ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

‘কাশ্মীরকে আরেকটা ফিলিস্তিন বানাতে চায় ভারত’

‘কাশ্মীরকে আরেকটা ফিলিস্তিন বানাতে চায় ভারত’
কাশ্মীর জুড়ে চলছে বিক্ষোভ

ভারতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে সেই ধারা অনুযায়ী কাশ্মীর এতদিন একটা স্বায়্ত্ত শাসিত এলাকার বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু এই ধারা বাতিলের পর উদ্বিগ্ন কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ।

৩৭০ নম্বর ধারাটি বাতিল করার ফলে কাশ্মীরীদের প্রতিক্রিয়া কী? কীভাবে এটা তাদের পরিচিতি এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে প্রভাবিত করবে? বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যেসব কাশ্মীরী রয়েছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জানার চেষ্টা করেছিলেন বিবিসি প্রতিনিধি। একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বললেও কারো কাছ থেকেই এ বিষয়ে কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এ ঘোষণার পর কাশ্মীরের লোকজন নিজেদের ‘কয়েদি’বলেই মনে করছেন।

‘কাশ্মীরিরা ভারতকে আর বিশ্বাস করে না।’

৩৫ বছর বয়সী ইজাজ মুম্বাইতে থাকেন। গত দুই বছর ধরে তিনি ভারতের এই শহরটিতে থাকেন কিন্তু তার জন্মস্থান শ্রীনগরে।

ইজাজ বলেন, ভারতের এই ঘোষণার পর কাশ্মীরের প্রভাবশালী পরিবারগুলোও এখন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভাষায় কথা বলছেন। কেননা কাশ্মীরের মানুষ ৩৭০ ধারা বাতিলের ভারতীয় সিদ্ধান্তকে মানতে পারছে না। ফলে কাশ্মীরীরা ভারতকে আর বিশ্বাস করে না। তাদের মনে হচ্ছে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। কারণ এই ধারার ফলে তাদের জন্য একটা আস্থার পরিবেশ ছিল।

তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর যে ভারতের সঙ্গে গিয়েছিল তার জন্য বিশেষ কিছু শর্ত ছিল যার ভিত্তি ছিল এই ৩৭০ ধারাটি। এখন বিশেষ মর্যাদা বাতিল হয়ে গেলে, ভারতের সঙ্গে থাকার ব্যাপারে আমাদের আস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এর প্রতিক্রিয়ায় যে ধরনের বিক্ষোভ হবে তা সবার জন্য ক্ষতিকর হবে।’

দুটি বড় রাজনৈতিক পরিবার (আবদুল্লাহ এবং মুফতি) ছিলেন ভারতের প্রতিনিধি। তারা ভারতের এজেন্ডা কাশ্মীরে তুলে ধরার কাজ করেছেন। এখন তাদের সাথে যে ধরনের আচরণ করা হচ্ছে সেটাও তাদের চিন্তাধারা বদলে দিচ্ছে। আজ তারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মত একই ভাষায় কথা বলছেন। এটার মানে যেসব লোক জম্মু এবং কাশ্মীরে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করতেন তারাও এখন সাধারণ মানুষের সামনে দাঁড়াতে পারছেন না।

ইজাজ আরো মনে করেন, ৩৭০ ধারা বাতিল কাশ্মীরীদেরকে কোনভাবেই লাভবান করবে না। আর উপত্যকার মানুষ যে ভারতের এই একতরফা ঘোষণাকে সমর্থন করবে না সেটাও মোদি ভালো করেই জানে। আর এ কারণেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য তারা অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন, কারফিউ জারি, ইন্টারনেট বন্ধ এবং সব ধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ফলে এখানকার কাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়াটা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু যখন কারফিউ তুলে নেয়া হবে, তখন দেখবেন এর প্রতিক্রিয়া কেমন হয়। সেটা হবে একটা রক্তাক্ত প্রতিক্রিয়া।

ইজাজ সাফ বলেন, ‘আমি মনে করি না এই পদক্ষেপ কাশ্মীরের অর্থনীতিকে উন্নত করবে। অর্থনীতির উন্নতি হয় শান্তির সাথে। ৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে কোন শান্তি আসবে বলে আমি মনে করি না। আমার বিশ্বাস দীর্ঘ সময়ের জন্য কাশ্মীরে শান্তি ফিরে আসবে না। আপনি যে কোন অর্থনীতিবিদের সাথে কথা বলুন তারা আপনাকে বলবে শান্তির উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু আপনার রাজ্যে যদি অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে তাহলে আপনি কীভাবে আশা করেন আপনার এখানে অনেক বিনিয়োগ আসবে।’

তিনি মনে করেন এ নিয়ে ভারত সরকার তাদের সঙ্গে মিথ্যাচার করছে। ইতিমধ্যে মোদি সরকার ও তাদের আজ্ঞাবাহী সংবাদ মাধ্যমগুলো বলতে শুরু করেছে, এই ধারা বিলোপের ফলে কাশ্মীরের পর্যটন, শিক্ষা এবং ব্যবসায় প্রচুর উন্নতি হবে। রাতারাতি ধনী হয়ে যাবে এই উপত্যকার লোকজন।

কিন্তু ইজাজ বলেন, ‘৩৭০ ধারা বাতিলের বিবৃতিতে অর্থনৈতিক উন্নতির যে কথা বলা হয়েছে সেটা একটা উপহাস মাত্র। কেননা এরপর পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে বিশেষ করে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে।’

‘আমি সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করবো’

শেহলা রাশিদ একজন পিএইচডির স্টুডেন্ট। দিল্লিতে তিনি জহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি পড়েন এবং একজন মানবাধিকার কর্মী। শেহলার মতে এটা কাশ্মীরীদের মানসিকভাবে প্রভাবিত করবে। যেভাবে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাতে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল কাশ্মীরীদের মনে আঘাত লেগেছে। এটা আত্মপরিচয়ের সংকট তৈরি করবে। কারণ জম্মু এবং কাশ্মীর একটা রাজ্যের ভিতর ছিল।

তিনি বলেন, ‘তিনটি অঞ্চল জম্মু, কাশ্মীর এবং লাদাখের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম পালন করে। আমরা বড় হয়েছি এই সংস্কৃতিতে, এখন এই পদক্ষেপ নেয়াতে তারা রাজ্যকে বিভক্ত করলো। এটা শুধু মাত্র দ্বিজাতি তত্ত্বকে উসকে দেবে না এটা এখানকার মানুষের জন্য বড় ধরনের সাংস্কৃতিক আঘাত ‘

তার ধারণা, এই পদক্ষেপ কাশ্মীর ইস্যুকে আরো জটিল করবে। কেউ জানে না কাশ্মীরে কি হচ্ছে। যেহেতু তাদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছে। এটার অর্থ হচ্ছে কাশ্মীরিদের ওপর ভারত সরকারের কোনো আস্থা নেই। তাদের যদি বিন্দুমাত্র আস্থা থাকতো তাহলে তারা জম্মু এবং কাশ্মীরে নির্বাচন দিত। তারা এই ইস্যুকে বিধানসভায় নিয়ে আসতে পারতো , তারপর তারা নিজেরাই দেখতে পারত যে সভা এটা পাশ করে, নাকি করে না।

কিন্তু চোরে মত তারা এই ধারাটি বাতিল করেছে। উপত্যকায় বিপুল পরিমাণ সৈন্য মোতায়েন করে, সব রকম যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন মোদি সরকার এটাই পরিষ্কার করে দিয়েছে যে তারা যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত।

শেহলা বলেন, ‘যেভাবে সিদ্ধান্তটা নেয়া হয়েছে সেটা ভুল। আমি এটা সর্বোচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করবো। এবং আমি আশা করছি সুপ্রিম কোর্ট আমাদের প্রতি ন্যায় বিচার করবেন।’

‘তারা কাশ্মীরে হিন্দু অপসংস্কৃতি নিয়ে আসবে আর আমাদেরটা ধ্বংস করবে’

রাহিল (আসল নাম নয়) পুলওয়ামার বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে ব্যাঙ্গালোরে পড়ালেখা করছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি সত্যি খুব উদ্বিগ্ন কারণ আমার মা অসুস্থ আর আমার আশেপাশের এলাকায় সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। আমি আমার মায়ের কোন খোঁজ নিতে পারছি না। আমরা চাকরি পেতাম কারণ আমাদের একটা বিশেষ কোটা ছিল। আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে বাঁচাতাম।’

তার ভাষায়, ‘এই ধারার ফলে আমাদের রাজ্যে পুলিশ ছিল কাশ্মীরী আর সরকারের বিভিন্ন দফতরের লোক ছিল আমাদের নিজেদের রাজ্যের। কিন্তু ৩৭০ ধারা বাতিলের পর ভারতের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য থেকে লোক আসবে এবং এখানে কাজ করবে। তারা পুলিশে এবং অন্যান্য বিভাগে কাজ পাবে। তারা তাদের ভাষায় কথা বলবে যেটা আমাদের স্থানীয় ভাষার চেয়ে ভিন্ন। কাশ্মীর এমনিতেই বর্বরতার শিকার, তারপরেও অন্তত তারা পুলিশের কাছে গিয়ে নিজের ভাষায় কথা বলতে পারতো। এখন স্থানীয় মানুষ কীভাবে তাদের সমস্যাগুলো সেইসব মানুষের কাছে বলবে যারা আমাদের ভাষাটাই বুঝতে পারে না।

রাহিল আরো বলেন, ‘বেশিরভাগ কাশ্মীরী জনগণ মুসলমান। আর এটাই ভারতের সরকারের মাথা ব্যথার কারণ। ভারতের একমাত্র মুসলিম প্রধান রাজ্যটিকে হত্যা করতে চায় হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার। তাদের এই পরিকল্পনার কারণে নিজেদের রাজ্যেই মুসলমানরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে, আমরা হব দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। আর এভাবেই মোদি সরকার আমাদের শেষ করে দিতে চায়।’

‘বর্তমানে কাশ্মীরের কলেজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র কাশ্মীরের শিক্ষার্থীরা পড়ে। কিন্তু এখন বাইরে থেকে আসা মানুষ তাদের সন্তানদের এখানে নিয়ে আসবে পড়ার জন্য। এই শিশুরা তাদের সংস্কৃতি নিয়ে আসবে আর আমাদের সংস্কৃতি নষ্ট করবে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল অন্য রাজ্যের লোক এখানে আসতে পারবে এবং বসতি শুরু করবে। তাদের জনসংখ্যা এখানে বাড়বে।

এখন ভারতীয় শিল্পপতিরা কাশ্মীরকে কিনে নেবে। তারা সরকারের সাথে চুক্তি করবে , আমাদের জঙ্গল , আমাদের সম্পদ কিনবে এবং সব কিছু শেষ করে দেবে।’ বলছিলেন রাহিল।

তিনি আরো বলেন, ‘এই সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে আমাদের ক্ষতস্থানে লবণের ছিটা দেয়ার মত। সাধারণ কাশ্মীরীরা মনে করছে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার শেষ হয়ে গেছে।’

‘আমরা মোদির উন্নয়ন চাই না’

মুজামিল একজন কাশ্মীরী। তিনি কাজ করেন দুবাইয়ে। তার বিয়ে করার কথা ছিল চলতি মাসের ১৮ তারিখে। কিন্তু পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে মনে হচ্ছে বিয়েটা নির্দিষ্ট তারিখে আর হচ্ছে না। এখন তার মনে হচ্ছে তিনি নিজেই কাশ্মীরে যেতে পারবেন না, আর বিয়ে তো দূরের কথা।

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভারতে আমাদের যে একটা বিশেষ মর্যাদা ছিল সেটা আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ভারতের সাথে যে সম্পর্কের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে আমরা ভারতের সাথে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা ভেঙ্গে গেছে। এখন মনে হচ্ছে এটা একটা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ছিলো।এটা কোনভাবেই আমাদের সাহায্য করবে না। ভারত এখন কাশ্মীরের সংস্কার বলতে যা বুঝাচ্ছে তা হচ্ছে, সেখানে বড় বড় কোম্পানির অর্থ বিনিয়োগ। কিন্তু আমরা কোনো বিনিয়োগ চাই না। উন্নয়ন কাশ্মীরের জন্য ইস্যু না। আমরা ভারতের অন্য রাজ্যগুলোর চেয়ে ভালো আছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘কাশ্মীরিদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির প্রলোভন দেখানো হয়েছে। আমি মনে করি না বাস্তবে এটার কোন ভালো প্রভাব ফেলবে। বরং এটার আরো খারাপ প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতির উপর। প্রথম প্রভাব হল কেউ জানে না কাশ্মীরের এই অস্থির অবস্থা কতদিন থাকবে- ছয় মাস, এক বছর, নাকি দুই বছর। স্থানীয় স্কুল, ব্যবসা, সরকারি চাকরি কবে থেকে আবারো চালু হবে। আমাদের বড় শিল্প হল পর্যটন। আমরা সবচেয়ে ভালো মানের জাফরান, হাতে তৈরি কার্পেট এবং রপ্তানি করার মত ফল উৎপাদন করি। যদি পরিস্থিতি ভালো না হয় তাহলে এখানে কে আসবে? এই পরিস্থিতির সুযোগ নেবে ভারতের ব্যবসায়ীরা। তারা আমাদের কথা ভাববে না। তারা স্বার্থপরের মত তাদের প্রয়োজন মেটাবে আর এই অবস্থার পূর্ণ সুবিধা ভোগ করবে।’

‘কাশ্মীরকে আরেকটা ফিলিস্তিন বানাতে চায় ভারত’

হাজিক শ্রীনগরের বাসিন্দা, বর্তমানে দিল্লিতে থাকেন। সরকার সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করার ফলে গত কয়েকদিন ধরে তিনি তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত প্রত্যেকটা কাশ্মীরীর মতের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। একজন কাশ্মীরী হিসেবে আমি মনে করি আমার অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। তারা সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছে কারণ তারা জানত কাশ্মীরীরা এটা মেনে নেবে না। এই ধরণের নিষ্ঠুরতা দিন দিন বাড়ছে। কাশ্মীরীরা সবসময় মেনে এসেছে যে কাশ্মীর একটা বিতর্কিত ইস্যু। আমরা কখনো ভারতের অংশ ছিলাম না। আমাদের নিজেদের আইন ছিল যেটা আমাদের অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে। আমাদের ভারতের অংশ করা হয়েছিল কিছু নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে। সেটা তারা এখন শেষ করে দিয়েছে। গত কয়েকদিনে অমরনাথ যাত্রী ও পর্যটকদের এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় আমাদের অর্থনীতির প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ওরা যদি আমাদের ভাল চাইত, তাহলে বছরের যে সময়ে এখানে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে, সেসময় এরকম ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করত না।’

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘ভবিষ্যতে সহিংসতা আরও বাড়বে, কেউ কাশ্মীরে আসবে না। সেটা কি আমাদের অর্থনীতির জন্য ভাল হবে? ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সাথে যা করছে, ভারতের সরকারও কাশ্মীরের সাথে সেটাই করতে চায়। তারা একই প্যাটার্ন অনুসরণ করছে। কাশ্মীরে আরেকটা ফিলিস্তিন বানাতে চায় ভারত।’

প্রসঙ্গত, গত সোমবার হঠাৎ করেই সংসদে সংবিধানের ৩৭০ ধারাটি বাতিলের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে পাস হয় বিলটি। একই দিনে তাতে স্বাক্ষর করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’এখন আইনত বাতিল হবার পথে।

মোদি সরকার ‘চোরের মতো’এই ধারাটি বাতিল করার আগে গত রোববার রাতে গোটা কাশ্মীর জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করে। গোটা উপত্যকা জুড়ে মোতায়েন করা হয় ৭ লাখের বেশি সেনা। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় স্কুল-কলেজ। গণহারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের, বাদ যাচ্ছে না সাধারণ মানুষও। বুধবার একদিনেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫ শতাধিক কাশ্মীরিকে। ফলে আস্ত একখানা কারাগারে পরিণত হয়েছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর।

এতদিন ধরে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারার জেরে বিশেষ মর্যাদা পেত রাজ্যটি। ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে শীর্ষ ক্ষমতা ছিল রাজ্য সরকার ও বিধানসভার হাতে। কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের কোনো স্থান ছিল না।

এই ৩৭০ অনুচ্ছেদের সুবাদে কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারাই শুধুমাত্র সেখানে বৈধভাবে জমি কিনতে পারতেন, সরকারি চাকরি করার সুযোগ পেতেন এবং সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। এমনকি সেখানকার নারীরা কোনো অ-কাশ্মীরি পুরুষকে বিয়ে করলে তারা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন। এতটাই কঠোর প্রয়োগ ছিল এ ধারাটির।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত