ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ধোঁকাবাজির অভিযোগ, আদানির ব্যবসা টালমাটাল

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:০২  
আপডেট :
 ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:১৩

ধোঁকাবাজির অভিযোগ, আদানির ব্যবসা টালমাটাল
গৌতম আদানি। ফাইল ছবি

নিউইয়র্ক-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গের একটি প্রতিবেদনে ভারতের আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির অভিযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশের সাথে সাথে শেয়ার বাজারে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের ফলে মাত্র তিন দিনে আদানি গ্রুপ প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার কোটি ডলার হারিয়েছে।

হিনডেনবার্গ তাদের প্রতিবেদনে বলছে, আদানি গ্রুপের ঘাড়ে প্রচুর ঋণ রয়েছে যা এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে। এছাড়াও মরিশাস এবং ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিভিন্ন কোম্পানিতে আদানি গ্রুপের মালিকানা থাকার ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছে।

এই প্রতিবেদন এমন সময় প্রকাশ করা হয় যখন আদানি গ্রুপ শেয়ার বাজারে প্রচুর সংখ্যায় শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করছিল। শুক্রবার বাজারে ২৪০ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার ছাড়ার কথ ছিল আদানি গ্রুপের। তবে দরপতনে কোম্পানির শেয়ারদর প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা এখন সতর্ক অবস্থানে থাকতে পারেন।

এদিকে কোম্পানির শেয়ারদর কমে যাওয়ায় আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি বিশ্বের ধনীদের তালিকায় নিচে নেমে এসেছেন। ফোবস বিলিওনার ইনডেক্সে অনুযায়ী, শুক্রবার গৌতম আদানির সম্পদমূল্য ২ হাজার ২৬০ কোটি ডলার কমে গেছে। এর ফলে ফোর্বসের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ৭ নম্বরে নেমে গেছেন, বর্তমানে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৯৬. ৬ বিলিয়ন ডলার। বুধবারও বিশ্বের ধনীদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিলেন তিনি। তবে এখনও এশিয়ার শীর্ষ ধনীর অবস্থানে রয়েছে আদানি।

অন্যদিকে হিনডেনবার্গের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আদানি গ্রুপ। আদানি গ্রুপ বলছে, হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন ‘বিদ্বেষমূলক’ এবং ভুল তথ্যে ভরা। তারা বলেছে, মার্কিন এই কোম্পানির বিরুদ্ধে তারা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করার কথা বিবেচনা করছে। আদানি গ্রুপ দাবি করেছে, তারা সব ধরণের আইন অনুসরণ করে ব্যবসা করে।

আদানি গ্রুপের প্রধান আইন কর্মকর্তা যতিন জালুনধোয়ালা বলেছেন, হিনডেনবার্গের এই রিপোর্ট প্রকাশের পর ভারতের শেয়ার বাজারে যে টালমাটাল অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এর ফলে ভারতীয় নাগরিকরা অনাকাঙ্ক্ষিত মানসিক চাপে পড়েছেন।

জালুনধোয়ালা অভিযোগ করেছেন, আদানি গ্রুপের শেয়ারের দরপতনের অশুভ উদ্দেশ্য নিয়েই এই রিপোর্টে প্রমাণ ছাড়া বিভিন্ন তথ্য এবং অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, হিনডেনবার্গ তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই একাজ করেছে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার হিনডেনবার্গ তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, যেসব গুরুতর বিষয় তাদের রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে, সে বিষয়ে আদানি গ্রুপ কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেয়নি। হিনডেনবার্গ বলেছে, তাদের রিপোর্ট সঠিক এবং আদানি গ্রুপ মামলা করতে চাইলে তারা মোকাবেলা করবে।

আদানি গ্রুপকে নিয়ে জালিয়াতির এসব অভিযোগে ওঠার পর ভারতে তার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো প্রায়ই অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে গৌতম আদানি ব্যবসায় অনেক অনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ এখন মুখ খুলতে হতে শুরু করেছেন।

ব্লুমবার্গের কলামিস্ট অ্যান্ডি মুখার্জি বলেছেন,আদানি ছাড়াও সামগ্রিকভাবে ভারতের শেয়ার বাজারের বিশ্বস্ততা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তার মতে, এর অন্যতম কারণ কারণ হলো ভারতের শেয়ার বাজার এখনও একদিকে আর্থিক ব্যবস্থার বৈশ্বিকীকরন এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদের ভেতরে পড়ে হিমশিম খাচ্ছে।

উল্লেখ্য, আদানি গ্রুপ ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। ভোগ্যপণ্য ছাড়াও তাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ জ্বালানি, বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর এবং অবকাঠামো নির্মাণের মত বড় বড় খাতে বিস্তৃত।

সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ জার্নাল/এমআর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত