বাবরি মসজিদের ইতিহাস ও রায়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:০০
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল ভারতের উত্তরাঞ্চলের শহর অযোধ্যায়। ধর্মীয়ভাবে পবিত্র হিসেবে বিবেচিত এই অঞ্চলে বহুবছর ধরেই হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
এ ঘটনার আগের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। উনবিংশ শতকের ব্রিটিশ নথিতে অবশ্য অযোধ্যায় ওই বিতর্কিত জমিতে দুই সম্প্রদায়ের ধর্মাচরণ সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। ১৮৫৭ সালের শেষ পর্বে সিপাহী বিদ্রোহ দমনের পর বিতর্কিত জমিকে দু’টি অংশে ভাগ করে লোহার বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয় ব্রিটিশ সরকার। ভেতরের অংশ মুসলিমদের এবং বাইরের অংশ হিন্দুদের ধর্মাচরণের জন্য নির্ধারিত হয়। ১৮৭৭ সালে বিতর্কিত জমির অন্দরে অবস্থিত ‘রাম চবুতরা’য় হিন্দু পুণ্যার্থীদের প্রবেশের জন্য তৈরি হয় পৃথক পথ। উত্তর দিকে সীতা কি রসুই হয়ে।
১৯৩৪ সালের মার্চে গো-হত্যার অভিযোগ কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বাবরি মসজিদের কাঠামো। সে সময় মসজিদ মেরামতের জন্য হিন্দুদের থেকে জরিমানা আদায় করে ব্রিটিশ প্রশাসন।
এরই মধ্যে বিতর্কিত জমি ও মসজিদের মালিকানা নিয়ে শিয়া এবং সুন্নিদের মতবিরোধ গড়ায় আদালতে। ১৯৪৬ সালে ফৈজাবাদ জেলা আদালতের বিচারক এস এ এহসান রায় দেন, ‘সম্রাট বাবর সুন্নি ছিলেন। তাই জমি সুন্নিদের প্রাপ্য।’ যদিও মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মীর বাকি ছিলেন শিয়া।
১৯৪৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিতর্কিত কাঠামোসহ জমির রিসিভার নিযুক্ত হন স্থানীয় মিউনিসিপ্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রিয় দত্ত রাম। ফৈজাবাদের অ্যাডিশনাল সিটি ম্যাজিস্ট্রেট মার্কণ্ডেয় সিংহ এ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশ জারি করলেন। ওই ঘটনার দু’সপ্তাহ পর বিতর্কিত কাঠামোয় অধিষ্ঠিত রামলালার পক্ষে মামলা দায়ের হয় ফৈজাবাদ আদালতে। আবেদনকারী গোপাল সিংহ বিশারদ নিজেকে রামলালার প্রতিনিধি হিসেবে দাবি জমির মালিকানা চান।
এরই মধ্যে ১৯৮৯ সালের ১ জুলাই বিতর্কিত জমিতে রামলালার মন্দির স্থাপনের আবেদন জানিয়ে ফের একটি মামলা দায়ের হয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সহ-সভাপতি দেবকীনন্দন আগরওয়ালের আবেদনে সাড়া দিয়ে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চে শুনানির সিদ্ধান্ত হয়। এর দু’সপ্তাহের মধ্যে বিতর্কিত জমির অধিকার সংক্রান্ত সমস্ত মামলা স্থানান্তরিত হল ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে। ওই বছরের ১৪ অগস্ট বিতর্কিত জমিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয় ইলাহাবাদ হাইকোর্ট।
১৯৯২ সালের ২৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিয়ে করসেবার অনুমতি দেয়ার আবেদন জানায় কল্যাণ সরকার। বাবরি মসজিদের নিরাপত্তার আশ্বাসও দেয়া হয়। বিতর্কিত এলাকার বাইরে করসেবার অনুমতি দেয় শীর্ষ আদালত। ৬ ডিসেম্বরের করসেবার ওপর নজরদারির জন্য পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু প্রশাসনের আশ্বাসে ফল মেলেনি। করসেবক ও রামভক্তরা ঢুকে গুঁড়িয়ে দেন বাবরি মসজিদ। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন ও পুলিশ মসজিদ রক্ষায় কোনও তৎপরতা দেখায়নি বলে অভিযোগ ওঠে।
২০১৭ সালের ৩০ মে লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতে আদভানী, জোশী, উমা-সহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়। কারণ মোট ৪৯ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৭ জনের ততদিনে মৃত্যু হয়েছে। এরপর ২০১৯ সালের ২০ জুলাই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র মামলায় আগামী ৯ মাসের মধ্যে রায় দেয়ার জন্য সিবিআই আদালতকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
ভারতে বাবরি মসজিদ মামলায় সব আসামিকে খালাস দিয়েছে লখনৌয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত। বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অযোধ্যার শতাব্দীপ্রাচীন বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রায় ২৮ বছর পরে এ রায় ঘোষণা করলো আদালত। আনন্দবাজার।
আরো পড়ুন: বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় সব আসামি খালাস
বাংলাদেশ জার্নাল/নকি