ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

হঠাৎ আকাশে জ্বলন্ত গ্রহাণু

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০১৯, ০৯:৫৬  
আপডেট :
 ১৯ মার্চ ২০১৯, ১২:২১

হঠাৎ আকাশে জ্বলন্ত গ্রহাণু

গত ডিসেম্বরে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ওপর বিশাল এক অগ্নিগোলকের বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যা ছিল গত তিরিশ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিস্ফোরণের ঘটনা।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা বলছে, তখন এই বিস্ফোরণের ঘটনা অনেকের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল, কারণ এটি ঘটেছিল রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপের কাছে বেরিং সাগরের ওপর।

নাসা বলছে, মহাকাশ থেকে একটি একটি গ্রহাণু (অ্যাস্টরয়েড) পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সংস্পর্শে আসার পর তা বিস্ফোরিত হয়। হিরোশিমায় যে পরমাণু বোমা ফেলা হয়েছিল, তার তুলনায় এই বিস্ফোরণ ছিল দশগুণ বা তারও বেশি শক্তিশালী।

নাসার প্ল্যানেটারি ডিফেন্স অফিসার লিন্ডলে জনসন বিবিসিকে জানান, এত বড় অগ্নিগোলক পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রতি একশো বছরে বড় জোর দুই বা তিন বার দেখা যায়।

নাসাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ১৪০ মিটারের বড় গ্রহাণু খুঁজে বের করার। বিশ্বের বায়ুমন্ডলে এর আগে এক ধরণের বড় বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছিল ছয় বছর আগে রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্কে।

যা জানা গেছে, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে এই গ্রহাণু সেকেন্ডে ৩২ কিলোমিটার বেগে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। গ্রহাণুটি ছিল আকারে মাত্র কয়েক মিটার প্রশস্ত। পৃথিবীর ২৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার উপরে এটি বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের সময় যে এর শক্তি ছিল ১৭৩ কিলোটন।

এত বড় একটি বিস্ফোরণ কেন কারও নজরে পড়লো না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি ঘটেছিল বেরিং সাগরের ওপর। আর এই বিস্ফোরণের সময় এমন কোন প্রতিঘাত তৈরি হয়নি, যা সংবাদ শিরোনাম হতে পারে।

তারা বলছেন, পৃথিবীর বেশিরভাগটাই যে পানি, সেটি এ ধরণের বিস্ফোরণ থেকে এক ধরণের সুরক্ষা দিচ্ছে আমাদের। হিউস্টনে নাসার এক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এই বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

আমেরিকার মিলিটারি স্যাটেলাইটগুলো এই বিস্ফোরণ সনাক্ত করতে পেরেছিল। তারাই মূলত এ ঘটনার কথা জানায় নাসাকে।

নাসা চেষ্টা করছে এমন প্রযুক্তি তৈরি করার যা দিয়ে নির্ভুলভাবে বলা যাকে কোন গ্রহাণু কখন পৃথিবীর কোথায় এসে আঘাত হানতে পারে।

নাসার লিন্ডলে জনসন বলেন, বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলো উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়ার মধ্যে যে রুট ধরে চলাচল করে, তার খুব বেশি দূরে ছিল না এই বিস্ফোরণস্থল। তাই বিজ্ঞানীরা এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে যাচাই করে দেখছে, তাদের চোখে এই বিস্ফোরণ ধরা পড়েছিল কীনা।

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস নাসাকে দায়িত্ব দেয় পৃথিবীর কাছাকাছি ঘুরতে থাকা ৯০টি অ্যাস্টরয়েড বা গ্রহাণু খুঁজে বের করার, যেগুলোর আকার ১৪০ মিটার বা তার চেয়ে বড়। কারণ এই আকারের গ্রহাণু যদি পৃথিবীতে আঘাত হানে, তা বিরাট প্রলয় ঘটিয়ে দিতে পারে।

নাসাকে এই কাজের জন্য ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই কাজ শেষ হতে আরও অন্তত ৩০ বছর সময় লাগবে।

নাসা যখন এরকম কোন বড় আকারের গ্রহাণু চিহ্ণিত করতে পারে, তখন এটি কখন পৃথিবীর কোন জায়গায় আঘাত হানতে পারে এবং এর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, সেটিও তার হিসেব করে নির্ভুলভাবে বলতে পারে।

গত বছরের জুনে তিন মিটারের একটি ছোট্ট অ্যাস্টরয়েড দেখতে পায় আরিজোনার এক অবজারভেটরি। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা তখন এটির গতিপথ নির্ভুলভাবে হিসেব কষে বের করেন।

এতে দেখা যায়, এই গ্রহাণু দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে আঘাত হানবে। বাস্তবে তাই ঘটেছিল। বোতসোয়ানার একটি খামারের ওপরে গিয়ে এটি বিস্ফোরিত হয়। পরে এই গ্রহাণুর অনেক অবশেষ সেখানে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত