ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

১১ দিনে ডুবল ৪ ব্যাংক

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩, ১৩:১৫

১১ দিনে ডুবল ৪ ব্যাংক
ছবি: সংগৃহীত

মাত্র ১১ দিনের অনেকটা আকস্মিকভাবেই সিলিকন ভ্যালিসহ তিন ব্যাংকের পতনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থায়। যার ধাক্কা অনুভূত হয় এশিয়া, ইউরোপের প্রধান প্রধান সব পুঁজিবাজারে। ঐতিহ্যগতভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থার শক্তিশালী ভিত্তি থাকার কারণে মনে করা হচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ধসের প্রভাব খুব একটা পড়বে না ইউরোপের ব্যাংকিং খাতে। শেষ মুহূর্তে প্রতিদ্বন্দ্বী ইউবিএস এজির কাছে বিক্রি করে দেয়ার মাধ্যমে ব্যাংকটির দেউলিয়া ঠেকানো গেলেও, তা খাদের কিনারায় থাকা পশ্চিমা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে কতটা উদ্ধার করবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। এদিকে ডুবে যাওয়ার পথে আরও একটি মার্কিন ব্যাংক।

ব্যাংকগুলোর দেউলিয়া হওয়ার যাত্রা, বিপরীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উদ্যোগ এবং প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক নিবন্ধে।

সিলভারগেট ব্যাংক

সিলভারগেট ব্যাংকের মূল নাম ‘সিলভারগেট ক্যাপিটাল করপোরেশন’। এ ব্যাংকের বিনিয়োগের বড় একটি অংশ ছিল ক্রিপটো কারেন্সির বাজরে। ফলে ক্রিপটোর বাজারদর কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিলভারগেট ব্যাংকও পড়তে থাকে।

মার্কিন আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসে ব্যাংকটিকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি ক্রিপটো জায়ান্ট এফটিএক্স-এর কারণে মারাত্মকভাবে ধসে পড়ায় আর কোনোভাবেই সেটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে ৮ মার্চ সিলভারগেট ব্যাংক পরিপূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক

সিলভারগেট ব্যাংকের বন্ধ হয়ে যাওয়ার দিনে (৮ মার্চ) সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ঘোষণা দেয় তারা ২২৫ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রি করে দেবে। এর আগেই ব্যাংকটি বেশ লোকসানের মুখে ছিল। পর দিন ব্যাংকটির শেয়ার মূল্য ৬০ শতাংশ পড়ে যায়। এর পর ৯ মার্চ গ্রাহকরা ব্যাংকটি থেকে এক দিনের মধ্যে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার তুলে নেয় এবং দিন শেষে ব্যাংকটি ৯৫ কোটি ডলার ঋণে পড়ে যায়।

এদিন সকালেই শেয়ারবাজারে এসভিবির স্টকের দাম কমতে শুরু করে এবং বিকেলের মধ্যে এটি অন্যান্য ব্যাংকের শেয়ারের মূল্যকেও নিম্নগামী করে ফেলে। পরদিন (শুক্রবার) সকালের মধ্যে এসভিবির শেয়ার লেনদেন বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত মূলধন বাড়ানোর প্রচেষ্টাও ত্যাগ করে। ফলাফল হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের আর্থিক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করে বন্ধ করে দেয়।

সিগনেচার ব্যাংক

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ধসে পড়ার দুদিনের মধ্যে ধসে পড়ে আরেকটি ব্যাংক - ‘সিগনেচার ব্যাংক’। ১২ মার্চ মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রাহকরা ব্যাংকটির মোট জামানতের ২০ শতাংশই তুলে নেন। ফলে শেয়ার বাজারে আগে থেকে পড়তে থাকা ব্যাংকটির দরপতন অব্যাহত থাকে।

পরে নিউইয়র্কভিত্তিক ফ্ল্যাগস্টার ব্যাংক ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে সিগনেচার ব্যাংককে যাবতীয় দেনাসহ কিনে নেয়। এর মধ্যে ২৫০০ কোটি ডলার নগদ পরিশোধ করা হয় এবং ১৩০০ কোটি ডলার বাকি থেকে যায়। সিগনেচার ব্যাংককে যখন ফ্ল্যাগস্টার কিনে নেয়, তখনো অবশ্য ব্যাংকটির মোট দেনা ছিল ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার এবং এর তহবিল ছিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

ক্রেডিট সুইস

শেয়ারের মূল্য কমে যাওয়ার বিপরীতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না থাকায় পতনের মুখে পড়ে ক্রেডিট সুইস। সৌদি বিনিয়োগকারীরা ক্রেডিট সুইস ব্যাংকে বাড়তি বিনিয়োগ না করায় ব্যাংকটির শেয়ারমূল্য ২০ শতাংশেরও বেশি পড়ে যায়। ১৫ মার্চ ব্যাংকটির শেয়ারের দাম প্রায় ২৪ শতাংশ কমে যায়।

দরপতনের পর সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বড় ঋণ নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করে ক্রেডিট সুইস ব্যাংক। এমনকি ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়া হলেও ব্যাংকটির শেয়ার নিম্নগামী থেকে আর খাড়া হতে পারেনি। পরে ক্রেডিট সুইসের প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনিয়ন ব্যাংক অব সুইজারল্যান্ড বা ইউবিএস ১৬০ বছরেরও বেশি পুরোনো ব্যাংকটিকে অধিগ্রহণ করে।

ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকও কি ডুবছে

ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকও গ্রাহকদের অনাস্থার শিকার হয়ে ডুবে যেতে বসেছে। ব্যাংকটি থেকে আমানতকারীরা প্রায় ৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার তুলে নিয়েছে। এ অবস্থা এগারো শীর্ষ মার্কিন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান গত সপ্তাহে ৩০০০ কোটি ডলার নগদ দিয়ে ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংককে সমর্থন করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারপরও সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক ব্যাংকটি খুব একটা তেজিভাব দেখাতে পারেনি। শেয়ারের দর নেমে গেছে ক্রমশ।

বাংলাদেশ জার্নাল/সামি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত