ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

করোনা ভাইরাস

স্কুলের ক্লাসরুমগুলো এখন মুরগীর খামার

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২০, ১১:৪৭

স্কুলের ক্লাসরুমগুলো এখন মুরগীর খামার

করোনাভাইরাসের কারণে কেনিয়ায় আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর ফলে বেসরকারি অনেক স্কুলের টিকে থাকা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে।

মুয়ে ব্রেথ্রেন স্কুলের ক্লাসরুমগুলো এক সময় শিক্ষার্থীদের পড়ার শব্দে গমগম করলেও এখন সেখানে শুধু মুরগীর ডাক ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না।

জোসেফ মাইনা যিনি কিনা সেন্ট্রাল কেনিয়ান স্কুলের মালিক, তিনি তার স্কুলের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এটিকে মুরগীর খামারে পরিণত করতে বাধ্য হয়েছেন।

তথ্য মতে, মার্চে যখন সব স্কুল বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ আসলো ঠিক তখন থেকে জোসেফ মাইনাকে কঠিন সময়ে মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি তখন একটি ঋণ শোধ করছিলেন এবং এর কারণে ব্যাংকের সাথে তাকে পুনরায় সমঝোতা করতে হয়। প্রথমে মনে হয়েছিল যে সব কিছু হারিয়ে গেছে, কিন্তু পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে টিকে থাকার জন্য আমাদেরকে কিছু করতে হবে।

বেসরকারি স্কুলগুলো যা কেনিয়ার প্রায় এক পঞ্চমাংশ শিশুদের শিক্ষা দিয়ে থাকে তাদের আয়ের মূল উৎস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বেতন। এসব ক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে তারা কর্মকর্তাদের বেতন দিতে পারবে না এবং মারাত্মক ধরণের অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে।

কেনিয়ার প্রাইভেট স্কুল অ্যাসোসিয়েশন-কেপিএসএ বলছে, অনলাইন শিক্ষণের মাধ্যমে হাতে গোনা কয়েকটি স্কুল তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতে তারা যে আয় করছে তা শিক্ষকদের মৌলিক চাহিদা পূরণেও পর্যাপ্ত নয়।

সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী পিটার নডরো বলেন, তিন লাখের মতো স্কুলের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ স্কুলের শিক্ষকদেরকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর সাথে ১৩৩টি স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

খারাপ অবস্থা থেকে বাঁচতে রোকা প্রিপারেটরি নামে মধ্য কেনিয়ার একটি বেসরকারি স্কুল নিজেদের খেলার মাঠকে খামারে পরিণত করেছে।

স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা জেমস কুংগু বলছেন, এর আগে কখনো এতো খারাপ অবস্থা তৈরি হয়নি।

আগে যেখানে খেলার মাঠ ছিল সেখানে এখন সবজি বড় হচ্ছে। তিনি মুরগীও পালছেন।

জেমস কুংগু জানান, আমার অবস্থা অন্য স্কুলগুলোর মতোই। আমার গাড়িতে জ্বালানি ভরার মতো সামর্থ্য নেই। এখানে এখন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কেউ-ই নেই। মানসিকভাবে আমরা অনেক ভেঙ্গে পড়েছি।

তিনি বলেন, এটা ধনীদের জন্য নয়। তবে আমরা মানিয়ে নিয়েছি... অন্তত আপনি বিরক্ত হবেন না, আপনি ব্যস্ত থাকবেন আর এটাই থেরাপি হিসেবে কাজ করে।

এদিকে দুটি স্কুল যেখানে আয়ের বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছে সেখানে মালিকরা শঙ্কায় রয়েছেন তাদের শিক্ষকদের নিয়ে যারা ৫ মাসের বিনা বেতনে ছুটিতে গেছেন।

সরকারি স্কুলের কর্মকর্তাদের তুলনায় এই পরিস্থিতি ভিন্ন, কারণ তারা বেতন পায়।

জোসেফ মাইনা বলেন, তাকে তার স্কুলের অনেক শিক্ষক ফোন করে জানতে চেয়েছেন যে তারা কোন কাজে আসতে পারেন কিনা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের নিজেদের খাওয়ার মতোই পর্যাপ্ত খাবার নেই। এর কারণে অনেকেই বিকল্প পেশা খুঁজে নিয়েছেন।

ম্যাকরিন ওটিয়েনো যিনি নাইরোবিতে একটি বেসরকারি স্কুলে ছয় বছর ধরে শিক্ষকতা করেছেন, বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

আশ্রয় এবং খাবারের জন্য তিনি একটি বাড়িতে শিশু লালন-পালনের চাকরি নিয়েছেন।

ম্যাকরিন ওটিয়েনো বলছেন, যখন থেকে কেনিয়াতে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যায়, তখন থেকে আমার করার মতো কিছু ছিল না। আমি আমার সন্তানদের জন্য কিছু একটা করার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু এটা সহজ ছিল না। সূত্র: বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • পঠিত