ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আপডেট : ৫ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

গাজায় অস্ত্রবিরতি আসন্ন, নিরীহ ফিলিস্তিনি হত্যা কি থামবে এবার?

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৪  
আপডেট :
 ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৪

গাজায় অস্ত্রবিরতি আসন্ন, নিরীহ ফিলিস্তিনি হত্যা কি থামবে এবার?
ফাইল ছবি। 

গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত ও বাস্তুভিটা ছাড়া হয়ে শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে অগনিত মানুষ। এমন পরিস্থিতি বিগত মাসে দুভিক্ষের মতো মহাবিপর্যয় নেমে আসে গাজায়। তীব্র খাবারের সংকটে ক্ষুধায় সাধারণ অসহায় ফিলিস্তিনিরা বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার শিবিরগুলোতে ভিড় করেছে। এমন মানবিক বিপর্যয়ে সারাবিশ্বের টনক নড়ে ওঠে। তারা ইসরায়েল ও হামাসকে যুদ্ধ বিরোধী চুক্তির জন্য চাপ দিতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে গেলেও এবার গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি আসন্ন বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েলের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের ব্যাপারে গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইতিবাচক সাড়া দেয়ার এমন সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে।

তবে এমন পরিস্থিতিতেও থেমে নেই ইসরায়েলি হামলায় সাধারণ ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনা। রোববার (২৮ এপ্রিল) ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, রাফা এবং গাজা সিটিতে রাতভর ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী এবং শিশুও রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার রাতে গাজায় আটক বন্দীদের মুক্তি নিয়ে একটি চুক্তি করার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। এ সময় ইসরাইলের নিরাপত্তার প্রতি 'লৌহবর্মাচ্ছাদিত' মার্কিন সমর্থনের কথা আবারো বলেন।

হামাস এখনো তাদের তাদের অভিমত আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। তবে গ্রুপটির এক সিনিয়র কর্মকর্তা রোববার এএফপিকে জানিয়েছেন, গাজায় সামরিক অস্ত্রবিরতি নিয়ে ইসরাইল ও মিসরের পক্ষ থেকে সর্বশেষ যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে তাদের 'গুরুত্বপূর্ণ কোনো মতবিরোধ' নেই।

হামাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'নতুন কোনো ইসরাইলি বাধা না এলে বলা যায়, পরিবেশ ইতিবাচক রয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে হামাসের পর্যবেক্ষণে বড় ধরনের মতানৈক্য দেখা যায়নি।' হামাসের ওই কর্মকর্তা তার পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, কায়রোতে আজ সোমবার (২৯ এপ্রিল) মিসরীয় ও কাতারি মধ্যস্ততাকারীদের সাথে এক বৈঠকে অস্ত্রবিরতি নিয়ে হামাসের প্রতিক্রিয়া জানাবেন আন্দোলনের সিনিয়র নেতা খলিল আল-হায়ার নেতৃত্বাধীন হামাসের একটি প্রতিনিধিদল।

ইসরায়েলি একটি প্রতিনিধিদলকে কায়রো সফর করার জন্যও মিসর আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা প্রদান এবং প্রক্রিয়াটি জোরদার করার জন্য তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে কাতারের মালিকানাধীন আল-আরাবি আল-জাদিদ আউটলেট জানিয়েছে।

গাজায় একটি অস্ত্রবিরতির জন্য মিসরের পাশাপাশি কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করে যাচ্ছে।

একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ প্রস্তাবে কয়েকটি ধাপে যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। পরবর্তী ধাপগুলোতে যুদ্ধ বন্ধ এবং আরো বন্দী মুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে।

হামাস শুরু থেকেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহারের ওপর জোর দিয়ে আসছে। নেতানিয়াহু এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।

বর্তমান প্রস্তাব অনুযায়ী তিন সপ্তাহের অস্ত্রবিরতির মধ্যে প্রায় ২০ জন ইসরায়েলি বন্দীর মুক্তির কথা বলা হয়েছে। এরা হলেন নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও সৈন্য। এদের বিনিময়ে প্রায় ৫০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে। এছাড়া তিন লাখ লোককে উত্তর গাজায় ফিরতে দেয়া হবে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে মিসরীয় একটি সূত্র মারিভকে জানিয়েছে, তিন সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির পর ১০ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

এ সময় ইসরাইল ও হামাস দীর্ঘ মেয়াদি যুদ্ধবিরতি নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এর মাধ্যমে গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর প্রত্যাহার করা হবে। তবে ইসরাইলি বাহিনী উত্তরে ফিলিস্তিনি ক্রসিংগুলোকে ফিলিস্তিনিদেরকে থামানো ও পরীক্ষা করতে পারবে।

এদিকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যারা ইসরায়েলকে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে হামলা থেকে বিরত রাখতে পারে। যেখানে দশ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

তিনি বলেন, যে কোনো হামলা হলে ফিলিস্তিনিরা গাজা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে। ইসরায়েল বেশ কিছুদিন থেকেই রাফাহতে হামলা চালাবে বলে ঘোষণা দিয়ে আসছে।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের রাফা শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আবু তাহা নামে একজনের পরিবারের নয় সদস্য নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, রাফা এবং গাজা সিটিতে রাতভর ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী এবং শিশুও রয়েছে।

ইসরায়েলি বাহিনী যে বাড়িতে হামলা চালিয়েছে ওই বাড়ির মালিক একজন পারফিউম বিক্রেতা। তিনি কোনো রাজনৈতিক বা সশস্ত্র দলের সদস্য নন। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ করে ইসরায়েলি বাহিনী ওই বাড়ির ওপর হামলা চালায়।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। অভিযানের নামে সেখানে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৪ হাজার ৪৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৭ হাজার ৫৭৫ জন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত