ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

শারীরিক আকর্ষণ বোধ করেন না যে নারীরা

শারীরিক আকর্ষণ বোধ করেন না যে নারীরা

চীনে এমন বহু মানুষ আছে যারা কোনো যৌন আকর্ষণ অনুভব করেন না। তাই প্রেম বা ভালোবাসার মায়াজালে জড়ানোর সৌভাগ্যও তাদের হয়নি কখনও। এদেরই একজন ডায়ানে শি। তিনি কখনও যৌন আকর্ষণ অনুভব করেন না এবং বিষয়টি নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথাও নেই। বরং তিনি কারো সাথে তার যৌন সম্পর্ক করাকে একটা ফালতু আর সময় নষ্ট করার মত বিষয় হিসাবেই দেখে থাকেন।

এ নিয়ে তার সাফ কথা, ‘আমি কোনো যৌন আকর্ষণ অনুভব করিনা। আর এতে আমার কিছু যায় আসে না। কারণ যৌন আকাঙ্খা থেকে মুক্ত থাকাটা আমার জন্য ভালোই হয়েছে। আমি মনে করি যৌনতা একটি অর্থহীন বিষয়।’

চীনে শি-র মতো এরকম নিষ্কাম ব্যক্তির সংখ্যা ঠিক কত তার কোনো সুষ্পষ্ট পরিসংখ্যান নেই।তবে চীনা গবেষকরা মনে করেন, দেশটিতে প্রায় ১৮ লাখ নিষ্কাম ব্যক্তি আছেন। আর চীনের এসব নিষ্কাম ব্যক্তিরা এখন ইন্টারনেট-ভিত্তিক নানা ফোরামে বেশ সক্রিয়। এগুলোর মধ্যে কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপ আছে যেগুলো বেশ জনপ্রিয়। তারা নিজেদের মধ্যে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে, নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে এবং নিজেদের ভাষাও তৈরি করেছে।

নিষ্কাম আসলে কি?

নিষ্কাম কিন্তু বিয়ে কিংবা যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকার মতো নয় বিষয় নয়। এখানে প্রসঙ্গক্রমে ডায়ানের কথাই ধরি। তিনি পড়াশুনা করেছেন হংকং, ব্রিটেন এবং নেদারল্যান্ডসে । নেদারল্যান্ডসে পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ডাচ পুরুষের সাথে তার পরিচয় হয়েছিল। ওই ব্যক্তির প্রথম ডেটিংয়ে গিয়েই ডায়ানে নিজেকে নিষ্কাম হিসেবে আবিষ্কার করেন। দুজনের মধ্যে রোমান্টিক আবহ তৈরি হবার পরও ডায়ানে ওই লোকটির প্রতি কোনো যৌন আকর্ষণ বোধ করছিলেন না। এর কারণটা কিন্তু তিনি তখন বুঝতে পারেননি।

তখন তিনি নিজের সম্পর্কে জানার জন্য বিষয়গুলো নিয়ে অনলাইনের দ্বারস্থ হয়। এক পর্যায়ে তিনি একটি নেটওয়ার্ক খুঁজে পান, যেটি বিশ্বে নিষ্কাম ব্যক্তিদের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম। নিষ্কাম সম্পর্কে পড়াশুনার পর ডায়ানে বুঝতে পারেন, তিনি নিজেও ঐ দলেরই মানুষ।

ডায়ানে বলেন, ‘আমার চারপাশের প্রতিটি মেয়ে প্রেম নিয়ে রীতিমতো পাগল ছিল। তারা ছেলেদের নিয়ে কথা বলতো। কিন্তু এগুলোর প্রতি আমার কোন আকর্ষণ ছিলো নাা।

কিন্তু একজন চীনা নারী হিসেব নিজেকে বাবা-মায়ের সামনে নিষ্কাম ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ করাটা তার জন্য খুব সহজ ছিল না। চীনে কোনো বাবা-মা যদি বুঝতে পারে যে তাদের সন্তান বিয়ে করতে চায়না কিংবা তাদের সন্তান থাকবে না, তখন তারা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। শুধু মা-বাবাই নয়, সরকারি পর্যায় থেকেও বিয়ে এবং সন্তান নেবার জন্য অনেক চাপ থেকে। কারণ দেশের জনসংখ্যা ক্রমশঃ হ্রাস পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন চীন।

তাই নিজের বাবা-মাকে বোঝাতে ডায়ানের খুব বেগ পেতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তার মা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। তিনি মেয়ের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, ডায়ানেকে তিনি কখনও এমন একটি অবস্থায় ঠেলে দিবেন না যেখানে তিনি অসুখী হবো। কিন্তু তার একরোখা বাবা বিষয়টি এখনও মেনে নেননি। অনেকের মতো তিনিও মনে করেন, পছন্দের মানুষটির সঙ্গে দেখা হলেই যৌনাকাঙ্ক্ষা অনুভব করবেন ডায়ানে।

আধুনিক সময়ে চীনা নারীদের মধ্যে যৌনতা এবং সম্পর্কের বিষয়গুলো নিয়ে অনেক নতুন ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেখানে কেবল ডায়ানে নয়, বিয়ে বা যৌন সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবছেন এমন নারীর সংখ্যা বহু। তারা বিয়ের মূল্যবোধ এবং সন্তান জন্মদানের বিষয়গুলো নিয়েও পুনরায় ভাবছে।

ডায়ানে বিয়ের মধ্যে ভালো কিছু খুঁজে পান না। তার ভাষায়, ‘বিয়ে একটা বিশাল ফাঁদ।’ তিনি মনে করেন, ‘যদি বিয়ে এবং যৌন সম্পর্ক ছাড়া সন্তান জন্ম দেয়া যেত, তাহলে মানুষ আরো অনেকে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করতো।’

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত