ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিল-মেলিন্ডা বিচ্ছেদ অন্তরালের গল্প

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১০ মে ২০২১, ১৪:১০

বিল-মেলিন্ডা বিচ্ছেদ অন্তরালের গল্প

বিশ্বের চতুর্থ ধনী ও মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল ও মেলিন্ডা গেটস এক সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার মাধ্যমে ২৭ বছরের সংসার জীবনের ইতি টানেন তারা। প্রথমে এ বিচ্ছেদের ঘোষণা দিলে সবাই ভাবেন এটা বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্তু ২৭ বছরের সংসার জীবনে হঠাৎ করে বিচ্ছেদের ঘোষণা কেন এল?

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলো বলছে ভিন্ন কথা। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, মেলিন্ডা গেটস ১৮ মাস আগে থেকেই বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে কাজ করা আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছিলেন। শিশু-কিশোরীদের পাচার ও জোর করে যৌনদাসীর কাজ করানোর মতো গুরুতর অভিযোগে কারাবাসে থাকা অবস্থায় আত্মহত্যা করা মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে বিল গেটসের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে মেলিন্ডা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে মেলিন্ডা গেটস বিভিন্ন আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দাম্পত্য বিচ্ছেদ নিয়ে যোগাযোগ করে আসছিলেন। একই সময়ে বিল গেটস জেফরি এপস্টেইনের ম্যানহাটনের ম্যানশনে তার সঙ্গে বারবার সাক্ষাৎ করছিলেন।

অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে এপস্টেইনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে ফ্লোরিডায় নাবালিকাকে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। পরে তার দণ্ড হয়। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে নিউইয়র্কের কারাগারে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানানো হয়।

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে দণ্ডিত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে যোগাযোগ মেলিন্ডা গেটসের বিচ্ছেদের একটি সূত্র বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে। ২০১৩ সালে গেটস দম্পতি জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর মেলিন্ডা তার স্বামীকে এ নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন।

ফ্লাইট রেকর্ডের সূত্র ধরে বলা হয়, ২০১৩ সালে বিল গেটস ‘ললিতা এক্সপ্রেস’ নামে জেফরি এপস্টেইনের প্রাইভেট জেটে করে নিউজার্সি থেকে ফ্লোরিডা সফর করেছেন। মেলিন্ডা উদ্বেগ জানানোর পরও বিল গেটস ও তাদের ফাউন্ডেশনের কিছু কর্মী জেফরির সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, বিষয়টি প্রকাশিত হলে বিল গেটস পরে জেফরির সঙ্গে তার যোগাযোগকে ‘বিচার-বিবেচনার ভুল’বলে উল্লেখ করেছিলেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকেই গেটস দম্পতির মধ্যে বিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ৩ মে প্রকাশ্য ঘোষণার আগ পর্যন্ত চলমান করোনা মহামারির সময়ে তারা নিজেদের বিচ্ছেদের বিষয় নিয়ে সমঝোতা করে আসছিলেন।

এর মধ্যেই সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে সমবেত বিশ্ব নেতাদের সমাবেশে গেটস দম্পতির যোগ দেয়ার কথা থাকলেও পরে সম্মেলনে তারা অংশ নেননি। মাইক্রোসফটের পরিচালনা পরিষদ থেকেও বিল গেটস পদত্যাগ করেন। একই সঙ্গে বার্কশায়ার হাটওয়ে নামের কোম্পানির পরিচালনা পরিষদ থেকেও সরে দাঁড়ান বিল গেটস।

বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে সময় দেয়ার জন্য কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা তখন বলা হলেও আসলে তাঁরা দাম্পত্য বিচ্ছেদের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ফয়সালা করার জন্য সময় নিচ্ছিলেন। বিশ্বের শীর্ষ সম্পদশালী এ দম্পতির সম্পদের পরিমাণ ১৩০ বিলিয়ন ডলার।

শুরু থেকে মেলিন্ডার আইনগত দিক যারা দেখাশোনা করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন রবার্ট কোহেন। বিচ্ছেদ মামলার এ আইনজীবী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার আগের স্ত্রী ইভানা ট্রাম্পের বিচ্ছেদের মামলায় আইনজীবী ছিলেন। রবার্ট কোহেন যুক্তরাষ্ট্রে অন্যতম ধনকুবের রাজনীতিক মাইকেল ব্লুমবার্গের বিয়ে বিচ্ছেদের মামলায়ও আইনগত সহযোগিতা দিয়েছেন।

বিল গেটসের আইনজীবী দলে রয়েছেন রোনাল্ড ওলসন। ‘মাঙ্গার, টোলেস অ্যান্ড ওলসন’ নামের বিখ্যাত মার্কিন আইন প্রতিষ্ঠানের অংশীদার রোনাল্ড ওলসন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গসহ সম্পদশালী লোকজনকে আইনগত সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। বিল গেটসের সঙ্গে রবার্ট ওলসন বার্কশায়ার হাটওয়ে কোম্পানির বোর্ড সদস্য ছিলেন এবং অন্যতম ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটের বন্ধু।

বিয়ে বিচ্ছেদের নথিতে স্বাক্ষরের সময় গেটস দম্পতি ১২৫০ মাইলের দূরত্বে অবস্থান করছিলেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে। বিল গেটস নথিপত্রে সাক্ষর করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার পাম ডেজার্ট থেকে। মেলিন্ডা গেটস ওয়াশিংটন রাজ্যে তাদের পারিবারিক বাড়ি এবং গেটস ফাউন্ডেশনের নিকটবর্তী বেলভিউ শহর থেকে নথিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত