ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

পশ্চিমবঙ্গে চনমনে গেরুয়া শিবির

  ময়ুখ বসু, কলকাতা

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:০১

পশ্চিমবঙ্গে চনমনে গেরুয়া শিবির

ভারতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এক চালে পশ্চিমবাংলার মাটিতে রীতিমতো চনমনে হয়ে উঠলো গেরুয়া শিবির। একটা সময় পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড বলে পরিচিত থাকা মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদানের পর দীর্ঘ সময় পর মুকুল রায়কে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির পদ দিয়ে বিজেপি বুঝিয়ে দিলো তৃণমূলের ঘরে আগুন জ্বালানোর রাস্তাকেই বেছে নিতে শুরু করেছে তারা।

একইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের পুরনো বিজেপি নেতা রাহুল সিনহাকে পদ থেকে সরিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব জানান দিয়ে দিলো, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসে সক্রিয় ভূমিকা নিলে দলের পুরনোদের দূরে সরাতেও কুন্ঠাবোধ করবে না তারা। তবে গেরুয়া শিবিরের এই রাজনৈতিক খেলায় রাজ্যের অতিবড়ো পোড় খাওয়া রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অংক যেন অনেকটাই ওলটপালট হতে আরম্ভ করেছে। আসলে রাজনীতির বাঁধা অঙ্কের বাইরে বেরিয়ে বিজেপি যেভাবে গুগলি খেলছে তাতে ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পট যে কোনও মুহুর্তেই ওলট পালট হয়ে যেতে পারে। অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বিষয় এটাই যে, ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্যতম মুখ ত্বহা সিদ্দিকিকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গিয়। ফলে আশঙ্কার মেঘ শুধু ঈশান কোণ থেকেই নয়, যে কোনও সময় যে কোনও কোণ থেকেই ঘণীভূত হচ্ছে। অন্যদিকে, তৃণমূলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর গতিবিধি নিয়েও সন্দেহের তীর উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।

একটানা দীর্ঘ সময় ধরে তাকে তৃণমুলে সেই অর্থে সক্রিয় ভূমিকাতে দেখা যাচ্ছে না। সেইসঙ্গে শুভেন্দুর নিজের গড়ে ঘাসফুল শিবিরে একের পর এক ভাঙ্গন ধরে শক্তি বাড়াচ্ছে গেরুয়া শিবির। তারপর শুভেন্দুর নানা তাতপর্যপূর্ণ মন্তব্য ভ্রু কুঁচকে দিচ্ছে রাজনীতিবিদদের। কি করবেন শুভেন্দু? শুভেন্দুকে তাস করে বিজেপি কি ২০২১ সালের আগে নয়া চমক দিতে পারে? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। ২০২১ সালের নির্বাচন ঘিরে বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল কি হতে পারে। রাজনৈতিক মহল থেকে জনমানসে নানা প্রশ্ন উকি ঝুকি দিতে শুরু করেছে।

অনেকে মনে করছেন, বিজেপি বাংলা জয়ের লক্ষ্যে ২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার ক্ষেত্রে দিতে পারে বড়ো ধরনের চমক। এমনকি বাংলার বুকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদের চমকও আগামীতে থাকতে পারে গেরুয়া শিবিরের তরফে। সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘু কাউকে কি করা হতে পারে প্রজেক্ট? এমনকি আগামীতে বাংলার রাজ্যপাল নিয়োগের ক্ষেত্রেও কি আরও বড়ো চমক দিতে পারে বিজেপি? রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন নানা গুঞ্জন এখন শাখা প্রশাখা প্রসারিত করছে। তবে এতোকিছুর মধ্যে রাহুল সিনহার মতো রাজ্যের পুরনো একজন নেতাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিজেপি দলের অভ্যান্তরে অশান্তির বাতাবরন বাড়ালো না তো? সেই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে রাজনীতিকদের।

কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলো বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব? কেন রাহুলকে সরিয়ে মুকুল ঘনিষ্টদের জায়গা করে দেওয়া হলো? সাদা চোখে দেখতে গেলে হয়তো, মুকুলের হাত ধরে তৃণমূলের ঘর ভাঙ্গিয়ে রাজ্যের বিজেপির পায়ের তলার জমি শক্ত করাই তাদের মূল লক্ষ্য। কিন্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই অবশ্য অন্য ব্যাখ্যাও খুঁজছেন। রাহুল সিনহাকে দায়িত্ব থেকে সরানোয় মনে ক্ষোভ বা অভিমানে দল থেকে দূরত্ব বাড়াতে পারেন কতো শতাংশ মানুষ? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান, সেই শতাংশ টেনেটুনে ৮ থেকে ১০ শতাংশ সর্বোচ্চ হতে পারেন। অন্যদিকে মুকুলের হাত ধরে মুকুল ঘনিষ্ঠদের দলে জায়গা দিলে সেক্ষেত্রে বিজেপির শিবিরে কম করে হলেও ২০ শতাংশের উপর জনবল বৃদ্ধি পেতে পারে।

ফলে মুকুলেই লাভ বিজেপির। তবে রাহুল সিনহাকে পরবর্তীতে দলীয় গুরুত্বপূর্ন পদে নিয়োগ দিয়ে দলীয় অভিমানিদের অভিমান যে বিজেপি নেতৃত্ব ভাঙ্গাবেন না, এমনটা কিন্ত মনে না করার কোনও কারন নেই। কারন, রাহুল সিনহা রাজ্য বিজেপির অনেক পুরনো মুখ। ফলে রাহুল সিনহা যে ফের বিজেপির বড়ো জায়গায় ফিরে যাবেন না এমনটা মনে করার কোনও অবকাশ নেই। বিজেপির রাজনৈতিক চালে এটাও হতে পারে বড়ো চমক। আসলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছে যেন তেন প্রকারেণ ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শাসক শিবিরে বড়োসড়ো ধাক্কা দিতে। মুকুলের হাত ধরে গত লোকসভা নির্বাচনে যেটুকু ধাক্কা লেগেছে রাজ্যে তাতেই রাজ্যের শাসক শিবির টালমাটাল হয়ে গিয়েছে। গত লোক্সভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি একলাফে ২ টি থেকে ১৮ টি আসন দখল করে নিয়েছিলো।

এবারে সেখানে দাঁড়িয়ে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুকুল রায়কে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে এবং মুকুল ঘনিষ্ঠদের নেতৃত্বের উচ্চ মাত্রায় তুলে এনে পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে হয়তো ফটো ফিনিশ করার পরিকল্পনাই নিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। অন্তত তেমনটাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটা বড়ো অংশের অভিমত।

বাংলাদেশ জার্নাল/নকি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত