ঢাকা, রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

যিনি মৃত্যু পথযাত্রীদের শেষ ইচ্ছা পূরণ করেন

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২০, ০৬:২৬  
আপডেট :
 ১১ অক্টোবর ২০২০, ১৪:২৭

যিনি মৃত্যু পথযাত্রীদের শেষ ইচ্ছা পূরণ করেন

চাকরির সুবাদে প্রতিদিন সমুদ্রের পাশে, জাদুঘরে, চিড়িয়াখানায়, অ্যাকুয়েরিয়ামে, খেলার মাঠে, চার্চে আর ফুল বাগানে নিয়মিত যেতে হয় নেদারল্যান্ডের বাসিন্দা কিইস ভেলবোরকে।

গুরুতর অসুস্থ, যারা অন্যদের সহায়তা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না- এক বছরের বেশি সময় ধরে এমন রোগীদের মৃত্যুর পূর্বে তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী প্রিয় কোন স্থান দেখতে সহায়তা করেন ৬০ বছরের এই অ্যাম্বুলেন্স চালক।

কিইস ভেলবোর তার এরকম কয়েকটি শেষ ভ্রমণের কথা বিবিসির কাছে বর্ণনা করছিলেন।

ভেলবোর বিবিসিকে বলেন, যেসব ঘটনা তার বিশেষভাবে মনে আছে, তার একটি হচ্ছে রোমের ভ্যাটিকানের উদ্দেশ্যে দ্রুত যাত্রা। ২০১৩ সালের দিকে শয্যাশায়ী ৬০ বছরের একজন নারী তাকে বলেন, তিনি পোপের সঙ্গে দেখা করতে চান। পেপাল ওয়েবসাইট ঘেঁটে কিইস ভেলবোর দেখেন যে, কবে পোপ সাধারণ মানুষজনকে দেখা দেন। ওই রোগীর শেষ ইচ্ছা পূরণ করার একটি সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে রোগীকে নিয়ে ১৬০০ কিলোমিটার দূরের ভ্যাটিকানের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ভেলবোর।

ভ্যাটিকানে যাওয়ার পর দর্শনার্থী সারির সামনে একটি স্ট্রেচারে (সেন্ট পিটার ব্যাসিলিকার মুখোমুখি) তাকে রাখা হয়। সেখানে আরও কয়েকজন হুইল চেয়ারে বসে পোপের সাক্ষাতের প্রতীক্ষা করছিলেন, কিন্তু ওই নারী ছিলেন একমাত্র স্ট্রেচারে শোয়া। ভেলবোর যেমনটা ধারণা করছিলেন, তিনি পোপের দৃষ্টিতে পড়েন। তখন পোপ নিচে নেমে আসেন, তার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি এমনকি তাকে স্পর্শ করেন এবং তার হাত খানিকক্ষণ ধরে রাখেন।

ভেলবোর বিবিসিকে বলেন, পোপ তাকে আশীর্বাদ করেন এবং তার রোগমুক্তি কাটিয়ে ওঠার প্রার্থনা করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি যেন ভালো থাকেন, সেই কামনাও করেন।

পোপের সঙ্গে দেখা করার কয়েকদিন পরেই ওই নারীর মৃত্যু হয়।

২০০৯ সালে তিনি একজন মরীয়া যুবকের টেলিফোন পান, যিনি তার মেয়েবন্ধুকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে চাইছিলেন।

তিনি বলেন, মেয়েটি ক্যান্সারে মারা যাচ্ছিল। তার ছেলে বন্ধু চাইছিলেন যে, তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে এসে তার নতুন ফ্ল্যাট দেখাতে । এই ফ্ল্যাটটি মেয়েটি তখনো দেখেননি।

চিকিৎসকদের অনুমতি পাওয়ার পর মেয়েটিকে তার নতুন বাড়িতে নিয়ে যান ভেলবোর।

ভেলবোর কয়েক ঘণ্টার জন্য আমি তাদের দুজনকে সেখানে একা থাকতে দেই। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার একঘণ্টার মধ্যে মেয়েটির মৃত্যু হয়।

প্রথম দুই বছর প্যারামেডিক হিসাবে চাকরির পাশাপাশি ভেলবোর এবং তার স্ত্রী এই সেবা দিতে শুরু করেন। কিন্তু যতই তাদের কাছে আসা অনুরোধের সংখ্যা বাড়তে লাগলো, তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি ফাউন্ডেশনের কাজে লেগে পড়েন।

ভেলবোর বিবিসিকে বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে তাদের পছন্দের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেই অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে কয়েক হাজার মানুষকে নিয়ে গেছি। অনেক সময় আমি তাদের চোখেমুখে অত্যন্ত আনন্দ দেখতে পেয়েছি। সেটা আমাকে এই কাজ বারবার করতে উৎসাহ জুগিয়েছে।

তার ফাউন্ডেশনে এখন সাতটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। আরও ১৪টি দেশে তিনি এইরকম ফাউন্ডেশন তৈরি করতে সহায়তা করেছেন। তবে এটা কোন ব্যবসা নয় এবং রোগীদের কাছ থেকে কোন ফি নেয়া হয় না। সূত্র- বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • পঠিত