ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মোশাররফ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৩০  
আপডেট :
 ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৩৮

সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মোশাররফ
পারভেজ মোশাররফ। ফাইল ছবি

পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ দীর্ঘদিন অসুস্থায় ভুগে মারা গেছেন। রোববার ৭৯ বছর বয়সী এই সাবেক প্রেসিডেন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান। এক নজরে তার সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো…

জেনারেল মোশাররফ ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময় তার পরিবার পাকিস্তানে পাড়ি জমায় সেখানে তিনি সেন্ট প্যাট্রিক স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে, তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন এবং ১৯৬৪ সালে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন।

১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন পারভেজ। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২সাল পর্যন্ত এলিট স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপে (এসএসজি) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের পর, তিনি বেশ কয়েকটি সামরিক কাজে দক্ষতা অর্জন করতে থাকেন এবং সেনাবাহিনীতে দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৯৮ সালের অক্টোবরে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেন। এক বছরের মে মাসের কারগিল যুদ্ধে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকা নিয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সাথে সম্পর্কে ফাটল ধরে জেনারেল মোশাররফের। এর ধারাবাহিকতায় ওই বছরই সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে আসিন হন পারভেজ মোশাররফ।

১৯৯০ সালের ১২ অক্টোবর শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরার পথে তাকে করাচি বিমানবন্দরে নামতে বাধা দেয় প্রধানমন্ত্রী। পরে তার আদেশে দেশটির সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন দখল করে নেয়।

আরও পড়ুন, পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন

পরবর্তীতে তিনি সংবিধান অমান্য করে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেন। এবং প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন। এ নিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কোনো আন্দোলন না হলেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পারভেজ মোশাররফের ব্যাপক সমালোচনা করে।

২০০১ সালের ২০ জুন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ নিজেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। পরে ২০০২ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে নিজেকে দেশটির বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণার প্রয়াস পান জেনারেল মোশাররফ। এর পর থেকে টানা ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রেসিডেন্ট।

আলোচিত ৯/১১ এর ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। সে সময় জেনারেল মোশাররফ পাকিস্তানকে বুশঘোষিত ‘ওয়ার অন টেররের’ অন্যতম প্রধান মিত্র হিসেবে ঘোষণা করেন।

২০০৪ সালে জেনারেল মোশাররফ দেশটির সংবিধানের ১৭তম সংশোধনী এনে নিজেকে সেনাপ্রধান রাখা অবস্থায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করেন। সে বছরই এক নির্বাচনে তিনি আবারও দেশটির প্রেসিডেন্ট হন। ২০০৭ সালে জেনারেল মোশাররফ দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বাধ্যতামূলক পদত্যাগের বিষয়ে একটি অসাংবিধানিক উদ্যোগ নেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশে ‘বিচারবিভাগ পুনর্বহাল’ আন্দোলন নামে বিচারকদের একটি আন্দোলন শুরু হয়। এর এক বছর পর ২০০৮ সালে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত আন্দোলনের ফলে জেনারেল মোশাররফ ১৮ আগস্ট ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ড, নবাব আকবর বুগতির হত্যাকাণ্ড এবং ২০০৭ সালের নভেম্বরে জরুরি অবস্থার পরে ৬২ জন বিচারকের 'অবৈধ বন্দী' সংক্রান্ত মামলায়ও মোশাররফের নাম ছিল। ২০১৩ সালের মার্চে, সিন্ধু হাইকোর্ট তিনটি মামলায় তাকে সুরক্ষামূলক জামিন দেন।

২০১০ সালে, মোশাররফ তার রাজনৈতিক দল অল পাকিস্তান মুসলিম লীগও (এপিএমএল) চালু করেছিলেন। ২০১৩ সালে তাকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তবে, সাবেক প্রেসিডেন্টের নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয় এবং তিনি ২০১৬ সালে ১৭ মার্চ দুবাই চলে যান আর দেশে ফেরেননি।

সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ জার্নাল/সামি/এমআর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত