ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

আরো শক্তিশালী হয়ে ক্ষমতায় মোদি

আরো শক্তিশালী হয়ে ক্ষমতায় মোদি

ফের ভারতের ক্ষমতায় নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি। এবার আরো বীর বিক্রমে। আগের চেয়েও বেশি আসন নিয়ে। ভারতের সাধারণ নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফলে দেখা গেছে ৩৫১টি আসন পেয়ে ভারতের ক্ষমতায় বসছে মোদির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। এর মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছে ২৯৮টি আসন। সরকার গঠন করতে যেখানে প্রয়োজন ২৭২টি আসন। অর্থ্যাৎ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স ( ইউপিএ)পেয়েছে ৯৩ আসন। এর মধ্যে কংগ্রেস একা পেয়েছে ৫৫টি আসন।

বিজেপি তাদের ঘাঁটি বলে পরিচিত গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি নতুন করে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িষ্যা ও উত্তরাঞ্চলেও শক্ত ভিত তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া কর্ণাটকেও ব্যাপকভাবে জয়লাভ করেছে বিজেপি। এতদিন যেখানে এইচ ডি কুমারাস্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে জয়লাভ করে এসেছে কংগ্রেস।

এই জয়ের সঙ্গেই ইতিহাসে ঢুকে পড়লেন মোদি। দেশের ইতিহাসে মোদিই হতে চলেছেন তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পর পর দু’বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী হলেন। অর্থাৎ কোনও জোট বা শরিক দলের সাহায্য ছাড়াই সরকার গঠনের জন্য ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে গেল কোনও দল। এর আগে জওহরলাল নেহরু পর পর তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন কংগ্রেসের হয়ে। ১৯৬৭ এবং ১৯৭২ সালে পর পর দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা গাঁন্ধী। এই দু’বারও একাই ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস।

বৃহস্পতিবার ভোট গণনায় দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী কংগ্রেস পরিবারের প্রতিনিধি অভিজাত রাহুল গান্ধীর পরিবর্তে ‘চৌকিদার’ মোদিতেই ভরসা খুঁজেছেন ভারতের প্রায় ৯০ কোটি ভোটার। প্রাথমিক ফল দেখে উচ্ছ্বসিত মোদি বলেছেন, আবারও জিতল ভারত। বললেন, আমরা বেড়ে উঠেছি একসঙ্গে, সমৃদ্ধি এনেছি একসঙ্গে, এক সঙ্গে থেকেই আমরা শক্তিশালী ভারত গড়ব, যা হবে সবার জন্য। ভারত আবারও জিতে গেল।

হার মেনে নিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও। বললেন জনতার রায় শিরোধার্য, মোদি ও বিজেপিকে অভিনন্দন। কংগ্রেসের একনিষ্ঠ যে কর্মীরা ভোটের সময় দলের জন্য প্রাণ দিয়ে কাজ করেছেন, তাদের শুভেচ্ছা জানাই। আম জনতা স্পষ্ট মতামত জানিয়েছে, সেই রায়কে স্বাগত।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ভোট গণনার শুরু থেকেই মোদি ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিলো। গণনা যত এগোচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে বিজেপির বিরাট উত্থানের ইতিহাস। ইতিহাস-ই তো, নইলে গত লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে দলটি মাত্র দুটি আসন পেয়েছিলো। আর এবার মমতার দল তৃণমূলের সঙ্গে সমানে সমান টক্কর দিচ্ছে মোদির দল বিজেপি।

প্রাপ্ত শেষ খবরে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে ২২ আসনে পেয়েছে মমতার তৃণমূল। আর বিজেপি পেয়েছে ১৯ আসন। আর এ রাজ্যে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বাম দল কোনো আসনও পায়নি। অর্থাৎ পুরোপুরি বাম শূণ্য হতে চলেছে এ রাজ্যটি।

অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে বিরোধীদের কাছে কার্যত তুরুপের তাস ছিল উত্তরপ্রদেশ। কারণ, আসন সংখ্যার নিরিখে ভারতের সবচেয়ে বড় এই রাজ্যে দীর্ঘ দিন বাদে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি বহুজন সমাজ পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টি এক হয়ে ভোটে লড়েছিল। সঙ্গে ছিল অজিত সিংহের আরএলডি-ও। কিন্তু তাতেও ফল আশানুরূপ হয়নি। থামানো যায়নি গেরুয়া ঝড়। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির ৭১টি পেয়েছিল। এবারও তদারা পেয়েছে ৫০টি আসন।

বিরোধী মহাজোটের নেতৃত্ব দেওয়া চন্দ্রবাবু নায়ডু নিজের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশেই কার্যত ধরাশায়ী। ভোটের ফলের প্রবণতায় রাজ্যের ২৫ আসনের মধ্যে ২০টিরও বেশি আসনে পাচ্ছে জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস। প্রতিবেশী রাজ্য তেলঙ্গানাতেও ভাল ফল করেছে বিজেপি।

কয়েক মাস আগেই মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগড়ের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। বিরোধী শিবিরের আশা ছিল, এই তিন রাজ্যে বিজেপির ফল ব্যাপক খারাপ হবে। কিন্তু তিন রাজ্যে কার্যত ২০১৪ সালের ফলের চেয়ে খুব একটা হেরফের হয়নি।

তা হলে বিজেপি তথা এনডিএর এই বিরাট সাফল্যের সমীকরণ কী? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কারণ একাধিক। প্রথমত, অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করলে গোবলয়ে বিজেপির ভোটবাক্সে ব্যাপক ধসের ইঙ্গিত থাকলেও, তা হয়নি। দ্বিতীয়ত, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে নিজেদের আসন ধরে রেখেছে বিজেপি এবং তাদের সহযোগী দলগুলি। গোবলয়ে যে সামান্য সংখ্যক আসন কমেছে, সেই ক্ষতি মেরামত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহারের মতো রাজ্যে। দাক্ষিণাত্যে বিজেপি কখনই শক্তিশালী ছিল না। তবু, কর্নাটক, তেলঙ্গানায় ভাল করতে চলেছে এনডিএ জোট। এই সব কিছুর যোগফলেই মুখ থুবড়ে পড়েছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত