ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

মোদির পাকিস্তান হামলার হুমকির পিছনে ভোট রাজনীতি

মোদির পাকিস্তান হামলার হুমকির পিছনে ভোট রাজনীতি

চলতে বছরের এপ্রিল-মে মাসে ভারতে লোকসভা নির্বাচন। কাশ্মীর হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোদি সরকারের তর্জন গর্জনকে ভোট বেশি পাওয়ার কৌশল হিসেবে দেখছেন সে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এ নিয়ে শনিবার ভারতীয় বাংলা দৈনিক ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ বলছে, ‘এক পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘গর্জন’ করেই চলেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। তবে বিরোধী এবং রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য ...সেগুলির বাস্তব উপযোগিতা বা মূল্য বিশেষ নেই।

ভারতের কেন্দ্রীয় জলসম্পদমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী বৃহস্পতিবার ‘পাকিস্তানকে জল দেওয়া বন্ধ করে’ দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জল বন্ধ করে দেওয়ার জিগির তুলে পঞ্জাবসহ কিছু রাজ্যে ভোটে ফায়দা তোলার কথা ভাবতে পারে শাসক দল। কিন্তু এটি একান্তই অবাস্তব। বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে জলচুক্তি হয়েছিল। একতরফা ভাবে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এলে ভারতকে বিশ্বব্যাঙ্ককে জবাবদিহি করতে হবে।

তা ছাড়া, উচ্চ অববাহিকায় অবস্থিত ভারত যদি পাকিস্তানকে জল বন্ধ করে দেয়, তা হলে এর পর চীন ব্রহ্মপুত্রের জল বন্ধ করলে ভারতের বলার কিছু থাকবে না। তাছাড়া ভারত সিন্ধু জলচুক্তি থেকে বেরিয়ে এলে জম্মু ও কাশ্মীরে বন্যার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। ফলে বড় রকমের সমস্যায় পড়বে ভারতই।

জলসম্পদমন্ত্রীর এই হুমকি নিয়ে প্রশ্ন করা সত্ত্বেও তাই মুখ খুলতে চায়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে কংগ্রেস বক্তব্য, ‘এ যে নেহাতই ফাঁকা আওয়াজ, তা প্রমাণিত। উরি হামলার পরেও ঠিক একই কথা বলেছিল কেন্দ্র।’

আবার পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই বলেছিলেন, দেশে সেনাদের রক্ত টগবগ করে ফুটছে। বড় মূল্য দিতে হবে পাকিস্তানকে।

তার ঠিক এক সপ্তাহ পরে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ প্রয়োজন’।

এখন প্রশ্ন উঠছে, এক সপ্তাহের মধ্যেই মোদির ‘জোশ’ এত কমে এল কেন ?

কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ছ’দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ফোন করেন ভারতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে।

সূত্রের খবর, ফোনেই ‘যথেষ্ট কড়া ভাবে’ সাউথ ব্লককে জানিয়ে দেওয়া হয়, একতরফা সংঘাতের মনোভাব না নিতে। যা করার, আমেরিকার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে করতে ডোভালকে পরামর্শ দেন বোল্টন।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শৃঙ্গলা দিল্লি এসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানিয়ে দেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্কটজনক সময়ে এই অঞ্চলে অশান্তি চাইছে না হোয়াইট হাউস। যা করার, কূটনৈতিক ভাবে করতে হবে।

সূত্রের মতে, কূটনৈতিক মন্থর প্রক্রিয়া ভোটের রাজনীতিতে লাভজনক নয়। তাই পাক-নীতির প্রশ্নে ‘বাহুবলী’ সংলাপ আমদানি করতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও বলেছেন, ‘পাকিস্তান আমাদের ভয়ে কাঁপছে। ভারতের প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় তারা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গ্রামগুলি ফাঁকা করে দিয়েছে। আমাদের মনে আগুন জ্বলছে। শুধু সময় এবং সুযোগের অপেক্ষা।’

কিন্তু বাস্তবে বড়জোর নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নির্দিষ্ট জঙ্গিদের উপর কিছু অভিযান হতে পারে। তার বেশি কিছু অদূর ভবিষ্যতেও করা সম্ভব নয়।

এই প্রসঙ্গে আর একবার প্রশ্ন উঠেছে বহুচর্চিত সার্জিকাল স্ট্রাইকের ‘প্রমাণ’ ও ‘কার্যকারিতা’ নিয়েও।

সূত্র: আনন্দবাজার

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত