হিন্দু নন, রাহুল গান্ধী মুসলমান!
ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি একটি পুরনো সাদা-কালো ছবি ভাইরাল হয়েছে। এতে বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী ও তার পিতা রাজীব গান্ধীকে মোনাজাত করার ভঙ্গীতে কাউকে শেষ বিদায় জানাতে দেখা যাচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কিছু সমর্থক ওই ছবি ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে পোস্ট করে দাবি করছেন, ‘গান্ধী পরিবার যে আসলে মুসলিম’ তা এই ছবি থেকেই প্রমাণিত। তারা আরও বলছেন, ওই ছবিটি নাকি ইন্দিরা গান্ধীকে শেষ বিদায় জানানোর।
‘ইন্দিরা গান্ধীর মরদেহের সামনে রাজীব গান্ধী ও রাহুল গান্ধী কলমা পড়ছেন, অথচ সারা ভারত তাদের না কি ব্রাহ্মণ হিসেবে জানে’- মন্তব্য করা হয়েছে ওই ছবির নিচের ক্যাপশনে।
তবে ভারতে ফেক নিউজ বা ভুয়ো খবর শনাক্ত করার কাজে অগ্রণী পোর্টাল ‘অল্ট নিউজ’জানাচ্ছে, ওই ছবিটি মোটেই ইন্দিরা গান্ধীকে শেষ বিদায় জানানোর নয়। তারা বলছে, ছবিটি পাকিস্তানের পাশতুন নেতা খান আবদুল গফফর খান বা 'সীমান্ত গান্ধী'র অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার। তিনি বাচা খান নামেও পরিচিত ছিলেন।
কোনও মুসলিম ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে শেষ বিদায় জানানোর সময় অনেকেই মোনাজাতের ভঙ্গী করেন। রাহুল গান্ধী ও তার পিতাও ঠিক একই জিনিস করেছিলেন বলে তারা ধারণা করছে।
তবে ওই একই ছবিতে ভারতের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পি ভি নরসিমহা রাওকে হাত জোড় করে হিন্দু রীতিতে প্রণামের ভঙ্গীতে ওই প্রয়াত ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যাচ্ছে।
সে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনেকেই আবার লিখছেন, ‘নরসিমহা রাও যেখানে ওনাকে প্রণাম করছেন, সেখানে গান্ধীরা কেন কলমা পড়ছেন সেটা ওনারাই ভাল বলতে পারবেন!’
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধীকে অবশ্য তার ধর্ম নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রোলদের আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে।
ক্যাথলিক মা সোনিয়া গান্ধীর সন্তান হিসেবে তিনি মোটেই হিন্দু নন, এমন একটা প্রচারের মুখে তার দল কংগ্রেসও রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘রাহুল গান্ধী একজন পৈতাধারী হিন্দু ব্রাহ্মণ।’
কিন্তু তার পরও যে রাহুল গান্ধীর ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস নিয়ে রাজনৈতিক আক্রমণ থামছে না, তা সবশেষ এই ঘটনা থেকেই প্রমাণিত।
ভারতে কংগ্রেস বা বামপন্থী দলগুলোর নেতৃত্বকে এভাবে যারা ধর্ম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে আক্রমণ করছেন, দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা হিন্দুত্ববাদী বিজেপি বা তাদের শাখা সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত।
রাহুল গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর মোনাজাত করার ছবিটি যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়িয়েছে, সেটি বিজেপির যুব শাখার কর্মী মনোজ কুমার রানার।
মনোজ কুমার রানার পোস্ট করা গান্ধীদের ছবিটি নিয়ে তদন্ত করতে নেমে অল্ট নিউজ অবশ্য প্রমাণ পেয়েছে, ছবিটি কোনও মতেই ইন্দিরা গান্ধীর শেষ বিদায়ের নয়।
বরং তারা বলছে, ১৯৮৮তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সুইডেন সফরে যাওয়ার সময় ঘন্টা দুয়েকের জন্য পাকিস্তানের পেশোয়ারে নেমে প্রয়াত 'সীমান্ত গান্ধী'কে শ্রদ্ধা জানিয়ে গিয়েছিলেন - ছবিটি তখনকারই।
এর সমর্থনে পাকিস্তানের একাধিক ওয়েবসাইট ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন থেকেও প্রমাণ দাখিল করেছে তারা।
ইন্দিরা গান্ধীর শেষকৃত্যের সময়কার ছবির সঙ্গে এই বিতর্কিত ছবিটি মিলিয়ে দেখে আরও জানানো হচ্ছে, পরের ছবিটিতে রাহুলের বয়স অনেক বেড়ে গেছে বলেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
কাজেই তাদের যুক্তি দুটো ছবি কিছুতেই এক সময়ের হতে পারে না!
এই সেই ছবি যা নিয়ে ভারত জুড়ে চলছে বিতর্ক
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমএ/
