ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

মৃত্যুর পরের বাড়ি বানাচ্ছেন যে ব্যক্তি

মৃত্যুর পরের বাড়ি বানাচ্ছেন যে ব্যক্তি
নিজের সমাধি ক্ষেত্রের সামনে অ্যান্টন মান্দুলানি

মৃত্যুর পরে আপনার কবর কোথায় হবে, সেটি কি কখনো ভেবেছেন?

তানজানিয়ার নজোম্বের বাসিন্দা অ্যান্টন মান্দুলানি সেটা চিন্তা করে নিজের এবং তার তিনজন স্ত্রীর জন্য এরমধ্যেই সমাধি তৈরি করে রেখেছেন। অথচ তার সমাজে মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে খুব একটা কথা বলা হয়না। তাই মান্দুলানি চান, তার সমাজের লোকজনকে মৃত্যুর পর যেভাবে স্মরণ করা হয়, তার ক্ষেত্রে যেন সেটা ব্যতিক্রমী হয়।

বাইরে থেকে নির্মাণ কাজের ধরন দেখে মনে হবে যেন কোনও বাড়ি বানানো হচ্ছে, তবে ভেতরের চিত্র যে কাউকে চমকে দেবে। সেখানে রয়েছে ১২ মিটার গভীর একটি সমাধি, যা হবে অ্যান্টন মান্দুলামি এবং তার তিন স্ত্রীর মৃত্যুর পরের ঠিকানা। আটবছর ধরে এই সমাধির কাজ চলছে, যা অ্যান্টনির সারাজীবনের স্বপ্ন।

অ্যান্টন মান্দুলামি বলছেন, আমি এই সমাধি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ আমি চাই না মানুষ আমাকে ভুলে যাক। সবমিলিয়ে এখানে এক হেক্টর জায়গা আছে, যেখানে আমি এবং আমার তিন স্ত্রীর সমাধি হবে। এটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এখান থেকে জানতে পারবে, আমি এই পরিবারের জন্য কি ছিলাম।

এর মধ্যেই এই সমাধিক্ষেত্রটি নির্মাণ করতে পাঁচ হাজার ডলার খরচ হয়েছে তার ইচ্ছা অনুযায়ী, মৃত্যুর পরে মান্দুলামি এবং তার স্ত্রীদের এই স্থানে কবর দেয়া হবে।

এ সম্পর্কে তার বড় স্ত্রী ডামিয়ানা উইকেচর বলেন, আমার মতে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, তিনি চমৎকার একটি কাজ করেছেন। মৃত্যুর পরে নিজের থাকার জায়গাটি তিনি নিজেই তৈরি করে নিচ্ছেন। তার একজন স্ত্রী হিসাবে, এটা আমার জন্য ঠিক আছে, আমি খুশি, কারণ আমাদের একস্থানে সমাধি হবে।

মান্দুলামি বলছেন, এই প্রকল্পের পেছনে তিনি পাঁচ হাজার ডলার খরচ করেছেন, যা শেষ হতে আরো চার বছর সময় লাগবে। কিন্তু দরিদ্র একটি গ্রামে এভাবে হাজার ডলার খরচ করে সমাধিস্থান তৈরি করার বিষয়টি সবারই নজরে পড়েছে। এ নিয়ে গ্রামের প্রতিবেশী বাসিন্দাদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

গ্রামের বাসিন্দা জোনাস মেহেমা বলছেন, আমি মনে করি, এটা ঠিকই আছে। কারণ যখন থেকে তিনি প্রথাগত হার্বালের ব্যবসা শুরু করেন, তখন থেকেই তিনি বলেছেন যে, তিনি ইতিহাস তৈরি করতে চান, যাতে মৃত্যুর পরেও মানুষ তাকে ভুলে না যায়।

গ্রামটির আরেকজন বাসিন্দা ভিক্টর নায়াগাওয়ার অভিমত অবশ্য ভিন্ন।

তিনি বলছেন, এটা এমন একটা কাজ যা আমাকে খুবই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আমি কখনো দেখিনি কেউ এত অর্থ খরচ করে নিজের সমাধি কেন্দ্র তৈরি করছে। আমার মতে, নেতাদের ক্ষেত্রে এটা গ্রহণীয় হতে পারে, যেমন আমাদের জাতির পিতার জন্য। কিন্তু আমি খুবই অবাক হয়েছি যে, স্থানীয় একজন বাসিন্দা এরকম বিশাল কবরস্থান তৈরি করছে।

এই সমাধি কেন্দ্রই একমাত্র বিষয় নয়, যা তানজানিয়ার মানুষের মধ্যে আলোচনা তৈরি করেছে। মান্দুলামির অন্য আরো ইচ্ছা আছে। তিনি চান, মৃত্যুর পরে তার দেহ মমি করা হবে এবং প্রকাশ্যে সেটি প্রদর্শন করা হবে, যা নিয়ে তৈরি করেছে বিতর্ক।

যে সমাজের সংস্কৃতিতে মৃত্যু নিয়ে বেশি প্রস্তুতি দুর্ভাগ্য ডেকে আনে বলে মনে করা হয়, সেখানে এই সমাধি কেন্দ্র নিঃসন্দেহে সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি আলোচনা তৈরি করতে যাচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত