ‘কম মজুরি কর্মসংস্থানের হার বাড়াবে’ কিংবা ‘কম সুদে বিনিয়োগ বাড়বে’- প্রবৃদ্ধির এ ধরনের সনাতনী অনুমানকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্ট্যানফোর্ডে ডনাল্ডের কাছে পড়া রবার্ট এ ব্লিকার।

‘তিনি (ডনাল্ড) ছিলেন তুখোড় বক্তা; তার ক্ষেত্রে একসময় তিনি ছিলেন সুপরিচিত। তিনি চুপচাপ নন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে কাভানহ’র মনোনয়ন শুনানির সময় কমলা যখন তাকে একটার পর একটা প্রশ্নে ঘায়েল করছিলেন, আমি যেন কোনো সেমিনারে ডনাল্ড কাউকে ঘায়েল করছেন, তারই পুনরাবৃত্তি দেখলাম,’ বলেছেন আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ব্লিকার।

জ্যামাইকার উত্তর উপকূলের এক জোতদার পরিবারে বাবার দিককার এক দাদীর কাছে বেড়ে ওঠা ডনাল্ড যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন ১৯৬১ সালে। এখানেই তার পরিচয় হয় সমবয়সী ভারতীয় শিক্ষার্থী শ্যামলা গোপালানের সঙ্গে। কমলার ভাষ্যমতে, ‘বার্কলেতে নাগরিক অধিকার আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান তারা।’

পরে ডনাল্ড ও শ্যামলার ঘর আলো করে আসেন কমলা ও মায়া। দুই মেয়ে যখন খুবই ছোট, তখন ডনাল্ডের ডাক পড়ছে ইলিনয় এবং উইসকনসিনের একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে; তার চাকরির সুবাদে পুরো পরিবারকেও ছুটতে হচ্ছে নিত্য নতুন জায়গায়।

১৯৬৯ সালে ডনাল্ড-শ্যামলা যখন আলাদা হন, তখন কমলার বয়স ৫। তারও দুই বছর পর বাবা-মা’র আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ হয়।

২০১৮ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক ‘দ্য ট্রুথস উই হোল্ড’ বইতে কমলা লিখেছেন, ‘তারা (বাবা-মা) যদি আরেকটু বেশি বয়সী হতো, আবেগ যদি আরেকটু পরিপক্ক থাকতো, তাহলে হয়তো বিয়েটা টিকে যেত। কিন্তু তারা ছিল খুবই কম বয়সী। আমার বাবা ছিলেন আমার মায়ের প্রথম বয়ফ্রেন্ড।’

বিচ্ছেদের পর ডনাল্ড-শ্যামলা সম্পর্ক তিক্ততায় পর্যবসিত হয়। কমলা জানান, তিনি তার স্কুল সমাপনী অনুষ্ঠানে বাবা-মাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। যদিও আমি জানতাম যে তারা একে অপরের সঙ্গে কথাও বলবে না। প্রথমে এও ভয় পেয়েছিলাম যে, বাবাকে নিমন্ত্রণ করায় মা বোধহয় আসবেই না।

যদিও তার মা ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন; পরনে ছিল উজ্জ্বল লাল রংয়ের পোশাক আর হিল, লিখেছেন কমলা।

বিচ্ছেদ নিয়ে আদালত যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, সেটি ছিল ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ভুল মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে। যেখানে বলা হয়েছিল- বাবা সন্তানদের দেখভাল করতে পারবেন না। বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে, যেখানে (মার্কিনিদের বদ্ধমূল ধারণা অনুযায়ী) বাবা ‘এ নিগ্রো ফ্রম দ্য আইলান্স’, যে সকালের নাস্তায় সন্তানদের খেয়ে ফেলতে পারে। তবুও আমি জেদ ধরে রেখেছিলাম; কখনোই সন্তানদের প্রতি ভালোবাসার কমতি ছিল না আমার, বলেছিলেন ডনাল্ড।

পারিবারিক এ জটিলতা অবশ্য তার পেশাদারি উত্থানে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি; ডনাল্ড প্রথমে ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন, পরে যোগ দেন স্ট্যানফোর্ডে।

১৯৭৮ সালে প্রকাশিত ‘ক্যাপিটাল অ্যাকুমুলেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ বইটি ডনাল্ড তার দুই মেয়ে ‘কমলা ও মায়া’কে উৎসর্গ করেন। সূত্র: বিডি নিউজ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত