ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

ব্রেক্সিট ভোটে থেরেসার হার, এরপর কি?

ব্রেক্সিট ভোটে থেরেসার হার, এরপর কি?

ব্রিটেনের পার্লামেন্টে ২৩০ ভোটের বিশাল ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী থেরেজা মের ব্রেক্সিট চুক্তি নাকচ হয়ে গেছে। এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন, এরপর কি ঘটতে চলেছে যুক্তরাজ্য ও ব্রিটিশ নাগরিকদের জীবনে?

আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার কথা। অর্থাৎ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য থেরেসার হাতে আর মাত্র ৭৩ দিন সময় আছে। এর মধ্যে যদি তার সরকার এ সংক্রান্ত কোনো চুক্তিতে না পৌঁছাতে পারেন তবে বড় ধনের সমস্যায় পড়তে পারে দেশটি।

চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে কী হবে?

এই চুক্তিতে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল - ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে গেলে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের কী হবে? আর বের হয়ে যাওয়ার জন্য কত অর্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে খোয়াতে হবে? পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগুলো কি ধরনের সুবিধা পাবে, সেটিও একটি বিষয়।

তাই ব্রিটেন নিজেদের জন্য একটি সুবিধাজনক চুক্তি করতে চাইছে। কোনো চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট হওয়ার অর্থ হল ব্রিটেনকে কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই রাতারাতি ইইউ’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এমনটা হলে সবদিক দিয়েই ক্ষতি যুক্তরাজ্যের।

কেননা তখন বেক্সিটের ফলে কোন খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে এবং সেগুলো কীভাবে মোকাবেলা সম্ভব, সেটি খতিয়ে দেখার কোনো সময়ই পাবে না দেশটি। আর এতে যারা ভুক্তভুগী হবে তাদের সহায়তার জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া দরকার বা তাদের নতুন ব্যবস্থার জন্য কিছু সময় দেয়ারও সুযোগ থাকবে না। সবকিছু গুটিয়ে রাতারাতি ইইউর সদস্য দেশগুলো থেকে ব্রিটিশদের সরে আসতে হবে।

ব্যবসায় কি প্রভাব পড়বে?

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোতে যেসব ব্রিটিশ নাগরিক ব্যবসা করছেন তাদের ওপর বাড়তি আমদানি রপ্তানি কর আরোপ হতে পারে। এছাড়া কৃষকদের জন্য ৬০ শতাংশ কর দিতে হতে পারে।

তার মানে তাদের পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। এর ফলে পণ্য বা সেবার জন্য ব্রিটিশদের বেশি অর্থ দিতে হবে। যুক্তরাজ্য যেসব বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ইইউ’র দেশগুলোতে নানা সুবিধা পাচ্ছিলো সব সুবিধাও তারা হারাবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সবার সাথে নানা ইস্যুতে তাকে আবার দেন-দরবার করে পৃথকভাবে নতুন নতুন চুক্তি করতে হবে।

ব্রেক্সিটের বিপক্ষের অনেকেই মনে করেন হঠাৎ এভাবে বের হয়ে গেলে ব্রিটেনে বিভিন্ন পণ্যের সংকট দেখা দেবে। পণ্যের দামও বাড়বে যেগুলো কম খরচে ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে আসতো।

অভিবাসন ইস্যুতে সুবিধা-অসুবিধা

ব্রেক্সিট কার্যকর হলে অভিবাসন ইস্যুতে সুবিধা পাবে ব্রিটিশরা। কেননা তখন নিজের মতো আইন পাস করতে পারবে যুক্তরাজ্য। এতদিন অভিবাসন বিষয়ে ইইউ’র গৃহীত নীতিমালা মেনে চলতে হতো তাদের।

ব্রিটেনে কর্মরত ইউরোপের অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের সম্পর্কে বিরূপ মনোভাবের কারণেই অনেকে ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ঐ সব নাগরিকেরা তাদের কাজ দখল করে নিচ্ছে বলে তাদের অনেকেই অপছন্দ করেন।

কিন্তু এর ফলে ইইউভুক্ত দেশে যেসব ব্রিটিশরা কাজ করছেন, তাদের জন্যেও তৈরি হবে অনিশ্চয়তা। দুই পাশের যাতায়াত ভিসা আর কাজের পারমিট পাওয়ার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ হয়ে যাবে। হঠাৎ করে বদলে যাবে বহু অভিবাসীর জীবন।

কিন্তু আবার ব্রিটিশদের অনেকেই সে দেশে বসবাসরত অন্যান্য দেশের অভিবাসী বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেয়া অভিবাসীদের পছন্দ করেন না।

লন্ডনের বার্কিং অ্যান্ড ডাগেনহ্যাম কাউন্সিলের কাউন্সিলর এবং লন্ডনে বাঙালি কমিউনিটির একজন নেতা সৈয়দ ফিরোজ গনি বলছেন, একটা অনিশ্চয়তা রয়েছে সেখানকার সকল অভিবাসীদের উপরও।

ব্রিটেনের রাজনৈতিক পরিবর্তন

বেক্সিট ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসতে চলেছে। মঙ্গলবার পার্লামেন্টে ভোটের পর দেশটির লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন সরকারের প্রতি একটি অনাস্থা ভোটের আহবান জানিয়েছেন।

২০১১ সালের একটি আইন অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে প্রতি পাঁচ বছর পরপর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসেবে দেশটিতে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২২ সালে।

কিন্তু বিরোধী দলের আনা অনাস্থা ভোটে থেরেসা মে হেরে গেলে তার সরকারকে সরে যেতে হবে। দিতে হবে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা। সরকার যদি অনাস্থা প্রস্তাব থেকে বেঁচে যায় তাহলে থেরেসা মে নতুন করে ব্রেক্সিট বিষয়ে সংসদে ভোটের ডাক দিতে পারবেন।

নতুন করে ব্রেক্সিট বিষয়ে সংসদে ভোটেও যদি কিছু না হয়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে দেন-দরবার করে ব্রিটেনের সুবিধামতো কোনো চুক্তি ছাড়াই ইইউ অঞ্চল ছেড়ে বের হয়ে যেতে হবে।

প্রসঙ্গত, আজ থেকে ৪৫ বছর আগে (১৯৭৩ সালে) ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েছিলো ব্রিটেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে ঐতিহাসিক এক গণভোটে সে দেশের নাগরিকরা এই অঞ্চলে থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এরপর থেকেই ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিতর্ক করে চলেছেন ব্রিটেনের রাজনৈতিক নেতারা। এখন আবার অনেকেই ইইউর সঙ্গে থাকার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। ফলে এখন অনেকেই নতুন করে গণভোটও চাইছেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত