ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ আপডেট : ২৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

যাকে নিয়ে ভারত-কানাডা দ্বন্দ্ব

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৯  
আপডেট :
 ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:১০

যাকে নিয়ে ভারত-কানাডা দ্বন্দ্ব
সারে'র গুরু নানক শাহী মন্দিরের বাইরে ঝোলানো বিলবোর্ডে নিহত শিখ নেতা হরদিপ সিং নিজ্জারের ছবি দেখা যাচ্ছে । ছবি- সংগৃহীত

চলতি বছরের জুনে কানাডায় খুন হন নির্বাসিত শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর। এই খুনের পেছনে ভারত সরকার জড়িত এমনটাই অভিযোগ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর। এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারত-কানাডা সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ছে। করা হয়েছে দু’দেশের কূটনীতিকদের পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারও।

কানাডার নাগরিক ও প্রখ্যাত শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার নেপথ্যে ভারত সরকারের এজেন্টদের যোগসূত্রের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ আমাদের কাছে আছে বলে দাবি করেছেন জাস্টিন ট্রুডো। এমন দাবির পর কানাডা থেকে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং ‘র’ এর প্রধানকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তবে চুপ থাকেনি ভারত, একইদিনে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কানাডার এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কারের পাশাপাশি তাকে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নয়াদিল্লি।

যে হারদ্বীপ সিং নিজ্জারকে নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে এতো তিক্ততা, তার বিষয়ে খুব কম তথ্যই পাওয়া যায়। কানাডা এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে তেমন কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি। একজন সাধারণ শিখ থেকে একজন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার এ গল্প এখনও অন্ধকারেই রয়ে গেছে।

কে এই নিজ্জার?

১৯৭৭ সালের ১১ অক্টোবর ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধর জেলার এক শিখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নিজ্জার। ভারতে তিনি কি করতেন এ বিষয়ে খুব কম তথ্যই পাওয়া যায়। তবে অনেকের ধারণা, ভারতে থাকাকালীন তিনি খালিস্তানি চিন্তাধারা দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। এরপর ১৯৯৭ সালে ২০ বছর বয়সে পাঞ্জাব ছেড়ে পাড়ি জমান কানাডায়।

দুই সন্তানের জনক নিজ্জার একজন সাধারণ প্লাম্বার (পাইপ মিস্ত্রি) হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও কানাডায় পাড়ি জমানোর পর যোগ দেন খালিস্তান আন্দোলনে। তিনি ছিলেন খালিস্তান টাইগার ফোর্সের (কেটিএফ) প্রধান "মাস্টারমাইন্ড"। কেটিএফ'কে দিল্লি একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচনা করে থাকে। এছাড়াও তিনি আরেক নিষিদ্ধ সংগঠন শিখস ফর জাস্টিসেও (এসএফজে) যুক্ত ছিলেন। সবশেষ ২০২০ সালে তাকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ সন্ত্রাসী ঘোষণা করে ভারত।

নাগরিকদের গুপ্তচরবৃত্তির আহ্বান জানাচ্ছেন শি জিনপিংনাগরিকদের গুপ্তচরবৃত্তির আহ্বান জানাচ্ছেন শি জিনপিং ২০০৭ সালে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় এক বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত এবং প্রায় ৪০ জন আহত হওয়ার মামলাসহ আরও একাধিক মামলায় তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় শিখ সংগঠনের সভাপতি রুলদা সিং (পাতিয়ালা, ২০০৯) হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তিনি।

গেলো জুলাইয়ে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) পাঞ্জাবের জলন্ধরে একজন হিন্দু পুরোহিতকে হত্যার দায়ে নিজ্জারের ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ রুপির নগদ পুরস্কার ঘোষণা করে। এছাড়া কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনে সাম্প্রতিক হামলার জন্য অন্যান্য নেতাদের পাশাপাশি তাকে দায়ী করা হয়।

খালিস্তান আন্দোলন

‘খালিস্তান’ দক্ষিণ এশিয়ার পাঞ্জাব অঞ্চলে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত একটি স্বতন্ত্র ও সার্বভৌম দেশ। প্রস্তাবিত রাষ্ট্রকে ভূখণ্ডগতভাবে ভারতীয় পাঞ্জাব রাজ্য থেকে শুরু করে বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চল পর্যন্ত অথবা প্রতিবেশী ভারতীয় রাজ্যসমূহকেও অন্তর্ভুক্ত করে সংজ্ঞায়িত করা হয়। পাঞ্জাব অঞ্চল শিখদের ঐতিহ্যগত মাতৃভূমি। ইংরেজ দ্বারা অধিকৃত হওয়ার আগে পাঞ্জাব শিখদের দ্বারা ৮২ বছর শাসিত হয়; ১৭৬৭ থেকে ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত সমগ্র পাঞ্জাব শিখ মিসল (সার্বভৌম শিখ রাষ্ট্র) সমূহের অধীন ছিল, তারপর মহারাজা রণজিৎ সিং শিখ মৈত্রী সঙ্ঘকে শিখ সাম্রাজ্যের মাঝে একীভূত করেন।

সেখানে শিখদের পাশাপাশি অনেক হিন্দু ও মুসলিমও বসবাস করতো। ১৯৪৭ সালের আগে শিখরা ব্রিটিশ অখণ্ড পাঞ্জাব রাজ্যের শুধু লুধিয়ানা জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে মুসলিম লীগ যখন মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানায়, তখন কিছু শিখ নেতা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে, হিন্দু ও মুসলিমের ভিত্তিতে ভারত বিভাজিত করলে শিখ সম্প্রদায়ের কোনো স্বাধীন মাতৃভূমি থাকবে না। তারা তখন বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চলে বিস্তৃত খালিস্তান নামক একটি ধর্মরাষ্ট্র সৃষ্টির ধারণা পেশ করেন। তখন থেকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত।

আরও পড়ুন...ভারত-কানাডার পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার

বাংলাদেশ জার্নাল/সামি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত