ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ

হিন্দু বৃদ্ধার সৎকার করলেন মুসলিম যুবকরা!

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০১৭, ০৮:৫৯

হিন্দু বৃদ্ধার সৎকার করলেন মুসলিম যুবকরা!

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ মিলেছে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায়। এক হিন্দু বৃদ্ধার সৎকার করলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবকরা। শামিল হলেন শবযাত্রাতেও। এভাবেই এক হিন্দু বৃদ্ধার শেষকৃত্য সম্পন্ন করলেন গ্রামের মুসলিম যুবকরা।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর, জেলা শহরের ইংলিশবাজার ব্লকের মিলকির ভবানীপুরে একটি ঝুপড়ি তৈরি করে থাকতেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা নির্মলা রবিদাস। প্রায় ১৫ বছর আগে মারা যান তার স্বামী। তারপর থেকে তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকতেন। বড় মেয়ে রেখা রবিদাসের বিয়ে হয়েছে পুখুরিয়ায়। ছোট দুই মেয়ে অর্চনা ও টুনি তার সঙ্গেই থাকত। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমে পেট চলত তার। কিন্তু শেষদিকে বয়সের ভারে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পড়শি যুবকরা তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর তার দুই মেয়ে অর্চনা ও টুনি হয়ে গেছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এমনকি মায়ের মরদেহের সৎকারের জন্য হাতে কোনো টাকাপয়সাও ছিল না। পাড়ায় কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। আবার গ্রামে হিন্দু পরিবারও প্রায় নেই বললেই চলে।

এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন গ্রামের সেই মুসলিম যুবকরাই, যারা বৃদ্ধাকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। মরদেহ সৎকারের জন্য মূল উদ্যোগ নেন গ্রামেরই এক স্কুল শিক্ষক গোলাম মোস্তাফা। সারিফ মোমিন, কালু মোমিন, এনামুল শেখ, ওয়াসিম আক্রম—সহ পাড়ার যুবকরা ছুটে এসে নির্মলার মরদেহ কাঁধে নিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে পাগলিকালী শ্মশানঘাটে যান। মৃতার এক নাতি টিঙ্কু রবিদাস মুখাগ্নি করেন। মুসলিম যুবকদের হাতেই দাহপর্ব সম্পন্ন হয়। গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি আমরা। এখানে জাত—ধর্ম দেখার কোনো প্রশ্নই আসে না। বৃদ্ধার দুই অসহায় মেয়েকে দেখে আমরা চুপ থাকতে পারিনি। তাই নিজেরাই হাসপাতালে ভর্তি থেকে শবদাহের পুরো দায়িত্ব নিয়েছি। চাঁদা তুলে মাচা বানানো থেকে সৎকার পুরোটাই আমরা করেছি।’

এদিন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন অনন্য নজির দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য। ঘটনার খবর শুনে নিজেই ছুটে যান মিলকির ভবানীপুর গ্রামে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ‘সমব্যথী প্রকল্পের’ চেক তুলে দিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্প্রীতি ও সৌহার্দের অনন্য নজির রাখল এই গ্রাম। অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়ে মানুষের ধর্ম পালন করেছেন গ্রামবাসীরা। বৃদ্ধার স্কুলছুট মেয়েকে স্কুলে ফিরিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পড়াশোনার সমস্ত খরচ বহন করা হবে।’ জেলাশাসকের সঙ্গে ছিলেন জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল—সহ ব্লক প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গৌরচন্দ্র বলেন, ‘রাজ্যে যে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের পরিবেশ বজায় রয়েছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।’

সূত্র: সংবাদপ্রতিদিন ডট ইন

/এসএস/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত