ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিক্ষোভ দমনে এবার ক্যালিফোর্নিয়ায় পুলিশি অ্যাকশন

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৪, ০৫:০৯  
আপডেট :
 ০৩ মে ২০২৪, ০৫:২৫

বিক্ষোভ দমনে এবার ক্যালিফোর্নিয়ায় পুলিশি অ্যাকশন
ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়া ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ দমনে পুলিশি অভিযান আরও বিস্তৃত হয়েছে। নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে রাজ্যটির পুলিশ বাহিনী। সেখান থেকে শান্তিপূর্ণ ফিলিস্তিনপন্থিদের উচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসের (ইউসিএলএ) অবরোধ উচ্ছেদে, কর্তৃপক্ষ দাঙ্গা পুলিশ ডেকে নিয়ে আসে। চার শতাধিক বিক্ষোভকারীকে সরে যেতে আলটিমেটাম দিয়ে শত শত পুলিশ সদস্যকে সেখানে মোতায়েন করা হয়। রাবার বুলেট ও ফ্ল্যাশব্যাং ব্যবহার করে বুধবার (২ মে) পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়েছে।

এর আগে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস থেকে চলে যাবার জন্য আহবান জানিয়েছিলো পুলিশ। কয়েক ঘণ্টার অচলাবস্থা শেষে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তাঁবুতে প্রবেশ করতে শুরু করে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তাঁবুগুলো সরিয়ে ফেলে। এ সময় ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশি অভিযানের ২৪ ঘণ্টা আগেই ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে সহিংস ইসরায়েলপন্থি উগ্র জনতা আক্রমণ করে ফিলিস্থিনপন্থিদের তাঁবুকে। এ সময় পুলিশের ভূমিকা সমালোচিত হয়। এই সহিংসতা থামাতে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি পুলিশ। রাজ্যে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনাও করেন ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়র।

ইসরায়েলপন্থিদের হামলা ২৪ ঘণ্টা পার হবার আগেই ফিলিস্তিনপন্থিদের ওপর পুলিশি অ্যাকশনের সমালোচনা করছেন দেশটির বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এর আগে নানা সময় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কর্তৃপক্ষ বাধা না দিলেও, এবার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছে।

রয়টার্স, বিবিসি ও আল জাজিরা জানিয়েছে, পুলিশি অভিযানের পর সব বিক্ষোভকারীকে ইউসিএলএ ক্যাম্প থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় কিছু বিক্ষোভকারীকে ভয়ার্ত দেখালেও, অন্যরা অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। অনেক বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘তোমাকে লজ্জা’ বলে চিৎকার করছিলেন।

ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী এবং ইসরায়েলপন্থি একটি দলের মধ্যে সংঘর্ষের পর থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো দাঙ্গা পুলিশের উপস্থিতিতে আরও থমথমে হয়ে উঠে পরিস্থিতি। পুলিশ সদস্যরা ক্যাম্পাসের এক অংশ থেকে আরেক অংশে টহল দিচ্ছিলো। সবার কাছে দাঙ্গা দমনের হাতিয়ার ছিলো।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তাঁবু খাটিয়ে ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে, তা অবৈধ। অবিলম্বে বিক্ষোভ বন্ধ না করলে তাদেরকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ মুহূর্তে ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি রয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।

এদিকে, বিবিসি জানিয়েছে, নিউইয়র্ক শহরের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব প্রবেশ পথেই এখন পুলিশ ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মীদের ভিড়, রাস্তায় ব্যারিকেড। জিনিসপত্র নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাড়ির উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস ছাড়ছে। ক্লাস বাতিল হয়েছে আর পরীক্ষা কবে হবে ঠিক নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এর পর কী হতে যাচ্ছে তা নিয়েই সর্বত্র এক থমথমে ভাব আর অনিশ্চয়তা। শিক্ষার্থীরা বলেছেন মঙ্গলবার গাজার ঘটনার প্রতিবাদ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিলটন হলে অভিযান চালিয়ে একশোর বেশি মানুষকে আটকের ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাসই এখন বিপর্যস্ত।

পুলিশ কমিশনার এডওয়ার্ড ক্যাবান বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কলাম্বিয়া এবং নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মেয়র এরিক অ্যাডামস উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য বহিরাগত আন্দোলনকারীদের দায়ী করেছেন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার পর তারা বিক্ষোভকারীদের ব্যারিকেড ডিঙ্গিয়ে হ্যামিল্টন হলে প্রবেশ করে দ্বিতীয় তলার জানালা দিয়ে বিক্ষোভকারীদের হাতকড়া পরিয়ে বের করে নিয়ে আসে। পরে তাঁবু ছাউনিগুলোও সরিয়ে দেয় পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশ বুধবার টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে। নিউইয়র্কের ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে এবং স্কুল ভবনের ভেতরে বিক্ষোভকারীদের আস্তানা থেকে তাদের উচ্ছেদ করে। কর্মকর্তারা এ কথা জানান।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) বিক্ষোভকারীরা বুধবার সন্ধ্যার ব্যস্ততম সময়ে কেমব্রিজ ক্যাম্পাসের কাছের এভিনিউ বন্ধ করে দেয়। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তাদের ক্যাম্প থেকে উচ্ছেদ করে। একই সঙ্গে অন্তত ১৭ জনকে আটক করে।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ প্রায় ২০০ বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করেছে। এছাড়া সেখানের দুজন শিক্ষার্থী ও দুই বহিরাগতকেও আটক করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দিক বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো জানিয়েছে, স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির ২৯ শিক্ষার্থী, ফ্যাকাল্টি সদস্য ও আরও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে বিক্ষোভের মুখে ইউনিভার্সিটি অব ভারমন্ট তাদের বিনিয়োগ তালিকা প্রকাশ করতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

বিক্ষোভকারীদের তাঁবুগুলোর শান্তিপূর্ণভাবে সরিয়ে নেয়ার বিনিময়ে নতুন একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠনে রাজি হয়েছে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর ইসরায়েল নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠানে কর্তৃপক্ষ রাজি হবার পর বিক্ষোভ কর্মসূচি তুলে নিয়েছে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা।

উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়েও পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে টিভি ফুটেজে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহূর্তে বিক্ষোভ চলছে। সবগুলো বিক্ষোভ থেকেই ইসরায়েল প্রশ্নের মার্কিন নীতি পরিবর্তনের দাবি উঠেছে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও কোম্পানিকে বয়কটের দাবিতে গেলো কিছুদিন ধরেই প্রচণ্ড ছাত্র বিক্ষোভ চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। মঙ্গলবার রাতে কয়েকটি জায়গায় তা সংঘর্ষের রূপ নেয়। নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু করে এই বিক্ষোভ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত