ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

চাঁদের বুকে পা রাখা সবশেষ নভোচারীদের কথা

চাঁদের বুকে পা রাখা সবশেষ নভোচারীদের কথা
'অ্যাপোলো ১৭' মিশন

চাঁদের বুকে শেষবার মানুষ নেমেছিল ১৯৭২ সালে । মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার সেই শেষ মুন মিশনে ছিলেন তিনজন নভোচারী। তাদের দু'জন চাঁদের মাটিতে নেমেছিলেন, আর একজন মূল চন্দ্রযান নিয়ে চাঁদ প্রদক্ষিণ করছিলেন।

চাঁদে অবতরণকারীদের একজন ছিলেন ভূতত্ত্ববিদ হ্যারিসন শ্মিট। চাঁদের বুকে তারা হেঁটে বেড়িয়েছিলেন। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা চাঁদের বুকে শেষবারের মত মানুষ পাঠিয়েছিল যে রকেটে করে - তার নাম ছিল এ্যাপোলো ১৭। তাতে ছিলেন তিনজন নভোচারী। রন এভান্স, কম্যান্ডার ইউজিন সারনান, এবং ভূতত্ত্ববিদ হ্যারিসন শ্মিট।

এখন পর্যন্ত তারাই চাঁদের বুকে পা-রাখা সর্বশেষ মানুষ। চাঁদে মানুষের শেষ মিশনের পর এ্যাপোলো-১৭র কম্যান্ড মডিউল প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করে ১৯৭২ সালের ১৯ শে ডিসেম্বর। হ্যারিসন শ্মিট বলছিলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা .প্রশান্ত মহাসাগরে নামার. আগে পর্যন্ত একটুও চাপমুক্ত বোধ করতে পারিনি। নৌবাহিনীর যে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈনিকরা আমাদের উদ্ধার করে তাদের বলা হতো ফ্রগম্যান। সেখান থেকে আমাদের তোলা হলো হেলিকপ্টারে তার পর বিমানবাহী জাহাজে।’

‘সেখানে আমাদের অভিনন্দন জানানো হলো। তার পর আমাদের কেবিনে ঢুকে, এক গ্লাস পানি না খাওয়া পর্যন্ত আসলে রিল্যাক্স করা সম্ভব হয় না। কারণ তখনই আপনি অনুভব করবেন যে আপনি আর ওজনহীন পরিবেশে নেই। ’

হ্যারিসন শ্মিট এবং তার সঙ্গী নভোচারীরা মোট ১৩ দিন কাটিয়েছিলেন মহাশূন্যে। সেটা ছিল এমন এক মিশন - যাতে খুব কম মানুষেরই এর আগে যাওয়া হয়েছে।, আর তাদের পরে আর কারো যাবার সৌভাগ্য হয়নি। ‘পৃথিবীতে ফিরে আসার পর প্রথম বিশ্বাসই হতে চায় না যে মাত্র সাত দিন আগেই এ্যাপোলো-১৭ অবতরণ করেছিল ৪ লক্ষ কিলোমিটার দূরে - চাঁদের বুকে।’

আমেরিকার পূর্ব উপকুলে সময় তখন সন্ধ্যে ৫টা ৫৫ মিনিট - ঠিক সেই মুহূর্তে চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন কম্যান্ডার জিন সারনান। তিনি তার প্রথম বার্তায় বলেছিলেন, ‘চাঁদের মাটিতে এ্যাপোলো সেভেনটিনের প্রথম পদক্ষেপ । আমি এটা উৎসর্গ করতে চাই - তাদের সবাইকে যারা এটা সম্ভব করেছেন। অবিশ্বাস্য!’জিম সারনান শুরু করলেন চাঁদের বুকে তার পদচারণা। তাকে অনুসরণ করলেন হ্যারিসন শ্মিট। নাসার অন্য সব সহকর্মীর মতই তিনি হ্যারিসন শ্মিটকে ডাকতেন জ্যাক বলে।

মজা করে জিম সারনান বললেন, জ্যাক যেন চন্দ্রযানটিতে তালা মেরে না দেন। ‘জ্যাক, ওটাতে আবার তালা মেরে দিও না। আমাদের আবার ফিরে যেতে হবে। তুমি যদি চাবিটা হারিয়ে ফেলো, তাহলে আমরা বিপদে পড়ে যাবো।’ জ্যাক জবাব দিলেন, ‘আমি তালা লাগাচ্ছি না। চল, হেঁটে হেঁটে জায়গাটা দেখি।’

শ্মিট বলছিলেন, ‘আমরা যেখানে অবতরণ করেছিলাম সেটা প্রায় সাত কিলোমিটার চওড়া। এটা একটা উপত্যকা যার নাম দেয়া হয় ভ্যালি অব টরাস লিট্রো। এটা গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের চেয়েও গভীর। চার পাশে যে পর্বতগুলো - সেগুলো একেকটা দু'হাজার মিটার উঁচু। একটা বিস্ময়কর জায়গা। ’

‘আমরা দেখলাম পাহাড়ের গায়ে ও শৃঙ্গগুলোয় সূর্যের আলো পড়ে সেগুলো ঝলমল করছে। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের পাহাড়গুলোর ওপরের আকাশে পৃথিবীকে দেখা যাচ্ছে।’ চাঁদে দিনের বেলাও আকাশের রঙ কালো দেখায় কেন - তা বলছিলেন শ্মিট। ‘সবচেয়ে অস্বাভাবিক ব্যাপার হলো, আকাশটার রং একেবারেই কালো। কারণ, চাঁদের তো কোন বায়ুমণ্ডল নেই।’

"আমরা আগে থেকেই জানতাম যে চাঁদ থেকে আকাশকে কালো দেখাবে। কিন্তু তবু উজ্জ্বল সূর্য, আর কালো আকাশ - এরকম একটা দৃশ্যে অভ্যস্ত হওয়া বড় কঠিন। হ্যারিসন শ্মিট হচ্ছেন বিশ্বের একমাত্র ভূতত্ত্ববিদ যিনি চাঁদে গিয়েছেন।

তিন দিন ধরে তারা চাঁদের বুকে নানা অনুসন্ধান কাজ চালালেন। তারা যেসব নমুনা সংগ্রহ করলেন - তা ছিল যে কোন এ্যাপোলো মিশনের সংগ্রহের মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ। প্রথম দিনে তারা চাঁদের বুকে সাত ঘন্টা কাটিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে চাঁদে তাদের অনুসন্ধানের স্থায়িত্বকাল ছিল ২২ ঘন্টা।

‘লুনার মডিউল চ্যালেঞ্জার থেকে আমরা যতবারই বের হয়েছি - সেসময়টা আমরা কী কী করবো তার খানিকটা ছিল পরিকল্পিত, আর বাকিটা তাৎক্ষণিকভাবে ঠিক করা। কারণ আপনি জানেন না ওখানে কি আছে।’

‘আমরা লুনার মডিউল থেকে তিনবার বের হয়েছি। আমরা বের করার চেষ্টা করেছি যে চাঁদের বুকে কী কী আছে, এবং অনেক সময়ই - আমরা যা দেখতে পেয়েছি তা আমাদের বিস্মিত করেছে।’ হ্যারিসন শ্মিট বলছেন, তিনি চাঁদে যাবার আগে - সেখানে গিয়ে কী দেখতে পাবেন তা নিয়ে অনেক কিছু কল্পনা করেছিলেন ।

কিন্তু তিনি চাঁদে যাবার পর যা দেখেছেন - তা তার সব কল্পনাকে ছাড়িয়ে গেছে। তারা অনেক মজাও করেছেন। চাঁদের বুকে হাঁটতে হাঁটতে গান গেয়েছেন। শ্মিট বলছিলেন, ‘চাঁদের বুকে অবস্থানের অনুভূতিটা অনেকটা একটা বিরাট ট্রাম্পোলিনের ওপর হাঁটার মতো। সেখানে আপনার ওজন হয়ে যাবে পৃথিবীর তুলনায় ৬ ভাগের এক ভাগ। কারণ চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি হচ্ছে পৃথিবীর তুলনায় ৬ ভাগের এক ভাগ।’

‘কিন্তু আপনার শরীরের মাংসপেশী পৃথিবীতে ছাড়ার সময় যেরকম শক্ত ছিল সেরকমই থাকে। সে কারণে অনুভূতিটা হয় একটা বিরাট ট্রাম্পোলিনের ওপর হাঁটার মত।’ তিনি বলছেন, তিনি শুধু তার কাজের কথাই ভাবছিলেন। নিরাপদে আকাশে ওঠা, নিরাপদে বাড়ি ফেরা - একমাত্র ভাবনা ছিল এটাই। ‘তখন আমাদের ভাবনা ছিল, সবগুলো প্রক্রিয়া যথাযথভাবে করা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা। ইতিহাসের ভাবনা মনে এসেছে আরো অনেক পরে।’

‘যখন আমি কেবিনে নির্ভাবনায় আমার ডিনার খাচ্ছি, তখনই আসলে এটা ভাবার সময় হয় যে - এটাই শেষ মিশন। হয়তো তা না হলেই ভালো হতো, কিন্তু এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের এখন অপেক্ষা করতে হবে - হয়তো কোন এক সময় অন্য এক প্রজন্ম আবার চাঁদে যাবার সুযোগ পাবে।’ সূত্র: বিবিসি।

বাংলাদেশ জার্নাল/নকি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত