তিহার জেলে কেজরিওয়াল যেসব সুবিধা পাচ্ছেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:০২ আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:০৬
![তিহার জেলে কেজরিওয়াল যেসব সুবিধা পাচ্ছেন](/assets/news_photos/2024/04/02/image-265582-1712055968bdjournal.jpg)
বাড়ির খাবার খেতে পারবেন। বোতালজাত পানি পান করতে পারবেন। রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে গেলে চকলেট দেয়া হবে। স্ত্রীর সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে দেখা করতে পারবেন। বাড়ি থেকে আনা বিছানার চাদর, বালিশ আর তোশক ব্যবহার করতে পারবেন। ডায়াবেটিসের রোগী আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ায় নিয়মিত ওষুধ দেয়া হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যপরীক্ষাও করানো যাবে। এসব সুবিধা একজন কারাবন্দিকে দেয়ার অনুমতি দিয়েছে দিল্লির আদালত। সেই কারাবন্দির নাম দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিয়াল।
সোমবার (১ এপ্রিল) দিল্লির ওই আদালত কেজরিওয়ালকে ১৪ দিনের জন্য তিহার জেলে পাঠানোর হুকুম দেয়।
তিহার জেলের ১১২ ফুট আয়তনের (দৈর্ঘ্য ১৪ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট) একটি কক্ষে এখন আছেন কেজরিওয়াল। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কারান্তরীণ মুখ্যমন্ত্রী কী কী সুবিধা ভোগ করতে পারবেন, তার ফিরিস্তিও সেদিন বলে দিয়েছে আদালত।
এদিকে গোটা ভারত যখন ১৯ এপ্রিল শুরু হওয়া লোকসভা নির্বাচন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে, ঠিক সেসময় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। অভিযোগ, আবগারি নীতিসংক্রান্ত দুর্নীতিতে জড়িত কেজরিওয়াল।
২১ মার্চ রাতে দিল্লির সরকারি বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এতদিন ইডির হেফাজতে ছিলেন কেজরিওয়াল। সোমবার ইডির বর্ধিত হেফাজতের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তাকে বিচারক কাবেরী বাওয়েজার আদালতে তোলে সংস্থাটির কর্মকর্তারা। ইডি মনে করে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আবগারি নীতিসংক্রান্ত দুর্নীতির ‘হোতা’।
আদালতে সোমবার ইডির পক্ষের আইনজীবী এস ভি রাজু আম আদমি পার্টির প্রধান কেজরিওয়ালকে ১৫ দিনের জন্য বিচার বিভাগীয় হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করে। আদালতকে তিনি জানান, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের সহযোগিতা করেননি। এছাড়া নিজের আইফোনের পাসওয়ার্ডও তিনি ইডিকে দেননি।
আদালত এস ভি রাজুর আবেদন মঞ্জুর করে কেজরিওয়ালকে দিল্লির তিহার জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সোমবার দুপুর থেকে তিহার জেলের সেই ১১২ বর্গফুটের কক্ষে আছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
তিহার জেলে তিনটি বই পড়ার অনুমতি পেয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। সেগুলো হলো ভগবদগীতা, রামায়ণ ও সাংবাদিক নীরজা চৌধুরী রচিত ‘হাউ প্রাইম মিনিস্টারস ডিসাইড’। তবে কারাগারে থাকা অবস্থায় কেজরিওয়াল সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে তার মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারবেন কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
কারাগারটিতে এ মুহূর্তে আম আদমি পার্টির চার নেতা বন্দি। কেজরিওয়াল ছাড়াও সেখানে আছেন দিল্লির সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন ও রাজ্যসভার এমপি সঞ্জয় সিং।
আম আদমি পার্টির প্রধান কেজরিওয়ালের মতো মনীশ সিসোদিয়া ও সঞ্জয় সিং-ও আবগারি নীতিসংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি। এছাড়া বেআইনি আর্থিক লেনদেন মামলায় কারাগারটিতে আছেন সত্যেন্দ্র জৈন। দিল্লির সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া এক বছরের বেশি সময় এই তিহার জেলেই কাটিয়ে দিয়েছেন।
তিহার জেলের বর্তমান নিয়ম মানা হলে সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী তার মন্ত্রী বা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার অনুমতি পাবেন না। আর তেমনটা হলে আম আদমি পার্টির সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সংঘাতবৃদ্ধির জোর সম্ভাবনা আছে।
অন্যদিকে ২১ মার্চ ইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার বারবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তবে আম আদমি পার্টির নেতারা বলছেন, কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরবেন না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে কেবল, তিনি দোষী সাব্যস্ত হননি।
তিহারের ২ নম্বর কারাগারে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে রাখা হয়েছে। এই কারাগারের আর সব বন্দিদের মতো তাকেও সকাল সাড়ে ৬টায় দিন শুরু করতে হচ্ছে। প্রাতঃরাশে তিহার জেলের বন্দিরা চা আর কয়েক টুকরা রুটি পেয়ে থাকেন। এরপর তাদের দুই বেলা ডাল-সবজি, সঙ্গে পাঁচটি রুটি বা ভাত দেওয়া হয়। তবে শারীরিক নানা সমস্যা থাকায় বিশেষ ডায়েটে থাকা কেজরিওয়ালকে জেলের এসব খাবার খেতে হচ্ছে না। তার খাবার বাড়ি থেকে আসছে।
সকালে স্নান ও প্রাতঃরাশ শেষে যদি শুনানি থাকে, তাহলে কেজরিওয়ালকে জেল থেকে আদালতে যেতে হবে। না থাকলে নিজের আইনি দলের সঙ্গে বৈঠক করতে পারবেন তিনি। এরপর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে দুপুরের খাবার খেয়ে ফেলার নিয়ম।
মধ্যাহ্নভোজের পর তিহার জেলের বন্দিরা দুপুর ৩টা পর্যন্ত নিজ নিজ কক্ষে থাকেন। কেজরিওয়ালের ক্ষেত্রেও এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটবে না। এরপর তাদের চা আর দুটি বিস্কুট দেয়া হয়। রাতের খাবার বিকাল সাড়ে ৫টায়। এরপর সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বন্দিদের যার যার কক্ষে ফিরে যেতে হয়।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল চাইলে টেলিভিশন দেখতে পারেন। ১৮ থেকে ২০টি চ্যানেলে খবর, বিনোদন ও খেলাধুলা দেখার অনুমতি আছে বন্দিদের।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস