ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘পুলিশ-সেনাদের দয়াতেই কাজ করেন কাশ্মীরের সাংবাদিকরা’

‘পুলিশ-সেনাদের দয়াতেই কাজ করেন কাশ্মীরের সাংবাদিকরা’

জম্মু-কাশ্মীরের ওপর থেকে বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পর থেকে উপত্যকা জুড়ে চলছে অঘোষিত কারফিউ। কাগজে কলমে কারফিউ তুলে নেয়া কথা বলা হলেও গোটা রাজ্য এখনও পুলিশ আর ভারতীয় সেনাদের দখলে। কাশ্মীরের লোকজনের ওপর সেনা নির্যাতন আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর উঠে আসছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সামরিক বাহিনীর হাতে নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন কাশ্মীরের সাংবাদিকরাও।

গত ৭ সেপ্টেম্বর শ্রীনগরে পুলিশের পিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছেন জম্মুর এক পত্রিকার ফটোসাংবাদিক শাহিদ খান। তার ডান কাঁধের হাড় ভেঙে গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই সাংবাদিক দুঃখ করে বলেন, ‘খবর আনতে গিয়ে নিজেই খবর হয়ে যাব, ভাবিনি।’

শ্রীনগরের রায়নাওয়াড়ি এলাকায় মহরমের মিছিল কভার করতে গিয়েছিলেন শাহিদসহ পাঁচ ফটো সাংবাদিক। মিছিলের ফটো তোলার অপরাধে পুলিশ এসে তাদের বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। শাহিদ জানান, পুলিশ মারতে মারতে তাদের বলছিল, ‘ফটো আর ভিডিয়ো তুলে কেন আমাদের ঝামেলা বাড়াচ্ছ?’

গোটা কাশ্মীর জুড়ে যে কি ধরনের অরাজকতা চলছে তা বোঝানোর জন্য এই একটি খবরই যথেষ্ট। সেখানকার লোকজনের অসন্তোষের খবর যেন বাইরে আসতে না পারে সেজন্য খবর সংগ্রহে বাধা দেয়া হচ্ছে সাংবাদিকদের। উপত্যকার অধিকাংশ এলাকাতেই নেই টেলিফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ। ফলে সরকারি মিডিয়া সেন্টারই তাদের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা। সেই মিডিয়া সেন্টারে একটা ইন্টারনেট কানেকশনে চলছে মাত্র ১০টা কম্পিউটার।

আর তথ্য জানার জন্য সরকারি কোনও কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ তো দূরের কথা, ফোনেও কথা বলার উপায় নেই। তার ওপর রাস্তায় খবর সংগ্রহ করতে গেলেই জুটছে সেনা আর পুলিশের পিটুনি। তাদের প্রহারের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না প্রবীণ সাংবাদিকরাও। কাশ্মীরের প্রবীণ সাংবাদিক নাসির এ গনাই জানান, সাংবাদিকদের চাপ দিয়ে খবরের ‘সোর্স’জানতে চায় প্রশাসন।

গত ৫ সেপ্টেম্বর রায়নাওয়াড়িতে‘কার্ফু পাস’থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকদের আটক করে তাদের ক্যামেরা ভাঙার হুমকি দেয় পুলিশ। এ অভিযোগ করেছেন এক আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলে কর্মরত মহিলা সাংবাদিক শাহানা বাট।

সাংবাদিকেদর ওপর এসব জুলুমের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে জম্মু-কাশ্মীরের স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে কাশ্মীরের ‘ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’নামের সংগঠনটি। কিন্তু এসব বিবৃতিতে যে কোনো কাজ হয়নি তা বলাই বাহুল্য।

শুধু সাংবাদিককে মারধর বা শাসানি নয়, নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন তাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত ৮ অক্টোবর শ্রীনগরের জহাঙ্গির চক উড়ালপুলের কাছে পুলিশি নিগৃহের শিকার হন কাশ্মীরের নারী সাংবাদিক রিফাত মহিদিন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীনগরের আর এক সাংবাদিক জানান, গত দেড় মাসের মধ্যে পুলিশি বাধার মুখে তাকে কমপক্ষে পাঁচ বার রাস্তা বদলে গন্তব্যে যেতে হয়েছে খবর সংগ্রহের জন্য।

এইসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রবীণ সাংবাদিক শাহনওয়াজ খান বলেন, ‘কাশ্মীরে এসব কোনো নতুন ঘটনা নয়। পুলিশ আর সেনাদের দয়া ভিক্ষা করেই তো কাশ্মীরে কাজ করতে হয় সাংবাদিকদের। কারফিউ আর নিষেধাজ্ঞার সাংবাদিকদের ওপর তাদের নির্যাতনের মাত্রাটা কেবল বেড়ে যায়। তারা তো বেছে বেছে সাংবাদিকদেরই নিশানা করে।’

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত