ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

কলকাতায় কারাগারে পি কে হালদারকে মারধর

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৩, ১৮:২৩

কলকাতায় কারাগারে পি কে হালদারকে মারধর
ছবি- সংগৃহীত

কারাগারে সেলের ভিতর দুইবার হামলার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ থেকে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত পি কে হালদার। ইতোমধ্যেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিতও করা হয়েছে। মঙ্গলবার আদালতে এই মর্মে পিটিশন দায়ের করেন তার আইনজীবী বিশ্বজিৎ মান্না।

৪৯ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজত (জুডিসিয়াল কাসটডি) শেষে মঙ্গলবার পি কে হালদারসহ মোট ছয় অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হয়। এদিন মামলাটি ওঠে আদালতের স্পেশাল সিবিআই কোর্ট-৩ বিচারক শুভেন্দু সাহার এজলাসে।

সেখানেই পি কে হালদারের আইনজীবী বিশ্বজিৎ মান্না আদালতের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেন। এসময় বিচারক পি কে হালদারের কাছে জানতে চান এখন তিনি সুরক্ষিত বোধ করছেন কি না? উত্তরে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, এখন কোনও সমস্যা নেই।

এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত পি কে হালদার বর্তমানে আলিপুরে প্রেসিডেন্সি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। আর সেখানেই প্রথমবার চলতি বছরের গত ১৮ এপ্রিল কারাগারে সেলের ভিতর তার উপর হামলা চালানো হয়। পি কে হালদার যে কারাগারের সেলে বন্দি ছিলেন, সেই একই সেলের ভিতরে ছিলেন হামলাকারী অভিযুক্ত হাফিজুল মোল্লা। আর সেখানেই তিনি পি কে হালদারের উপর হামলা চালান। সেসময় কার্যত হাতাহাতি বেধে যায় তাদের মধ্যে। এসময় ওয়ার্ডরক্ষী ঘটনাস্থলে ছুটে এসে তা থামায়। কিন্তু কারাগারের মধ্যেই এই হামলার ঘটনায় নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। পরে কারাগারের অন্য একটি সেলে স্থানান্তরিত করা হয় পি কে হালদারকে।

এরপরেও আরেকবার হামলার শিকার হন তিনি। গত ২২ এপ্রিল সেলের বাইরে তিনি যখন পত্রিকা নিয়ে পড়ছিলেন, তখনই আচমকা তার উপর হামলা চালানো হয়। অভিযুক্ত হামলাকারী ব্যক্তিও সেলের বাইরে ঘোরাঘুরি করছিলেন। এই ঘটনার পরই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। দু’টি ঘটনাতেই অল্প বিস্তর আহত হন পি কে হালদার। তবে আঘাত গুরুতর না হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারী অভিযুক্ত ব্যক্তি হাফিজুল মোল্লা বসিরহাটের বাসিন্দা। গত বছরের জুলাই মাসের গোড়ার দিকে এই হাফিজুলের বিরুদ্ধে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কালীঘাটের বাড়িতে আত্মগোপন করে থাকার অভিযোগ উঠে। রাতভর মমতার বাড়িতে লুকিয়ে থাকার পর তার নিরাপত্তার রক্ষীরা তাকে গ্রেফতার করে। এরপর কালীঘাট থানায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে ওই ঘটনার তদন্তের জন্য স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন গঠন করা হয়।

তবে কারাগারের ভিতর পি কে হালদারের ওপর হামলার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। এ ব্যাপারে বিশ্বজিৎ মান্না জানান, “কারাগার কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে, তারাই হামলার মোটিভ সম্পর্কে বলতে পারবে। অভিযুক্তদের কাছ থেকে নতুন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান মান্না।

এ ব্যাপারে তদন্তকারী সংস্থা ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’ (ইডি)র আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্ত্তী জানান, “কারাগারের ভিতরে পি কে হালদারের উপর হামলা হয়, তাকে মারধর করা হয়। ওই ঘটনায় তিনি আহত হয়েছিলেন। পরে ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পি কে হালদারকে কারাগারের অন্য একটি ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়।”

তিনি আরও জানান, এদিন আদালত জানতে চায় কারাগারের নতুন যে ওয়ার্ডে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে সেখানে তিনি সন্তুষ্ট কি না, পি কে হালদার তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এদিকে পি কে হালদারসহ অভিযুক্ত মোট ছয় অভিযুক্তকে আগামী ৭ জুন ফের আদালতে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতার নগর দায়রা আদালত।

এদিন স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা নাগাদ স্পেশাল সিবিআই কোর্ট-৩ বিচারক শুভেন্দু সাহার এজলাসে তোলা হলে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আগামী ৭ জুন বিচারক মামলার পরবর্তী হাজিরার দিন ধার্য করেন।

উল্লেখ্য, কলকাতার অনতিদূরে অশোকনগর-সহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২০২২ সালের ১৪ মে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ইডি। সেই সাথে গ্রেপ্তার করা হয় তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারসহ বাকি অভিযুক্তদের।

গত ১১ জুলাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ইডি। অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইন-২০০২ এবং দুর্নীতি দমন আইন-১৯৮৮ মামলায় ওই ছয় অভিযুক্তের নামে চার্জ গঠন করা হয়।

বর্তমানে অভিযুক্ত পি কে হালদারসহ পাঁচ পুরুষ অভিযুক্ত রয়েছেন প্রেসিডেন্সি কারাগারে। অন্যদিকে একমাত্র নারী অভিযুক্ত রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে।

বাংলাদেশ জার্নাল/সামি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত