ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

উত্তর কোরিয়া সংসদ নির্বাচন, এক প্রার্থী, ১০০% ভোট

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০১৯, ০৩:৩৫  
আপডেট :
 ১১ মার্চ ২০১৯, ০৪:৩৫

উত্তর কোরিয়া সংসদ নির্বাচন, এক প্রার্থী, ১০০% ভোট

উত্তর কোরিয়ার ভোটাররা রোববার সে দেশের ক্ষমতাহীন রাবার স্ট্যাম্প সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট কিম জং-আন ক্ষমতা গ্রহণের পর সে দেশে দ্বিতীয়বার এই নির্বাচন হলো।

উত্তর কোরিয়ার সংসদে আনুষ্ঠানিক নাম 'সুপ্রিম পিপলস্ অ্যাসেমব্লি' (এসপিএ) এবং এতে ভোটদান বাধ্যতামূলক। সরকারি তালিকার বাইরে এতে অন্য কোন প্রার্থী বেছে নেয়ার সুযোগ থাকে না। বিরোধী দল বলেও কিছু নেই। এই ধরনের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ১০০%। সরকার যে জোট তৈরি করবে সেই জোটকেই সর্বসম্মতভাবে ভোট দিতে হবে।

উত্তর কোরিয়া সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। কিম পরিবার বংশপরম্পরায় এই দেশটি শাসন করছে। শাসক পরিবার এবং ক্ষমতাসীন নেতার প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য দেখানো প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক।

কীভাবে ভোট হয়?

নির্বাচনের দিনে ১৭ বছর বয়সের ওপর সব নাগরিককে ভোট দিতে হয়। উত্তর কোরীয় বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ ফিয়োদর টার্টিস্কি বলেন, 'আনুগত্যের প্রমাণ হিসেবে আপনাকে খুব ভোরে নির্বাচন কেন্দ্রে হাজির হতে হবে। এর মানে হলো সবাই একসাথে হাজরি হওয়ার পর ভোটকেন্দ্র লম্বা লাইন।'

এরপর ভোটার যখন ভোটকেন্দ্রে ঢুকবেন, তখন তার হাতে একটি ব্যালট পেপার দেয়া হবে। ব্যালট পেপারে একটাই নাম থাকবে। সেখানে কোন কিছু লিখতে হবে না। কোন বাক্সে টিক চিহ্ন থাকবে না। ভোটার শুধু ব্যালট পেপারটি নিয়ে একটি বাক্সে ভরে দেবে। ভোটের বাক্সটিও সাধারণত খোলা অবস্থায় রাখা হয়।

নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটের বুথ থাকে। কিন্তু কেউ সেখানে যায় না, বলছেন বিশ্লেষকেরা, কারণ সেটা করা হলে সেই ভোটারের আনুগত্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হতে পারে। আপনি চাইলে ব্যালট পেপারের নামটিও কেটে দিতে পারেন। মি. টার্টিস্কি বলেছেন, কিন্তু সেটা করলে নিশ্চিতভাবেই সরকারের গোপন পুলিশ আপনার সম্পর্কে খোঁজ-খবর শুরু করবে। এধরনের কাজ যারা করেছে, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পাগল আখ্যা দেয়া হয়েছে।

'ভোট দেয়া' শেষ হয়ে গেলে ভোটাররা নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরে যাবেন এবং সেখানে উপস্থিত অন্যান্য ভোটের সাথে মিলে আনন্দ প্রকাশ করবেন এই কারণে যে দেশের সুযোগ্য নেতাদের প্রতি সমর্থন জানাতে পেরে আপনি খুবই খুশি। মিনইয়াং লি বলেছেন, 'উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে ভোটের দিনটিকে বরাবর একটি উৎসব হিসেবে দেখানো হয়।' তিনি উত্তর কোরিয়ার ওপর 'এনকে নিউজ' নামে একটি নিউজ ওয়েবসাইটের সাংবাদিক।

যেহেতু ভোটদান বাধ্যতামূলক, তাই নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণ করে কর্তৃপক্ষ জানতে পারে কে ভোট দিতে যায় নি, কিংবা কে দেশ ছেড়ে চীনে পালিয়ে গেছে।

সংসদের হাতে তাহলে কী ক্ষমতা রয়েছে?

'সুপ্রিম পিপলস্ অ্যাসেমব্লি' (এসপিএ) মূলত ক্ষমতাহীন, রাজনীতির ভাষায় যাকে রাবার-স্ট্যাম্প সংসদ বলা হয়। প্রতি পাঁচ বছর পর পর সংসদ নির্বাচন হয়। এটিই রাষ্ট্রের একমাত্র আইন প্রণয়নকারী শাখা। উত্তর কোরীয় বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফিয়োদর টার্টিস্কি বলেন, 'আমি জানি বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো প্রায়ই বলে: 'এসপিএর ক্ষমতা খুবই সামান্য। কিন্তু আমি বলবো এর ক্ষমতা আসলে শূন্য।'

তত্ত্বগতভাবে সংসদের হাতে যে ধরনের ক্ষমতা থাকা উচিত তার কিছু মাত্র নেই এসপিএর হাতে। সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন পেলে সে দেশের সংবিধানকে বদলে ফেলা সম্ভব। আর সংসদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কিম জং-উনকে তারা ক্ষমতা থেকে অপসারণ করাও সম্ভব, বলছেন বিশ্লেষকরা।

তবে সমস্যা হলো এসপিএর অধিবেশনও খুব নিয়মিতভাবে হয় না। প্রথম অধিবেশনের ছোট একটি কমিটি গঠন করা হয়, যেটি সংসদের পক্ষ হয়ে কাজ করে।

উত্তর কোরিয়ায় কী বিরোধীদল নেই?

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন উত্তর কোরিয়ায় বিরোধীদলের কোন অস্তিত্বই নেই। কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে সে দেশের সংসদে তিনটি দল রয়েছে। কিম জং-উনের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টির রয়েছে সবচেয়ে বেশি আসন। অন্যদিকে, সোশাল ডেমোক্র্যাট পার্টি আর চন্ডোইস্ট চঙ্গু পার্টির সামান্য কিছু আসন রয়েছে।

তবে এই তিনটি দলের মধ্যে বিশেষ কোন তফাৎ নেই। তারা সবাই মিলে তৈরি করেছে এক জোট যেটি মূলত দেশ পরিচালনা করে। এই জোটের নাম 'ডেমোক্র্যাটিক ফন্ট ফর দ্য রিইউনিফিকেশন অফ কোরিয়া।'

  • সর্বশেষ
  • পঠিত