ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

যেভাবে পাকিস্তানে হামলা চালাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী

যেভাবে পাকিস্তানে হামলা চালাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী

কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে ভারত। নৈয়াদিল্লি ইসলামাবাদকে অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে। পাশাপাশি সামরিক হামলা চালানোরও তোড়জোর শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনাদের কনভয়ে চালানো ওই হামলায় কমপক্ষে ৪৪ জওয়ান নিহত এবং আরো ৪১ জন আহত হয়েছিল। পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই- মোহম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।

স্বাভাবিক ভাবেই ওই হামলার পর পাকিস্তানে পাল্টা হামলার ছক কষছে ভারত। আর এ নিয়ে নানা সামরিক পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ভারতের বাংলা দৈনিক ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’। ওই পরিকল্পনায় পাকিস্তানে জইশ-ই- মোহম্মদের নেতা মাসুদ আজহারের ঘাঁটি লক্ষ্য করে সরাসরি বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা বলা হয়েছে।

তবে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাড ধ্বংস করতে ওই হামলার জন্য প্রয়োজন নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্য। অবশ্য এই হামলা চালাতে গিয়ে যদি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ লেগে তা কীভাবে সামাল দিতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সেই হিসাবও মাথায় রাথায় রাখতে হবে বলে মনে করছে দেশটির সামরিক বিশেষজ্ঞরা।

পুলওয়ামার হামলার পরে প্রধানমন্ত্রী মোদি ইসলামাবাদকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তানকে বড় মাপের মূল্য চোকাতে হবে।

সোমবার ওড়িশ্যায় এক সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘ভারতীয় বাহিনীর সফল অভিযানের ফলে কাশ্মীরে জঙ্গিরা হতাশ হয়ে পড়েছে। তাদের চাঙ্গা করতেই পাকিস্তান পুলওয়ামায় হামলা চালিয়েছে। পাল্টা আঘাত চালাতে বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।’

ভারতের প্রাক্তন সামরিক শীর্ষ কর্তারা মনে করছেন, সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণ রেখার এপার থেকে গোলাগুলি ছোড়া বা ফের সার্জিকাল স্ট্রাইকের থেকে অনেক বেশি নিরাপদ বিকল্প মাসুদ আজহার এবং তার জইশ-ই- মোহম্মদের জঙ্গি শিবিরগুলিতে ‘প্রিসিশন এয়ার স্ট্রাইক’(নিখুঁত বিমান হামলা)।

ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত এয়ার চিফ মার্শাল ফালি হোমি মেজর বলেন, ‘আমাদের বিমান বাহিনীর সেই ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তার জন্য একেবারে নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্য থাকতে হবে।’

অর্থাৎ পাকিস্তানের ঠিক কোথায় জইশ-ই-মোহম্মদের জঙ্গি শিবির রয়েছে আছে সে বিষয়ে নির্ভুল গোয়েন্দা তথ্য থাকতে হবে।

যদিও প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা সামরিক বাহিনীকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গত শনিবার পাক-সীমান্ত ঘেঁষা পোখরানে ভারতীয় বিমান বাহিনী আকাশ থেকে মাটিতে হামলা চালানোর মহড়া দিয়েছে। বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া পোখরানে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমরা কতটা জোরের সঙ্গে, কত দ্রুত এবং কত নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত করতে পারি, সেই ক্ষমতা তুলে ধরছি।’

সামরিক হামলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে রুগ্‌ণ পাকিস্তানের উপরে আর্থিক চাপ বাড়াতে অন্য অঙ্কও কষা হচ্ছে। পাক সরকার যে ভাবে জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য করে, তা বন্ধ করতে এবং পুলওয়ামার ঘটনায় পাক যোগ প্রমাণ করতে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর হাতে এ নিয়ে প্রামাণ্য নথি তুলে দেওয়া হবে।

জঙ্গিদের আর্থিক মদত বন্ধ করতে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি সক্রিয়। এ নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন গোয়েন্দা দফতরগুলির শীর্ষ কর্তারা।

তবে সামরিক হামলার ছক কষতে গিয়ে দু’টি বিষয় নিয়ে চিন্তায় সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা।

এক, চালে ভুল হলে পুরো দমে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। সেই ঝুঁকি নেওয়া হবে কি না, তা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, পাল্টা হামলা চালানোর সঠিক সময় কোনটি।

সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা মনে করছেন, যে কোনও ‘গোপন হামলা’থেকেই সরাসরি যুদ্ধ লেগে যাওয়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না; তা সার্জিকাল স্ট্রাইক বা বিমান হামলা যেটাই হউক না কেন। তাই এই ধরনের কোনো হামলার আগে পুরো যুদ্ধে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে, যা স্বাভাবিকভাবেই সময় সাপেক্ষ বিষয়।

আর সামরিক বাহিনীর নীতি বলে, লোহা গরম থাকতে নয়, হাতুড়ি মারা উচিত ঠাণ্ডা হয়ে যাবার পর।

স্বাভাবিকভাবেই পুলওয়ামার পরে ভারতের দিক থেকে পাল্টা হামলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত পাকিস্তান। তাই অনেকের মত, তাড়াহুড়ো নয়, বরং ধীরে সুস্থেই বদলা নেয়া উচিত।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক উপপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনান্ট জেনারেল রাজ কাড়িয়ার মনে করছেন, ‘পাকিস্তানকে বার্তা দিতে হলে একেবারে ভিতরে ঢুকে মারতে হবে।’

ভারতের সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান ফালি হোমি মেজর বলেন,‘পাকিস্তানের নিজের মাটিতে হামলা চালানোর বদলে, আজাদ কাশ্মীরে হামলা চালালে পাল্টা জবাব দেওয়ার আগে দশবার ভাববে পাকিস্তান।’

সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, ‘প্রিসিশন এয়ার স্ট্রাইক’-এর কথা ভাবা হলেও কোনোভাবেই তা জনবহুল এলাকায় করা যাবে না। কারণ নিরীহ মানুষের প্রাণ গেলে ভারতের দিকেই আঙুল উঠবে। সেই জন্যই পাকিস্তানের মাটি থেকে একেবারে নির্ভুল গোয়েন্দা তথ্য চাই।

এই প্রসঙ্গে সোমবার এক সাক্ষাৎকারে ফালি হোমি মেজর মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই নিশ্চয়তা ছিল না বলেই আমেরিকা পাকিস্তানের এবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের ডেরায় আকাশ থেকে বোমা ছোড়েনি। তার বদলে মার্কিন নেভি সিল-এর কমান্ডোরা ঝুঁকি নিয়ে লাদেনের ডেরায় নেমে তাকে হত্যা করেছিল।

পুলওয়ামার হামলার ঠিক আগে, ১৩ ফেব্রুয়ারি ইরানেও নিরাপত্তা বাহিনীর উপরে একই ধরনের বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে হামলা হয়েছে। সেই হামলার জন্যও পাকিস্তানের দিকেই আঙ্গুল উঠেছে।

তাই ভারতের অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনান্ট জেনারেল ডি এস হুডার প্রশ্ন, পাকিস্তানের প্রতিবেশী আফগানিস্তান, ইরান, ভারত— সবাই পাক মদদপুষ্ট সন্ত্রাসের শিকার। এদের থেকে প্রত্যাঘাত আসবেই। দেশটির ওপর ড্রোন হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রও। এরপরেও আর কী হলে পাকিস্তানের শিক্ষা হবে কে জানে!

সূত্র: আনন্দবাজার

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত