ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

আসছে মহাপ্রলয়, ডুবে যাবে পৃথিবী!

আসছে মহাপ্রলয়, ডুবে যাবে পৃথিবী!

মহাপ্রলয়ের আর খুব একটা দেরি নেই! মাত্র ৮০টা বছর! ২১০০ সালের মধ্যেই এই পৃথিবীর প্রায় পুরোটাই লে যাবে সাগর, মহাসাগরের তলায়! এমনটাই বলছে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট।

গত ১০০ বছরে সমুদ্র যতটা উপরে উঠে এসেছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের বদৌলতে সাগর, মহাসাগরগুলির জলস্তর আগামী ১০০ বছরে তার প্রায় ৪০ গুণ উপরে উঠে আসবে। ফলে ডুবে যাবে প্রায় গোটা পৃথিবীকেই।

অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের জন্য পৃথিবীর গায়ের তাপমাত্রা বাড়বে এখনকার হিসেবের চেয়ে আরও এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তাপমাত্রা বেড়ে যাবে আরও তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা উত্তর মেরুর বরফ এতটাই গলিয়ে দেবে যে, সেই বরফ-গলা জল সমুদ্রের এখনকার জলস্তরকে আরও প্রায় ২০ ফুট উঁচুতে তুলে দেবে।

এই অশনি সঙ্কেত মিলেছে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউনাইটেড নেশন্স এনভায়রনমেন্ট প্রজেক্ট বা ‘ইউএনইপি’)-র সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে। ‘এমিশন্‌স গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৮’ শীর্ষক ১১২ পাতার ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে গত মঙ্গলবার।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ১০০ বছরে (১৮৯৭ থেকে ১৯৯৭) সমুদ্রের জলস্তর উঠে এসেছে ৭.১ ইঞ্চি বা ১৮ সেন্টিমিটার। বিভিন্ন উপগ্রহের পাঠানো তথ্যাদি জানাচ্ছে, সমুদ্রের জলস্তর বেশি উঠে এসেছে গত ২৪ বছরে। ১৯৯৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সমুদ্রের জলস্তর উঠে এসেছে ৩ ইঞ্চি বা সাড়ে ৭ সেন্টিমিটার। তার মানে, আগের ৭৫ বছরের প্রায় অর্ধেক।

আরো বলা হয়েছে, গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমিয়ে পৃথিবীর গায়ের জ্বর ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে না দেওয়ার জন্য ১৩ বছর আগে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যে লক্ষ্য়মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, আমেরিকা ২০৩০ সালের মধ্যে তা ছুঁতে পারবে না। তবে এ ব্যাপারে ভারতের পদক্ষেপ সন্তোষজনক। খুব একটা পিছিয়ে নেই চীনও।

জাতিসংঘের ওই রিপোর্ট যে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের ছবি তুলে ধরেছে গবেষণা, উপগ্রহের পাঠানো ছবি ও তথ্য-পরিসংখ্যানের মাধ্যমে, তাতে পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি আরও ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তা হলে ২১০০ সালের মধ্যে, সেই অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের জন্য সমুদ্রের জলস্তর উঠে আসবে একলাফে ১৬ ফুট বা ৫ মিটার। যার মানে, গত ১০০ বছরে সমুদ্রের জলস্তর যতটা উঠে এসেছিল, তার খুব কাছাকাছি। আর পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি আরও ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তা হলে ২১০০ সালের মধ্যে, সেই অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের জন্য সমুদ্রের জলস্তর উঠে আসবে একলাফে ২০ ফুট। যার অর্থ, গত ১০০ বছরে উষ্ণায়নের জন্য যতটা উঠে এসেছে সমুদ্রের জলস্তর, আর ৮০ বছরের মধ্যে সেই সাগর, মহাসাগর তার ৪০ গুণ ফুলে-ফেঁপে উঠবে।

জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের এই অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের জন্য দায়ী মূলত চীন, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি ও ভারতের বড় ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্র ও জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর যানবাহন। যা স্থলে, জলে, বাতাসে উদ্বেগজনক ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস (জিএইচজি)-এর পরিমাণ।

রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ কর্মসূচির উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য ভারতীয় বংশোদ্ভূত অর্জুন রঙ্গনাথন বুধবার ওয়াশিংটন থেকে আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘গোটা বিশ্বে গত বছরে (২০১৭) যে পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি হয়েছে, তার ২৬.৮ শতাংশের জন্য দায়ী চীন। ১৩.১ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করেছে আমেরিকা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলিতে ওই গ্যাস তৈরি হয়েছে ৯ শতাংশ। আর বিশ্বের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদনের ৭ শতাংশ হয়েছে ভারতে।’

রঙ্গনাথন এও জানিয়েছেন, গত বছর গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদনের নিরিখে ভারতের পরেই রয়েছে রাশিয়া (৪.৬%), জাপান (৩%), ব্রাজিল (২.৩%), ইন্দোনেশিয়া (১.৭%), কানাডা ও দক্ষিণ কোরিয়া (১.৬% করে)।

তবে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা যাতে আরও দেড় থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস না বড়ে, তার জন্য ২০০৫ সালের প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ১৯৪টি দেশকে যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, চীন, আমেরিকার মতো বিশ্বের প্রথম সারির গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদক দেশগুলিকে। আগামী ১২ বছরের মধ্যে (২০৩০) তারা সেই লক্ষ্যমাত্রায় আদৌ পৌঁছতে পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্টই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।

সূত্র: আনন্দবাজার

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত