ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

জাতিসংঘে মোদিকে একহাত নিলেন ইমরান

জাতিসংঘে মোদিকে একহাত নিলেন ইমরান

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে এক হাত নিলেন পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এসময় তিনি গুজরাট দাঙ্গায় মোদির জড়িত থাকার প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, তাকে দিয়ে গুজরাটের মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা করিয়েছিল কট্টরপন্থী আরএসএস। এসময় কাশ্মীর ইস্যুতে জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতাদের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইমরান।

শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে মোদিকে উদ্দেশ্য করে ইমরান খান বলেন,‘মিস্টার মোদি আরএসএসের আজীবন সদস্য, যে আরএসএস হিটলার-মুসোলিনির আদর্শে তৈরি। এরা জাত্যভিমানের উপাসক। আরএসএস ভারত থেকে মুসলিমদের মুছে ফেলার ‘জাতি-শোধন’তত্ত্বে বিশ্বাস করে। আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা গোলওয়ালকর এবং সাভারকরকে দেখুন, গুগলে সার্চ করলেই পাবেন। এই ঘৃণার মতবাদই গান্ধীকে হত্যা করেছিল। এই আদর্শই ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাকে দিয়ে গুজরাটের মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা করিয়েছিল। হিটলারের ‘ব্রাউনশার্ট’ বাহিনী দ্বারা অনুপ্রাণিত আরএসএসের গুন্ডাদের তিন দিন ধরে খোলা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। প্রাক্তন কংগ্রেসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আরএসএস ক্যাম্পে জঙ্গি তৈরি হয়। এই ‘জঙ্গিরাই’ ২০০০ জনকে কেটে ফেলেছিল। ঘরছাড়া হয়েছিলেন দেড় লক্ষ মুসলিম।’

এরপর বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি কোনও হুমকি দিচ্ছি না, কিন্তু আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকেও ভাবতে হবে, তারা ১৩০ কোটি মানুষের ভারতীয় বাজারকে তোষণ করবে, না নিরপরাধ নির্যাতিত মানুষের ন্যায়ের জন্য লড়বে? তা না-হলে ভালো আশা আপনারা করতেই পারেন, কিন্তু খারাপের জন্যও তৈরি থাকুন।’

পাক প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘প্রথাগত যুদ্ধ শুরু হলে যা-কিছু হতে পারে। যখন দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশ পরস্পরের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়, তখন ফলাফল সীমান্তেই আটকে থাকে না। এখন এটা জাতিসংঘের কাছে পরীক্ষা, তারা কী চাইছে।’

এসময় তিনি সাফ জানিয়ে দেন পাকিস্তান কোনো যুদ্ধ চায় না। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানে ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। তাই আমরা আর যুদ্ধ চাই না।

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে দীর্ঘদিন ধরে কারফিউ বলবৎ থাকার কথা উল্লেখ করে ইমরান বলেন, ‘কারফিউ উঠে গেলেই সেখানে রক্তস্নান হবে। আরও একটা পুলওয়ামা হবে। ভারত তখন পাকিস্তানকে দায়ী করে ফের বোমা ফেলতে আসবে।’

এই প্রসঙ্গে হলিউডের ছবি ‘ডেথ উইশ’-এর কথা বলেছেন ইমরান। বলেছেন, ‘মনে করে নিচ্ছি, আমি কাশ্মীরের জেলে রয়েছি। শুনছি ভারতীয় সেনা ধর্ষণ করছে। আমি কি সেটা মানতে পারতাম? আমি বন্দুক তুলে নিতাম। ভারত সরকার কাশ্মীরিদের সে দিকেই নিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে।’

ইমরান বলেন, ক্রিকেটের সূত্রে ভারতে তার অনেক বন্ধু। ক্ষমতায় এসে তিনি প্রথমেই মোদির সঙ্গে কথা বলেছিলেন। দায় ঠেলাঠেলি ভুলে সামনে এগোতে চেয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও ভারতের উগ্র জাতীয়তাবাদী শাসক দল পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায়নি। পুলওয়ামার বিস্ফোরণের পরে পাকিস্তানের দিকে আঙুল ওঠায় তারা প্রমাণ চেয়েছিলেন। উল্টে ভারত পাঠিয়েছিল যুদ্ধবিমান। এর আগে বালাকোট অভিযানের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর একাংশ।

বালাকোট হামলা প্রসঙ্গে ইমনরান বলেন, ‘দশটা গাছ ছাড়া কিছুরই ক্ষতি হয়নি ভারতের হামলায়। ভারতের এক পাইলট ধরা পড়েছিলেন। আমরা তাকে মুক্তি দিয়েছি। অথচ এটাকে শান্তি প্রক্রিয়া না-ভেবে ১৫০ জন জঙ্গি মারা গিয়েছে বলে ভোটে মিথ্যা প্রচার চালিয়েছিলেন মোদি।’

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নির্ধারিত ১৫ মিনিট পার করে কমপক্ষে আধ ঘণ্টা বেশি বলেছেন। তার এই আবেগপূর্ণ বক্তৃতাকে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তানের জনগণ।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত