বাড়ির খাটে ঘুমাচ্ছে বাঘিনী!
বন্যা থেকে বাঁচাতে একটি বাঘিনী জঙ্গল থেকে একটি গৃহস্থ বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এরপর খাটে শুয়ে আরামসে ঘুম দেয়। যদিও ওই নারী বাঘটি কাউকে হামলা করেনি। সে কেবল খাটে উঠে সারাদিন ধরে বিশ্রাম নেয়।
এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের আসাম রাজ্যে। সেখানকার কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক থেকে পশুটি চলে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে সাম্প্রতিক ব্যাপক বন্যায় ৯২টি প্রাণি মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরে খবর পেয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংগঠনের কর্মকর্তারা ওই বাড়িতে যান এবং বাঘটি যেন নিরাপদে বেরিয়ে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করেন। পরে বাঘটিকে জঙ্গলের দিকেই ঠেলে দেয়া হয়।
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুসারে, ওই বাঘিনীকে প্রথম দেখা যায় বৃহস্পতিবার সকালে একটি মহাসড়কের কাছে। ওই জায়গাটি ছিল জাতীয় উদ্যান থেকে ২০০ মিটার দূরত্বে। ব্যস্ত সড়কের যানবাহনের শব্দে সে বিরক্ত বোধ করিয়েছিল। শেষে মহাসড়কের কাছে এক গেরস্থ বাড়ির ভেতর ঢুকে আশ্রয় নেয়।
রথিন, বর্মণ যিনি এই বাঘ উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি বলেন ওই বাঘিনী একটি দোকানের পাশের ওই বাড়িটিতে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঢোকে এবং দিনের বেলা পুরোটা সময় ঘুমিয়ে কাটায়। কেননা সে ছিল ভীষণ ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। তাই গোটা দিন সে ঘুমিয়ে কাটায়।
এখন প্রশ্ন হতে পারে জলজ্যান্ত একটি বাঘকে দেখে ওই বাড়ির লোকজনের কি অবস্থা হয়েছিলো?
বাড়ির মালিকের নাম মতিলাল। তিনিই নিকটবর্তী দোকানটির মালিক। বাঘটিকে তার বাড়ির ভেতর ঢুকতে দেখেই পরিবারের লোকজনকে নিয়ে তিনি ভয়ে পালিয়েছেন। সারাদিন তারা বাঘিনীটিকে একটুও বিরক্ত করেনি। ফলে পশুটি আরামসে গোটা দিন ঘুমিয়ে কাটায়। এই অঞ্চলের মানুষদের মাঝে বন্যপ্রাণীর প্রতি ব্যাপক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে এ ঘটনাটিই তার প্রমাণ।
বাড়ির মালিক মতিলাল বলেছেন, বাঘটি যে বিছানায় শুয়েছিল সেই বিছানার চাদর ও বালিশ তিনি যত্ন সহকারে তুলে রাখবেন।
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার কর্মকর্তাদের পরে খবর দেয়া হয় এবং তারা এসে ক্লান্ত বাঘিনীর নিরাপদ বেরোনোর পথ খোঁজার উদ্যোগ নেন।
এক ঘণ্টার জন্য মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয় এবং বাঘটিকে জাগিয়ে তোলার জন্য আতশবাজি ফাটানো হয়। বাঘটি স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়িটি থেকে বেরিয়ে আসে। এরপর সে মহাসড়ক অতিক্রম করে জঙ্গলের দিকে রওনা হয়।
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা রথিন বর্মণ বলেন, মেয়ে বাঘটি আসলেই জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে গেছে নাকি সে আশেপাশের এলাকায় হাটাহাটি করেছে-সেটা নিশ্চিত নয়।
ইউনেস্কোর হিসেবে, কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে ১১০টি বাঘের বসবাস, কিন্তু তাদের একটিও বন্যায় মারা যায়নি। এই পার্কের নিহত প্রাণিদের মধ্যে ৫৪টি হরিণ, সাতটি গণ্ডার, ছয়টি বুনো শূকর এবং একটি হাতী রয়েছে।
ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার ফলে আসাম ও বিহার রাজ্যে ব্যাপকভাবে তাণ্ডবে শতাধিক মানুষের মৃত্যুসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং বাস্তু-চ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
সূত্র: বিবিসি
এমএ/