ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘ওরা আমাকে মেরে ফেলবে’

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৪১

‘ওরা আমাকে মেরে ফেলবে’

তুচ্ছ কারনে বাপ-ভাইয়ের হাতে খুন হওয়ার ভয়ে পালিয়ে যাওয়া এক সৌদি তরুণী ব্যাংককের একটি হোটেল কক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে স্বেচ্ছাবন্দী অবস্থায় তিনি টুইটারের মাধ্যমের জাতিসংঘের সাহায্য চেয়েছেন যেন তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ বন্ধ করা হয়।

বিবিসির তথ্য মতে, রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনুন (১৮) নামের ওই তরুণীকে থাইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন অফিসাররা তাকে কুয়েতে ফেরত পাঠাতে চান। সেখানে তার পরিবার বসবাস করছে।

সোমবার তিনি কুয়েতে যাওয়ার ফ্লাইটে উঠতে অস্বীকার করেন। রাহাফ জানান, আমার ভাইরা, পরিবারের লোকজন এবং সৌদি দূতাবাস আমার জন্য কুয়েতে অপেক্ষা করছেন।ওরা আমকে মেরে ফেলবে। আমার জীবন হুমকির মুখে। আমার বাড়ির লোকজন তুচ্ছ সব কারনে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা রাহাফকে আশ্রয় দেয়ার বন্দোবস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। একের এক টুইট করে সামাজিক মাধ্যমে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন এই তরুণী।

রাহাফ অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় নিতে যাচ্ছিলেন, ফ্লাইট পরিবর্তন করার সময় ব্যাংকক বিমানবন্দরে আটকা পড়েন তিনি। সেখানে তার পাসপোর্ট ও ভিসা কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সেখান থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় জাতিসংঘের কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন তিনি, যাতে নিরাপদ কোনও দেশে তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরলে পরিবারের লোকজন খুন করে ফেলবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

টুইটারের রাহাফ জানান, রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে তিনি। কড়া নিয়ম-কানুন বাড়িতে। নিজের মতো করে বাঁচতে পারেন না। সামান্য চুলকাটার জন্য ছ’মাস ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছিল তাকে। শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারও করা হয় তার উপর। তাই অনেকদিন থেকেই পালানোর চেষ্টা করছিলেন। সম্প্রতি সেই সুযোগ আসে।

সপরিবারে কুয়েত বেড়াতে গিয়ে গোপনে থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিমান টিকিট কাটেন।

স্থানীয় সময় শনিবার ব্যাংকক বিমানবন্দরে নামেন রাহাফ। সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিমানবন্দরে তাকে আটকান থাইল্যান্ডের অভিবাসী দফতরের আধিকারিকরা। কেড়ে নেওয়া হয় তার পাসপোর্ট ও ভিসা। তাকে কুয়েত ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যাতে সেখান থেকে পরিবারের সঙ্গে সৌদি ফিরে যেতে পারেন।

কিন্তু বেঁকে বসেন ওই তরুণী। তাকে ছাড়াই উড়ে যায় কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি বিমানও। তারপর বিমানবন্দরের মধ্যে একটি হোটেলের ঘরে নিজেকে বন্দি করে নেন রাহাফ। সেখান থেকে টুইটারে একের পর এক বার্তা পোস্ট করতে শুরু করেন। তাতে কাজও হয়েছে।

ইতিমধ্যেই তার সমর্থনে টুইট করেছেন থাইল্যান্ডে জার্মানির রাষ্ট্রদূত জর্জ স্মিডট। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর সারা হ্যানসন-ইয়াঙ অস্ট্রেলিয়া সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, যাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে তড়িঘড়ি রাহাফকে অস্ট্রেলিয়ায় আনা যায়।

দক্ষিণ এশিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থী বিভাগের হাই কমিশনার ফিল রবার্টসন জানান, ‘রাহাফ যে চরম বিপদের মধ্যে রয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ওর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই বিমানবন্দরের মধ্যে হোটেলের ওই ঘরে জাতিসংঘকে ঢোকার অনুমতি দিতে হবে তাই প্রশাসনকে। আমাদের নির্দেশ মানতেই হবে। মেয়েটির বাবা সৌদি সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক। আর এমন ঘটনা নতুন নয়। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বহু দিন ধরেই হিংসার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েটির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বাড়ি ফিরলে সত্যি-ই মেরে ফেলা হতে পারে ওকে।’

মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে ইতিমধ্যেই যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে রাহাফের পরিবারের লোকজন। কিন্তু তাকে সমর্থন করেছেন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী তার এক বান্ধবী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই তরুণীও সৌদি আরব ছেড়ে পালিয়েছিলেন।

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ‘ইসলামের নিয়ম-কানুন মানে না রাহাফ। কিন্তু ওর পরিবারের লোকজন গোঁড়া। অমানুষিক অত্যাচার চালায় ওর উপর। এমনকি যৌন নির্যাতনও করা হয়। পরিবারের পুরুষরা নিজেদের সর্বেসর্বা বলে মনে করে। রাহাফ যে মুখ খুলেছে, এটা তাদের কাছে চরম অপমান। ওকে খুন না করলে সৌদি সমাজে ওদের মান থাকবে না। রাহাফের মতো কতশত মেয়ে এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।’

সৌদি সরকার এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাদের। এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আরও দৃঢ় হল।

আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত