ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

আকাশসীমা খুলে দিয়েছে পাকিস্তান

আকাশসীমা খুলে দিয়েছে পাকিস্তান

পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতের অসামরিক বিমান চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সে দেশের সরকার। ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বালাকোট অভিযানের জের ধরে নিজেদের আকাশসীমায় ভারতীয় বিমান চলাচলের ওপর এই আংশিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো ইসলামাবাদ।

পাকিস্তানের অসামরিক বিমান পরিবহণ কর্তৃপক্ষ জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাদের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে লাভবান হবে এয়ার ইন্ডিয়া। পাক আকাশসীমা বন্ধ থাকায় সংস্থার বহু আন্তর্জাতিক বিমান ঘুরপথে যাতায়াত করছিল। যার ফলে এয়ার ইন্ডিয়ার প্রায় ৪৯১ কোটি টাকার বিপুল আর্থিক ক্ষতির বোঝা বইতে হয়েছে।

পাকিস্তানের অসামরিক বিমান পরিবহণ কর্তৃপক্ষের তরফে এক কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘মঙ্গলবার বেলা ১২টা ৪১ মিনিট থেকে ভারতের সমস্ত এয়ারলাইন্সই পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে। শীঘ্রই ভারতের বিমান সংস্থাগুলিও পাক আকাশে তার স্বাভাবিক যাত্রাপথে বিমান পরিচালনা করতে পারবে।’

এখন প্রশ্ন উঠেছে,হঠাৎ করেই কেন ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা খুলে দিলো পকিস্তান। কেননা কিছুদিন আগেও পাকিস্তান জানিয়েছিল, ভারত যতক্ষণ না তাদের পশ্চিম সীমান্তের ফরওয়ার্ড পোস্টগুলি থেকে ট্যাঙ্কার সরাবে ততদিন আকাশসীমা খোলা হবে না। তাহলে রাতারাতি সিদ্ধান্ত বদল কেন?‌

এর কারণ হিসেবে ভারতীয় এক সংবাদ মাধ্যম বলছে, আকাশসীমা বন্ধ থাকায় গত কয়েক মাসে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে ভারতের বিমানগুলি। সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে ইউরোপগামী বিমানগুলি। পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় আরব সাগর হয়ে সৌদি দেশগুলির ওপর দিয়ে যেতে হচ্ছিল বিমানগুলিকে। ফলে একদিকে উড়ানের সময় লাগছিল প্রচুর, অন্যদিকে জ্বালানি খরচও বেড়ে গিয়েছিল। এই খবর ছড়িয়ে পড়েছিল বিদেশের মাটিতে। তাতে আরও অস্বস্তি বাড়ছিল ইমরান খানের সরকারের ওপর। সেই ভাবমূর্তি ঠিক করতেই এই পদক্ষেপ করল তারা।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীর রাজ্যের পুলওয়ামায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জবাবে পাল্টা অভিযান চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী। কেননা ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তানের মদদেই ওই হামলা চালিয়েছিলো জঙ্গি গোষ্ঠী জইস-ই-মোহাম্মদ।

ওই হামলার জবাবে গত ২৬ ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের বালাকোটে ঢুকে জইশ-ই-মোহম্মদের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় জঙ্গি বিমান। তার পরেই হঠাৎ করে যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি শুরু হয়ে যায় দুই দেশের মধ্যে। আকাশপথে যুদ্ধ হতে পারে, এই আশঙ্কায় ভারত তাদের উত্তরের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। পালটা ব্যবস্থা হিসেবে নিজেদের সব আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান। ভারতীয় বিমানের জন্য সে দেশের ১১টি রুটের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের মাত্র ২টি রুট খোলা রাখে পাক সরকার।

কিন্তু বন্ধ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও, পাকিস্তান আকাশসীমা বন্ধই রাখে। অবশেষে সুর নরম করল পাকিস্তান। ‌‌ফলে এ দিনের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে সুবিধা হবে দেশের বিমান সংস্থাগুলির।

পাক আকাশপথে বিমান নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয় এয়ার ইন্ডিয়া-সহ ভারতের একাধিক বিমান সংস্থা। অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরি গত ৩ জুলাই রাজ্যসভায় এসব ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান জানান। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২ জুলাই পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়ার ক্ষতির পরিমাণ ৪৯১ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। অন্য দিকে, স্পাইসজেট, ইন্ডিগো এবং গোএয়ারের মতো বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলি ক্ষতির পরিমাণ ছিলো যথাক্রমে ৩০ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা, ২৫ কোটি ১ লক্ষ টাকা এবং ২ কোটি ১ লক্ষ টাকা।

সূত্র: আনন্দবাজার

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত