মুরসির মৃত্যুতে জাতিসংঘের উদ্বেগ, নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি
আদালতে শুনানি চলাকালে মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মুরসির আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশন (ওএইচসিএইচআর)। এ ঘটনায় নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
ওএইচসিএইচআর-এর মুখপাত্র রুপার্ট কলভিল্লে মঙ্গলবার বলেছেন, আটকাবস্থায় যে কোনো মৃত্যুরই দ্রুত, নিরপেক্ষ, পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। মৃত্যুর আসল কারণ উদঘাটনের জন্য এই তদন্ত একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, ছয় বছর ধরে মুরসিকে কি পরিবেশে আটক রাখা হয়েছিল তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে তাকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা না দেয়া, আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে না দেয়া এবং তাকে দীর্ঘদিন ধরে কনডেম সেলে রাখার বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত হতে হবে।
গত সোমবার মিশরের একটি আদালতে ‘বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য গুপ্তচরবৃত্তি’র দায়ে বিচারের শুনানি চলাকালে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন মুরসি এবং তাৎক্ষণিকভাবে মারা যান। তার মৃত্যুর পর মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থকদের প্রতিবাদের আশঙ্কায় মিশরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে।
মারা যাওয়ার একদিন পর মঙ্গলবার কায়রোর পূর্বাঞ্চলীয় মাদিনাত নসরে মুরসিকে দাফন করা হয়।
প্রসঙ্গত, মিশরের ইসলামপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষস্থানীয় নেতা মোহাম্মাদ মুরসি ২০১১ সালে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক হোসনি মুবারক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সে দেশটির প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মিশরের প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট। কিন্তু ২০১৩ সালের জুলাই মাসে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আস-সিসি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত ও বন্দি করেন। তারপর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কারাবন্দী ছিলেন মুরসি। তিনি আর কারাগারের বাইরে পা রাখতে পারেননি।
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারি জেনারেল সিসি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত এক প্রদর্শনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ‘বৈধ’ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন থেকে পাশ্চাত্যের সহযোগিতায় তিনি সরকার বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন করে আসছেন।
কাতার-ভিত্তিক আল-জাজিরা নিউজ নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসি গত ৭ মে সর্বশেষ শুনানির দিন কারাগারে তার অপর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, চিকিৎসার অভাবে তার জীবন বিপদাপন্ন।
সূত্র: পার্স টুডে এমএ/
