ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

১৪ বছর ধরে স্বামী-ভাশুরের বীভৎস ধর্ষণ

১৪ বছর ধরে স্বামী-ভাশুরের বীভৎস ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে চলছিল ভাশুর ও স্বামীর অত্যাচার আর ধর্ষণ। সেই সঙ্গে যৌতুকের দাবিতে উৎপীড়ন। কি অবাক হচ্ছেন তাই না! এ খবরে অবাক হলেও এমনই এক বীভৎস ঘঠনা ঘটেছে। যার ফলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি খোদ পুলিশও হতবাক হয়ে গেছে ভুক্তভোগী গৃহবধূর কথা শুনে।

বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার কড়েয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ। ওই রাতেই বালিগঞ্জ পার্ক থেকে এক ব্যবসায়ী পরিবারের দুই ভাই সুরঞ্জন সেন ও নীলাঞ্জন সেনকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ।

গৃহবধূর অভিযোগ, বিয়ের পরপরেই ভাশুর তাকে ধর্ষণ করতে শুরু করেন। তরুণী বধূ সেটা স্বামীকে জানালে তিনি জানিয়ে দেন, এটা তাদের পারিবারিক প্রথা! এখানে ভাইয়েরা পরস্পরের স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। ঘরের বৌ বিষয়টি যাতে কাউকে না বলেন, সেজন্য তাকে শাসাতে থাকেন স্বামী। সেই সঙ্গে দাম্পত্য মিলনের মাধুর্য চুরমার করে বীভৎস ধর্ষণ চালিয়ে যেতে থাকেন তিনিও।

স্বামীর বিরুদ্ধেও বিকৃত কামনা চরিতার্থ করার অভিযোগও তুলেছেন ওই গৃহবধূ। ভাশুরের স্ত্রীর সঙ্গেও যে তার স্বামীর শারীরিক সম্পর্ক আছে, সেটা অচিরেই স্পষ্ট হয়ে যায় বধূর কাছে।

পুলিশ জানায়, স্বামী, ভাশুর ছাড়াও শ্বশুর-শাশুড়ি এবং বড় জায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন ওই যুবতী। পুরো ঘটনায় বড়় জায়ের বিবৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান এক পুলিশ কর্মকর্তা। তারা সেই নারীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করছেন। নিয়ম অনুযায়ী ওই গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে।

পুলিশি সূত্রের খবর, বছর তেত্রিশের ওই নারীর বাপের বাড়ি চেতলায়। ১৪ বছর আগে বালিগঞ্জ পার্কের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সেন পরিবারের ছোট ছেলে সুরঞ্জনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন, বড় জায়ের (ভাশুরের স্ত্রী) সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্ক আছে। তারপরে একদিন ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হন ভাশুর। সেদিন বধূ আত্মরক্ষা করতে পারলেও পরে আর পারেননি। ভাশুর তাকে নিয়মিত ধর্ষণ করে যেতে থাকেন। স্বামী তাকে জানান, তাদের বাড়ির এটাই চল!

সেই থেকে ১৪ বছর ধরে ভাশুর ও স্বামীর লালসা মিটিয়ে আসছিলেন ওই বধূ। অভিযোগ, প্রতিবাদ করলে অত্যাচারের মাত্রা বাড়ত। তাকে দিয়েই বিকৃত কামনা চরিতার্থ করতেন স্বামী। সেই সঙ্গে পণের দাবিতেও চলত অত্যাচার।

বছর ছয়েক আগে তিনি এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ায় অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে যায়। ওই ব্যবসায়ী পরিবার বধূকে জানায়, তারা কন্যাসন্তান চায় না। মেয়ের জন্মের পরে বাপের বা়ড়ি থেকে টাকা এবং শিশুর যাবতীয় জিনিসপত্র আদায় করা হয়েছিল।

সেন পরিবার অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে ওই বধূরই চরিত্রের দিকে আঙুল তুলছে। প্রশ্ন উঠছে, ওই গৃহবধূ এতদিন অত্যাচার সহ্য করছিলেন কেন? কেন যাননি পুলিশের কাছে? বাপের বাড়িতেই বা সব কিছু জানাননি কেন?

তরুণীর বাপের বাড়ির বক্তব্য, স্বামীর পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে মেয়ে মুখ বুঁজে ছিলেন।

শুক্রবার চেতলার বাড়িতে বসে অভিযোগকারিণীর মা বলেন, ‘মেয়ে প্রথমে কিছুই বলেনি। সম্প্রতি একদিন জামাইয়ের মা ফোন করে বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে যান। নইলে ছেলে বলছে, পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেবে।’ তারপরেই মেয়ে আর ছ’বছরের নাতনিকে নিয়ে চলে আসি।’

কিন্তু মেয়ে ভয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে যেতে চাইছিলেন না। তার ‘ট্রমা’ এখনও কাটেনি। শেষে বাপের বাড়ির সাহায্যে বৃহস্পতিবার কড়েয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই যুবতী।

ওই রাতেই পুলিশ যুবতীর ভাশুর ও স্বামীকে গ্রেপ্তার করতে গেলে সেন পরিবার বাধা দেয়। পুলিশকে মারধর করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তারের পরে সুরঞ্জন-নীলাঞ্জনকে শুক্রবার আলিপুর আদালতে তোলা হয়। পুলিশকে মারধরের অভিযোগে দু’জন অন্তর্বর্তী জামিন পেলেও গৃহবধূ-নির্যাতনের মামলায় তাদের সোমবার পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সূত্র: আনন্দবাজার

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত