ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

মিয়ানমারে আফিম উৎপাদন ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:৩৬  
আপডেট :
 ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:৪০

মিয়ানমারে আফিম উৎপাদন ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ
মিয়ানমারের একটি পপি ক্ষেত। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারে আফিমের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি গত নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মতে, হেরোইন তৈরিতে ব্যবহৃত আফিম রেজিনের মূল্যবৃদ্ধি এবং মিয়ানমারে জনগণের অর্থনৈতিক দুর্দশা ও নিরাপত্তাহীনতা এর পেছনে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে মিয়ানমারের অর্থনীতি দেশে-বিদেশের নানা চাপের মুখোমুখি হয়, যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি। এসব ঘটনা আফিম চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের জোর প্রণোদনা প্রদান করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ছিল প্রায় ৭৯৫ মেট্রিক টন, যা ২০২১ সালে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের বছর থেকে প্রায় ৪২৩ মেট্রিক টন উৎপাদন বেড়েছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দফতর ইউএনওডক-এর আঞ্চলিক প্রতিনিধি জেরেমি ডাগলাস বলছেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং শাসনব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় শান প্রদেশ এবং সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত রাজ্যগুলোর সংঘর্ষ-প্রবণ অঞ্চলের কৃষকদের আফিম চাষে ফিরে যাওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল খুবই কম।

মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং লাওসের সীমানা যেখানে মিলিত হয়, যাকে তথাকথিত "গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল" বলা হয়, সেই অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে আফিম ও হেরোইন উৎপাদনের একটি প্রধান উৎস।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের পর মিয়ানমারই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আফিম উৎপাদনকারী দেশ। বিশ্বজুড়ে বিক্রি হওয়া সবচেয়ে বেশি হেরোইনের উৎস এই দুটি দেশ।

জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, মিয়ানমারে উৎপন্ন আফিমের অর্থনৈতিক মূল্য বছরে ২০০ কোটি ডলার। আর পুরো অঞ্চলে হেরোইন ব্যবসার মূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু গত এক দশক জুড়ে আফিমের বিকল্প শস্য উৎপাদন প্রকল্প এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে আফিমের গাছ পপি চাষ কমে আসছিল।

জাতিসংঘ কর্তৃক পরিচালিত বার্ষিক আফিম জরিপে দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমারে আবারও আফিম উৎপাদন আবার বেড়েছে। ২০১৩ সালের পর ২০২২ সালেই সর্বোচ্চ ৮৭০ টন আফিম উৎপাদিত হয়েছে।

সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে জাতিসংঘ মিয়ানমারে কৃত্রিম মাদক উৎপাদনের ওপরও নজর রাখছিল। তারা দেখছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির তহবিলের প্রধান উৎস হিসেবে কৃত্রিম মাদক আফিমের চাষকে ছাড়িয়ে গেছে।

আফিম চাষে সিনথেটিক মাদকের চেয়ে অনেক বেশি শ্রমের প্রয়োজন হয়। ফলে কৃত্রিম মাদক তৈরি সে দেশে একটি আকর্ষণীয় অর্থকরী পণ্য হিসেবে পরিণত হয়েছে। এর কারণ, সেনা অভ্যুত্থান-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটে মিয়ানমারের কর্মসংস্থানের অনেক বিকল্প উৎস কমে গেছে।

জাতিসংঘ কর্মকর্তা জেরেমি ডাগলাস বলছেন, মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোর উচিত এই পরিস্থিতির মূল্যায়ন করা এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। তাদের কিছু কঠোর পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করতে হবে।"

মিয়ানমারে ইউএনওডকের কান্ট্রি ম্যানেজার বেনেডিক্ট হফম্যান বলছেন, বেলা শেষে, আফিম চাষ আসলেই একটি অর্থনৈতিক বিষয়, এবং শুধু পপি ক্ষেত ধ্বংস করে এর সমাধান করা যাবে না। বিকল্প আয় এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া আফিম চাষ এবং উৎপাদন সম্ভবত বাড়তেই থাকবে।

সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ জার্নাল/এমআর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত