ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

হামলার নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্তের নির্দেশ ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৫০  
আপডেট :
 ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫:৫৬

হামলার নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্তের নির্দেশ ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের
ব্রাসিলিয়াতে ব্রাজিলের জাতীয় কংগ্রেসের বাইরে বলসোনারোর সমর্থকদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাজিলের কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট প্যালেস এবং সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালায় দেশটির সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ও কট্টরপন্থি নেতা জাইর বলসোনারোর সমর্থকরা। ব্যাপক হামলার চালানোর প্রায় তিন ঘণ্টা পর ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি ভবনগুলো পুনরুদ্ধার করে পুলিশ। ইতোমধ্যে এই দাঙ্গায় কারা নেতৃত্ব দিয়েছে তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার হাজার হাজার গণতান্ত্রিক বিরোধী বিক্ষোভকারী সুপ্রিম কোর্ট, কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে আক্রমণ করে এবং জানালা ভেঙে দেয়, আসবাবপত্র উল্টে দেয়, শিল্পকর্ম ধ্বংস করে এবং ১৯৮৮ সালে রচিত দেশের মূল সংবিধান চুরি করে। প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা অফিস থেকে বন্দুকও চুরি করা হয়েছে।

ব্রাজিলের বর্তমান বামপন্থি প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা গত বছরের অক্টোবরের নির্বাচনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে পরাজিত করেছিলেন এবং ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তবে জাইর বলসোনারো ও তার সমর্থকরা এই হার মেনে নিতে পারছেনা। এরআগেও তারা বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ করে।

রোববারের হামলার সময় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা বন্যা বিধ্বস্ত আরারাকোয়ারা শহরে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় হামলার খবর পান তিনি। এরপর সেখান থেকেই একটি ডিক্রি জারি করেন তিনি। যেখানে রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ফেডারেল নিরাপত্তা হস্তক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। অথাৎ দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে নিরাপত্তাবাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে।

হামলার নিন্দা করে প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, এই ফ্যাসিস্ট সমর্থকরা এমন কিছু করলো, যা এ দেশের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি। যারা এই হামলা চালিয়েছে, তাদের আমরা খুঁজে বের করবো এবং আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার করা হবে।

এদিকে ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট রোববারের হামলার সময় রাজধানীতে নিরাপত্তার ত্রুটি ছিল বলে অভিযোগ করেছে এবং এর জন্য ব্রাসিলিয়ার গভর্নরকে ৯০ দিনের জন্য বহিস্কার করেছে। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেকজান্ডার ডি মোরেস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার এবং টিকটোককে অভ্যুত্থান-প্রচারণাকে ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছেন।

যদিও প্রেসিডেন্ট লুলা ও তার দল সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করার জন্য বলসোনারোকে দোষারোপ করেছেন। তবে বলসোনারো যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন দাঙ্গা উস্কে দেয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি সোমবার এক টুইট বার্তায় বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ গণতান্ত্রিক কিন্তু সরকারী ভবনগুলোতে আক্রমণ সীমা অতিক্রম করেছে, আমি এর নিন্দা জানাই।

দেশটির বিচারমন্ত্রী ফ্লাভিও ডিনো বলেছেন, এই পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে গভর্নর রোচা এই সংখ্যাটি ৪০০ বলে জানিয়েছেন।

ডিনো আরও বলেছেন, কয়েকশত বাসের অর্থায়ন করে যারা বলসোনারোর সমর্থকদের ব্রাসিলিয়ায় নিয়ে এসেছিল তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

তিনি আরও দাবি করেন, টেলিগ্রাম এবং টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে বোলসোনারোর সমর্থকরা কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে সরকারী ভবন দখলের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে আক্রমণ প্রতিরোধে নিরাপত্তা বাহিনীর কোনও পদক্ষেপ ছিল না। তাই ব্রাসিলিয়ার গভর্নরকে ৯০ দিনের জন্য বহিস্কার করা হয়েছে।

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর সমর্থকদের এই হামলা ফিরিয়ে দিয়েছে দু’বছর আগের যুক্তরাষ্ট্রের স্মৃতি। মার্কিন ক্যাপিটাল হিলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি এভাবেই হামলা চালিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা।

সাবেক রাষ্ট্রপতি বোলোসোনারো এখন পর্যন্ত নিজের হার স্বীকার করেননি। বরং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আয়োজিত নির্বাচনে পরাজয়কে তিনি ভোট গণনায় কারচুপি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও অক্টোবরে পরাজয়ের পরেই দেশ ছেড়েছেন বোলসোনারো। তিনি বর্তমানে ফ্লোরিডায় থাকেন, যেখানে রয়েছেন ট্রাম্পও।

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে সাধারণ নির্বাচনে জাইর বলসোনারোকে হারিয়ে জয়ী হন লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। এরপরই থেকেই বলসোনারোর সমর্থকরা সামরিক অভ্যুত্থানের দাবিতে ব্রাজিলের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু করেন। রোববারের হামলাও এই বিক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ।

সূত্র: রয়টার্স

বাংলাদেশ জার্নাল/এমআর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত