ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ঘূর্ণিঝড় ফণী: স্কুল ছুটি টানা ২ মাস!

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৩ মে ২০১৯, ১০:২৮

ঘূর্ণিঝড় ফণী: স্কুল ছুটি টানা ২ মাস!

গ্রীষ্মে গরম তো পড়বেই। তার জন্য আছে গরমের ছুটি। ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতেই পারে। তার জন্য সাময়িক ভাবে বন্ধ হতেও পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রাজ্যে সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে টানা দু’মাসের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে স্কুলশিক্ষা সচিবের একটি নির্দেশিকায়। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে তুমুল বিতর্ক।

বিতর্কের মূলে আছে দু’টি নির্দেশিকা-বিজ্ঞপ্তি এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য।

স্কুলশিক্ষা সচিব মণীশ জৈন একটি নির্দেশিকায় জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী আর প্রচণ্ড গরমের জন্য আজ, শুক্রবার থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ছুটি চলবে স্কুলে।

নবান্নের একটি বিজ্ঞপ্তি জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার উপকূলবর্তী আট জেলা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতায় সব স্কুল ও মাদ্রাসায় ছুটি থাকবে। এই দু’দিন ছাত্র বা শিক্ষক, কাউকেই স্কুলে যেতে হবে না।

এদিকে শিক্ষামন্ত্রী জানান, এই ছুটি শুধু ছাত্রছাত্রীদের। অতিরিক্ত ছুটির দিনগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যথারীতি স্কুলে হাজির হতে হবে।

আইসিএসই, সিবিএসই স্কুলেও ছুটি দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘প্রচণ্ড গরম। জেলায় জেলায় যাচ্ছি, দেখছি তো। কোথাও কোথাও দেখছি, পানি নেই। এই পরিস্থিতিতে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে? তাই ছুটি দিয়ে দেয়া হল।’

ঘূর্ণিঝড়ের পরে আবহাওয়া যদি তুলনায় শীতল হয়ে যায়, তখন কী হবে? এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তখন ভেবে দেখা যাবে। বাচ্চাদের কষ্ট হচ্ছে। তাই এই ছুটি শুধু ছাত্রছাত্রীদের। শিক্ষকদের নয়। অতিরিক্ত ছুটির দিনগুলোতে তাদের স্কুলে আসতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেন আসবেন না? অন্যেরা অফিসে কাজ করছেন না?’

নিয়ম অনুযায়ী ১৭ মে থেকে ৫ জুন গরমের ছুটি থাকে। এবার তার সঙ্গে এতদিন অতিরিক্ত ছুটি দেওয়ায় শিক্ষক শিবির বিস্মিত। স্কুলগুলোতে আগস্টে দ্বিতীয় টার্মের পরীক্ষা আছে। টানা দু’মাস ছুটি থাকলে কী করে পাঠ্যক্রম শেষ হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। অতিরিক্ত ছুটিতে পড়ুয়াহীন স্কুলে শিক্ষকেরা কী করবেন, প্রশ্ন সেটাও।

এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘এভাবে ছুটি দিয়ে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দিতে চাইছে সরকার। শিক্ষার্থীরাই যখন স্কুলে আসবে না তখন শিক্ষকেরা স্কুলে গিয়ে কী করবেন?’

প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রীদাম জানা বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষক মহলকে অবাক করেছে।’

পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের অভিযোগ, ‘এরকম ‘তুঘলকি’ সিদ্ধান্ত রাজ্যের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করছে।’

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের প্রশ্ন? প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য যদি ক্লাস বন্ধ থাকে, শিক্ষকদের আসতে হবে কেন? ঘূর্ণিঝড়ের জন্য দু’দিন বিদ্যালয় বন্ধ রেখে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা উচিত ছিল। আমরা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’

আইসিএসই বোর্ডের সচিব জেরি অ্যারাথুন জানান, টানা ছুটি দেওয়া হবে কি না, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোর উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের আইসিএসই পূর্বাঞ্চলীয় স্কুল সংগঠনের সভাপতি তথা রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের জন্য শুক্রবার ছুটি দিয়েছি। এর পরে ভেবে দেখবো।’

সিবিএসই পরিচালিত বেশ কিছু স্কুল শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করেছে। সিবিএসই বোর্ড পরিচালিত সাউথ পয়েন্টের পক্ষে কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘ফণীর জন্য আমরা শুক্র ও শনিবার ছুটি দিচ্ছি। পরের সপ্তাহে ক্লাস হবে। তার পরে নির্ধারিত গরমের ছুটি যেমন থাকে, সেরকমই থাকবে।’

শ্রীশিক্ষায়তন স্কুলের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য বলেন, ‘যেটুকু জানতে পেরেছি, ঘূর্ণিঝড় শুক্রবার বিকেলের আগে শহরে আসছে না। তাই আমরা শুক্রবার অর্ধদিবস ছুটি দিচ্ছি। তার পরে গরমের ছুটি যেমন হয়, তেমনই হবে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত