ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

কাশ্মীরে আপেল যখন বিক্ষোভের হাতিয়ার

কাশ্মীরে আপেল যখন বিক্ষোভের হাতিয়ার

গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে মোদি সরকার। এরপর থেকে কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে কাশ্মীরের লোকজন। মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিজেদের মতামত প্রকাশ কিংবা বিক্ষোভ জানানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা সেখানে যে কোনো ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাজধানী শ্রীনগরসহ গোটা রাজ্যজুড়ে অবস্থান নিয়েছে লাখ লাখ ভারতীয় সেনা ও পুলিশ। কোনো বিক্ষোভের আঁচ পেলেই যাকে তাকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী।

এই রাজ্যের বাইরে খবর পাঠানোরও কোনো ব্যবস্থা নেই। কেননা সেখানে বন্ধ রয়েছে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ। এ অবস্থায় বিক্ষোভ প্রকাশের অভিনব উপায় খুঁজে নিয়েছে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জনতা। তারা আপেলের গায়ে নানা মতামত লিখে সেগুলো পর্যটকদের কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

শুক্রবার ভারতীয় এক সংবাদ মাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।

বিক্রেতারা কাশ্মীরের বিভিন্ন জেলার আপেল চাষি ও আপেলের পাইকারি ব‌্যবসায়ীদের কাছ থেকে আপেল কেনেন। সেই আপেল তারা জম্মু, পাঞ্জাব, দিল্লি, হরিয়ানায় কেজি দরে বিক্রি করেন । সেই আপেলগুলি সবচেয়ে বেশি কেনেন কাশ্মীরে ভ্রমণ করতে যাওয়া দেশি বিদেশি পর্যটকরা। সেইসব পর্যটকদের কাছে রাজ্যের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে অপেলকেই হাতিয়ার করেছে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জনতা।

পত্রিকাটি জানায়, গত তিন-চার দিন ধরে দেখা যাচ্ছে, আপেলের বাক্স বা পেটি খুললেই সেখানে থাকা আপেলগুলোর গায়ে নীল বা কালো রংয়ের কালিতে লেখা রয়েছে স্বাধীনতার পক্ষে নানা শ্লোগান। যেমন, ‘আজাদি চাই’,‘আমি বুরহান ওয়ানিকে ভালবাসি’, ‘জাকির মুসা কাম ব্যাক’,‘হিন্দুস্থান মুর্দাবাদ’,‘ভারতীয় সেনা নিপাত যাও’ ইত্যাদি।

তবে পত্রিকাটি বলছে, জম্মু ও সমতলের হিন্দু, শিখ ব‌্যবসায়ীরা এই সব আপেল কিনতে অস্বীকার করছেন। কোন পেটিতে বা কোন বাক্সে এসব লেখা আছে তা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। হঠাৎ করেই কোনো একটি বাক্সের আপেলগুলোতে মিললো এরকম শ্লোগান। কোথাও কালি দিয়ে লেখা আছে। আবার কোথাও বা স্টিকার হিসাবে সেলোটেপ দিয়ে এঁটে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিপদে পড়েছেন আপেলের পাইকারি বিক্রেতারা। মুসলিম বিক্রেতারাও বুঝতে পারছেন না কী করবেন। ফলে দাম দিয়ে কেনা আপেল বিক্রি হচ্ছে না।

কাঠুয়া, অমৃতসর, পাঠানকোট, জম্মুর ফল বিক্রেতারা বলেছেন, আপেলের গায়ে এসব লেখা বন্ধে সরকার কোনও ব্যবস্থা না নিলে তারা কাশ্মীরি আপেল বয়কট করবেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রত্যেক ফলবিক্রেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনের জনপ্রিয় মুখ জাকির মুসা ও বুরহান ওয়ানির মতো নেতারা। ভারতীয় সরকার তাদের জঙ্গি হিসাবে প্রচার করলেও কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের কাছে তারা অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই ভারতীয় সেনারা এই দুই নেতাকেই নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার পরও তাদের জনপ্রিয়তায় একটুও ভাঁটা পড়েনি। কাশ্মীরী জনতার বুক থেকে মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি তাদের নাম। আপেলের গায়ে তাদের নাম লেখার ঘটনাই এর প্রমাণ।

কাশ্মীরি ব‌্যবসায়ীদের একটি অংশ মনে করছে, আপেলের গায়ে এসব বিক্ষোভ বার্তা ঠেকাতে ওই রাজ্যের টেলিফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগ পুরোপুরি স্বাভাবিক করে দিতে হবে। তা না হলে আপেলের গায়ে শ্লোগান লেখার পাশাপাশি আপেলের পেটিতে যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটনায় ঘটানো হতে পারে। সূত্র: সংবাদি প্রতিদিন

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত