ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

আদানির স্ত্রী, ভাইয়েরাও দুর্নীতিগ্রস্ত দাবি হিনডেনবার্গের

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৪৫  
আপডেট :
 ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৫৫

আদানির স্ত্রী, ভাইয়েরাও দুর্নীতিগ্রস্ত দাবি হিনডেনবার্গের
আদানি পরিবার। ছবি: সংগৃহীত

গত মাসে মার্কিন শর্ট-সেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চ ভারতের বৃহৎতম শিল্পগোষ্ঠী আদানি ভারতের বৃহৎতম শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার কারচুপি, বিপুল অঙ্কের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের অভিযোগ তোলা হয়। সেই রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকে দ্রুত নিম্নমুখী হয়েছে আদানি গোষ্ঠীর ৭টি সংস্থার শেয়ার। অবস্থা এমনই যে, মাত্র ৫ দিনেই শেয়ার বাজার থেকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাওয়া হয়ে গেছে গোষ্ঠীটির।

হিনডেনবার্গের রিপোর্টের প্রভাব পড়েছে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকাতেও। সেখানে এক ধাক্কায় তৃতীয় থেকে নেমে প্রথম দশের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছেন আদানি। ভারতীয় ধনকুবের বর্তমানে রয়েছেন ১৭ নম্বরে।

গত ২৪ জানুয়ারি মার্কিন শর্ট-সেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার কারচুপি, বিপুল অঙ্কের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের অভিযোগ তোলা হয়। শেয়ার বাজারে তারা কৃত্রিম ভাবে নিজেদের দর বাড়িয়েছেন। এ ভাবে লগ্নিকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

এদিকে, রিপোর্টে একা গৌতম আদানি বা তার সংস্থা নয়, আদানি পরিবারের একাধিক সদস্যের দিকে আঙুল তুলেছে হিনডেনবার্গ। নাম করে করে দেখানো হয়েছে, তারা কী কী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

হিনডেনবার্গের তালিকায় রয়েছেন গৌতম আদানির দুই ভাই এবং শ্যালক-সহ আত্মীয়দের অনেকেই। অভিযোগ, একাধিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে রয়েছেন আদানি পরিবারের এই সদস্যেরা।

হিনডেনবার্গের ১০৬ পাতার রিপোর্টে বিনোদ আদানির নাম রয়েছে। অভিযোগ, তিনি আদানি গোষ্ঠীর একটি ভুয়া সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। গৌতম আদানির বড়ভাই এই বিনোদ। ২০১৬ সালে পানামা দুর্নীতি এবং ২০২১ সালে প্যান্ডোরা পেপার দুর্নীতিতে তার নাম জড়িয়েছিল। পাকাপাকি ভাবে দুবাইতে থাকেন বিনোদ আদানি। প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে তার সম্পদ নজরকাড়া। কয়েক সপ্তাহ আগে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী প্রবাসী ভারতীয়দের তালিকায় বিনোদের নাম উঠে এসেছিল সবার উপরে।

হিনডেনবার্গের রিপোর্টে রাজেশ আদানির নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি গৌতমের ভাই। বর্তমানে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেন তিনি। রাজেশ বেআইনি হিরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি আমেরিকান সংস্থার।

হিনডেনবার্গ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, রাজেশ হিরা দুর্নীতিকাণ্ডে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারত সরকারের ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স বা ডিআরআই তাকে এই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করেছিল। ১৯৯৯ এবং ২০১০ সালে দুইবার রাজেশকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

অন্যদিকে গৌতম আদানির শ্যালক সমীর ভোরার নামও উল্লেখ করা হয়েছে হিনডেনবার্গের রিপোর্টে। হিরা দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছিল এই সমীরেরও। বর্তমানে তিনি আদানিদের অস্ট্রেলিয়া বিভাগের এগ্‌জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর। ডিআরআই সমীরকেও হিরে দুর্নীতিকাণ্ডের অন্যতম হোতা হিসাবে চিহ্নিত করেছিল, রিপোর্টে জানিয়েছে হিনডেনবার্গ।

এ ছাড়াও, হিনডেনবার্গের রিপোর্টে গৌতম আদানির স্ত্রী প্রীতি আদানির উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পেশায় দাতের চিকিৎসক। আদানি ফাউন্ডেশনের চেয়ারওম্যান প্রীতি।

রিপোর্টে রয়েছে যতীন মেটার নামও। তার পুত্র আদানির ভাইয়ের কন্যার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। হিরা দুর্নীতির সঙ্গে তিনিও জড়িত বলে অভিযোগ হিনডেনবার্গের রিপোর্টে।

হিনডেনবার্গের দাবি, হিরা নিয়ে ১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। আদানিরাই নাকি সেই দুর্নীতির কাণ্ডারি। অভিযোগ, কর ফাঁকি দিয়ে তারা হিরে এবং সোনার গয়নার ব্যবসা চালিয়েছেন।

এদিকে হিনডেনবার্গের যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। ৪১৩ পৃষ্ঠার একটি পাল্টা বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। হিনডেনবার্গের রিপোর্টকে তারা ‘ভারতের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হামলা’ বলেও দাবি করেছে।

কিন্তু আদানিদের জবাবের প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি শেয়ার বাজারে। তার পরেও ক্রমশ নেমেছে তাদের শেয়ারের দর। এলআইসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে। আদানিদের কয়েক হাজার কোটির শেয়ার কিনেছে এই সব সংস্থা। তাই আদানিদের বিপর্যয়ের মুখে উদ্বেগে সাধারণ মানুষও।

সূত্র: আনন্দবাজার

বাংলাদেশ জার্নাল/এমআর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত